মেশিনে চেক করেন, তবুও যেতে দেন
দেখি দেখি ব্যাগের চেইন খুলেন। ব্যাগ দেখান। কেউ ব্যাগ নিয়ে ভেতরে যেতে পারবেন না। পুলিশ সদস্যদের কথায় থমকে দাঁড়িয়ে যান অনেকে। রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা অনেক নারীই পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। ফরিদা ইয়াসমিন নামে এক নারী বলে বসেন, ‘আমার ব্যাগ চেক করে দেখেন। খালি খালি দেখলে হবে না। আপনাদের মেশিন কই? মেশিনে চেক করে দেখেন। তবুও ছাইড়া দেন।’
এভাবেই শুক্রবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে স্থাপন করা চেকপোস্ট দিয়ে ওই নারীকে ব্যাগ নিয়ে কোনোভাবে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।
শুধু ফরিদা ইয়াসমিন নন, সব নারী ও পুরুষকে এই চেকপোস্টে তল্লাশি করা হচ্ছে। যাদের কাছে ব্যাগ নেই শুধু তাদেরকেই ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। আর ব্যাগ নিয়ে যারা এসেছেন তারা পড়ছেন বিপাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রমনার বটমূল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, সোয়াট, ডিবি পুলিশ ও র্যাব সদস্য। বসানো হয়েছে নতুন নতুন চেকপোস্ট, আর্চওয়ে, ওয়াচটাওয়ার। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করেই যেতে হচ্ছে বর্ষবরণকারীদের। শাহবাগ মোড় থেকে কাকরাইল মোড় ও প্রেসক্লাব মোড় পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সকাল ৭টা থেকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কাকরাইল মোড় হয়ে রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে যেতে চারটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। প্রত্যেক চেকপোস্টে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে। আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে রমনা পার্কে। তবে বিপত্তি বাধে কাকরাইল মোড়ের চেকপোস্টেই। সেখানে হ্যান্ডব্যাগ, কাঁধব্যাগ ও ঘারের ব্যাগ নিয়ে কোনোভাবে প্রবেশের সুযোগ রাখেনি পুলিশ।
তবে আগন্তুকরা বলছেন, ‘ব্যাগ তল্লাশির পর পুলিশ চাইলে ছেড়ে দিতেই পারেন। আতঙ্কজনক কিছুই যখন ব্যাগে নেই তবে ছেড়ে দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হতো না।’
ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে না দেয়ায় বন্ধুসহ ফিরে যান ফার্মগেট কলেজের ছাত্রী আসফিয়া। তিনি বলেন, ‘ব্যাগ নিয়ে যেতে না দিলে তো জোর করতে পারি না। নিরাপত্তা ইস্যুতে বিরক্তি তৈরি করলেও কিছু বলার নেই।’
তবে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা বলছেন, উপরের নির্দেশ রয়েছে ব্যাগ নিয়ে কেউ ভেতরে যেতে পারবেন না। অমান্য করতে পারব না। কাকরাইল মোড়ে কথা হয় পুলিশ কর্মকর্তা আওলাদ হোসেনের সঙ্গে।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে ডিএমপি। এছাড়া গত তিনদিন ধরে এ ধরনের সংবাদও পরিবেশিত হয়েছে টিভি, পত্রিকা ও অনলাইনে। ব্যাগ নিয়ে আসা যাবে না। মোটরসাইকেলে আরোহী একজনের বেশি নয়। কিন্তু সকাল থেকে শুরু হয়েছে ব্যাগ নিয়ে বিপত্তি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে ২২টি নিরাপত্তা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এসব পরামর্শের মধ্যে বলা হয়েছে ইনডোর ও সংরক্ষিত স্থানে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে সূর্যাস্তের পরও অনুষ্ঠান করা যাবে। তবে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রবীন্দ্র সরোবর এলাকাসহ যেসব উন্মুক্ত স্থানে বৈশাখী সমাবেশ হবে সেসব এলাকা বিকেল পাঁচটার মধ্যে ত্যাগ করতে হবে।
চারুকলা ইনস্টিটিউটের সদস্যরাসহ কেউই মুখোশ পড়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারবেন না। হ্যান্ডব্যাগ, অস্ত্র, ছুরি, কাঁচি, পটকা, ব্লেড, নেইল কাটার, দিয়াশলাই ও গ্যাস লাইটসহ সন্দেহজনক কিছু বহন করতে পারবেন না। জুমার দিন হওয়ায় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কোনো অনুষ্ঠান না করা এবং বাদ্য না বাজানোর জন্যও নিষেধ করা হয়েছে। মোটরসাইকেলে একজনের বেশি নয়সহ বেশ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
নিরাপত্তার নামে পহেলা বৈশাখকে বন্দী করা হলো কি না, জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ যা যা প্রয়োজন, সেই পদক্ষেপ নিয়েছে।’ এ জন্য সাধারণ মানুষের কিছুটা কষ্ট হলেও নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশকে সহযোগিতা করতে অনুরোধ জানান তিনি।
জেইউ/জেডএ/এমএস