‘বেশি ভাড়া দেব, হয়রানি চাই না’
‘শার্ট-প্যান্ট ইন করে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বাসে ঝুলে যেতে কার ভালো লাগে? জানি, পরিবহন মালিকরা যানবাহনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আমাদের ভোগান্তিতে ফেলছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের সময়মতো অফিস যেতে হবে। না গেলে বেতন কাটা যাবে। লোকাল সার্ভিসেও তারা সিটিংয়ের ভাড়া নিচ্ছে। তাই আমি ৫-৬ টাকা বেশি দিয়ে গন্তব্যে যেতে রাজি, তাও হয়রানি চাই না।’
বুধবার সকালে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই সিটিং সার্ভিস পুনরায় চালু করার বিষয়ে মত দিলেন মোবাসসের খান শান্ত নামে স্যুট-টাই পরিহিত অফিসগামী শান্ত নামে এক যাত্রী।
আমিনা মুন্নি নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আমরা যারা সিটিং সার্ভিস বাসে উঠতাম, তারা জেনে-বুঝেই এই বাসটাতে উঠতাম। সামনে দিয়ে লোকাল বাস অনেক সময় খালি চলে যেত, তবুও ওয়েট করতাম সিটিং সার্ভিসের জন্য। উত্তরা থেকে বনানী ১০ টাকার বাস ১৫ টাকা দিয়ে আসতাম। বাসগুলো সিট খালি থাকলে প্যাসেঞ্জারের জন্য বিভিন্ন স্টপেজে দাঁড়িয়ে থাকতো। এতে কিছু সময় হয়তো নষ্ট হতো বটে কিন্তু এয়ারপোর্ট বা বনানী পার হওয়ার পর টান দিয়ে চলে আসতো যে ওই কালক্ষেপণটুকুর কথা মনেই থাকতো না! আর এখনতো আম-ছালা দুটোই গেল, দাঁড়িয়েও যেতে হচ্ছে, সিটিং ভাড়াও দিতে হচ্ছে। আর মেয়েদের কথা নাইবা বললাম।’
সিটিং সার্ভিস বলবৎ রাখার বিষয়ে রাইয়াদ রাদ নামে এক যাত্রী বলেন, ‘এটা সত্যি যে ২৭ নম্বর ভিআইপি বাসের মত দুই একটা সিটিং সার্ভিস ছাড়া বাকি সব সিটিং সার্ভিসে বেশ অসুবিধা। কিন্তু সেটা লোকাল করে দিলেই সমাধান হয়ে যাবে না। ভাঙাচোরা লোকাল বাস ধরে সিটিং বানিয়ে দিচ্ছে যেগুলো, সেগুলোকে লোকাল বানানো হোক আবার। আর লোকাল বাসের সংখ্যা বাড়ানো হোক। সরকার চেষ্টা করুক আরও লোকাল বাস নামানোর। সিটিং সার্ভিস বলেও কিছু থাকুক। সিটিং সার্ভিস আরও ভালো করা হোক।’
সাধারণ মানুষের হয়রানির জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে রাদ বলেন, ‘বাসের টাকা বাঁচিয়ে বিএমডব্লিউ হয়তো একদিন কিনতে পারবেন। কিন্তু দয়া করে যেসব নারী, বৃদ্ধ মানুষেরা সিটিং সার্ভিসে একটু শান্তিতে যাতায়াত করেন তাদের কষ্ট দেবেন না।’
এদিকে, কথিত সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বাস মালিকদের চক্রান্তের শিকার হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মো. সাফা রহমান নামে এক সরকারি কর্মকর্তা।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মালিকদের সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত মূলত বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়ার কৌশল। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে গত চার দিন যত্রতত্র (লোকাল) বাস থামিয়ে গাদাগাদি করে যাত্রী তুলে সিটিং সার্ভিসেরই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কিছুদিন পর হইচই থেমে গেলে ভাড়া বাড়িয়ে কিছু পরিবহন কোম্পানি পুনরায় সিটিং সার্ভিসে চলা শুরু করবে। অতীতে ভাড়া বৃদ্ধির জন্য লোকাল বাস-মিনিবাসকে সিটিংয়ে পরিণত করা হয়েছে। এবার সিটিংকে লোকাল করে সব বাসেরই ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। বিআরটিএ মালিকদেরই ফাঁদে পা দিয়েছে।’
এর আগে গত ৪ এপ্রিল গণপরিবহনের ‘নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা’ ঠেকাতে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ এপ্রিল থেকে আংশিকভাবে বন্ধ হয় কথিত সিটিং সার্ভিস। তবে লোকাল সার্ভিসেও ভাড়া নেয়া হচ্ছে সিটিং সার্ভিসের মতোই।
সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিতে বাধ্য করতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসেছে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু আদালতের জরিমানার ভয়ে সড়কে বাস নামাচ্ছে না মালিকরা।
আজ বুধবার চতুর্থ দিনের মতো রাজধানীতে কৃত্রিম পরিবহন সংকট সৃষ্টি করেছেন তারা। আর স্বল্পসংখ্যক বাসে হুড়োহুড়ি করে উঠে এবং গাদাগাদি করে বসে ও দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
এসব কারণে যাত্রীরা আগের মত কথিত সিটিং সার্ভিস ব্যবস্থা পুনরায় চালুর পক্ষে তাদের মত দিচ্ছেন।
সিটিং নাকি লোকাল? কোন ব্যবস্থা চালু হলে মানুষের ভোগান্তি কমবে? আপনারা কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন? এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ ম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জাগো নিউজকে বলেন, বুধবার বিকেলে বিআরটিএর সঙ্গে মিটিং হবে। আমরা চাই বর্তমানে চলমান `লোকাল সার্ভিস` বলবৎ থাকুক। তবে মিটিংয়ে বিআরটিএ যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমরা তা মেনে চলব।’
এআর/এসআর/আরআইপি