নারীরা কখনও সহনশীল কখনও লৌহমানবী : তারানা
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, নারীরা এখন ঝঞ্ঝার মতো উদ্যোমী, কখনও ঝর্ণার মতো চঞ্চল, কখনও ধৈর্যশীল, কখনও নমনীয় আবার কখনও সহনশীল। কিন্তু প্রয়োজনে নারীরা কঠোর, সংগ্রামী ও গতিশীল। প্রয়োজনে মানবতার জন্য দাবানলের মতো জ্বলতে জানে, নারী জানে লৌহমানবী হতে। আমাদের বেঁচে থাকার পথ নারীরাই নিষ্কণ্ঠক করে চলেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর-১৪ এলাকায় অবস্থিত পুলিশ স্টাফ কলেজে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে কর্মক্ষেত্রে নারী পুলিশের অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ উইমেন অ্যাওয়ার্ড ২০১৭ প্রদান অনু্ষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তারানা হালিম বলেন, পহেলা বৈশাখে পুলিশ সদস্যরা নিজেরা অস্ত্র হাতে নিরাপত্তা দিয়েছে। শরীরের ঘাম পায়ে ফেলে তারা নিজেদের উদযাপন, আনন্দ বিসর্জন দিয়ে রাজধানীসহ পুরো দেশে নিরাপত্তা দিয়েছে। নিরাপদ রেখে চলেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা শুধু পুলিশের সমালোচনা করব তা নয়। আমরা শুধু তাদের খারাপ কিছুর সমালোচনা করব না। তাদের ভালো কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করি, কৃতজ্ঞতার জায়গা থেকে।
তারানা হালিম বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে জঙ্গিবাদের বীজ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছিল তা আটকে রাখা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঠিক সে সময় পুলিশ, র্যাবসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গিবাদকে প্রতিরোধ করেছে। পুলিশ গোড়ায় আঘাত করেছে। একে একে ধরে গোড়া কেটে দিয়েছে। এ জন্য যোগ্য প্রশসংসার দাবিদার বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ।
তিনি বলেন, যখন গ্রামে কোনো মেয়ে ইভটিজিংয়ের শিকার হয় তখন তার পাশে একজন পুরুষ কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে যায়, ভাই কিংবা পুরুষ বন্ধু দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে একথাটিই বলতে হচ্ছে আজ নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে পুরুষও সহযোগী। আগের মতো আর বলার সুযোগ নেই পুরুষরা নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছে। বুদ্ধি দিয়েছে। এখন মালালার মতো এক নারীই বিশ্বে রোল মডেল হয়েছে। আমাদের প্রীতিলতা যে উদ্যোম ও সাহসিকতা দেখিয়ে গেছে তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে নারীদের মধ্যে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার, নারীবাদী ও নারীবান্ধব সরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীর প্রতি সহিংসা ও বৈষম্য বন্ধে ১৯৭৪ সালে ১৪ জন নারীর অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে এ যাত্রার সূচনা করেছিলেন। বর্তমান সরকার নারীকে প্রতিষ্ঠা করতে, কর্মক্ষেত্রে নারীকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে, নারীদের সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টার, ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার গড়ে তুলছে। নারীবান্ধব সরকার না হলে নারীবান্ধব এতকিছু সম্ভব না। আমরা সমানতালে সহকর্মীর মতো এগিয়ে যেতে চাই।
প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার ও থানাগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো হোক। যাতে করে নারী কর্মকর্তা কাজ মানবিকতার সঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসা বন্ধে কাজ করবে। নারীদের বিষয়গুলো অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখার সুযোগ ঘটবে।
তারানা হালিম বলেন, নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। তাদের হাত আমাদের হাতে, আমাদের হাত তাদের হাতে রেখে এগিয়ে যাব।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিপিডব্লিউএন সভাপতি ডিআইজি মিলি বিশ্বাস। আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে নারী পুলিশের অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাত ক্যাটাগরিতে ২টি প্রতিষ্ঠান এবং ২১ জন নারী পুলিশ সদস্যকে এ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। এছাড়াও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
জেইউ/বিএ