জঙ্গিদের মারা হচ্ছে না, আক্রমণে মরছে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘জঙ্গিদের মারা হচ্ছে না। বরং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করছে তারা। আর আক্রমণের জবাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মারা পড়ছে জঙ্গিরা।’
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশান-২ এর হোটেল লেকশোতে আয়োজিত এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
এলিটফোর্স র্যাব কর্তৃক ‘কতিপয় বিষয়ে জঙ্গিবাদীদের অপব্যাখ্যা এবং পবিত্র কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত ও হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা’ শীর্ষক এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য অধ্যাপক ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী বলেন, ‘ইসলামে জঙ্গিবাদের স্থান নেই। ইসলামের যে বিষয়গুলো নিয়ে জঙ্গিরা মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে সেসব ব্যাপারে পুস্তিকা তৈরি করে প্রচার করতে হবে।’
বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি র্যাব ও পুলিশপ্রধানের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা জঙ্গি ধরছেন, সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলছেন। এটা অত্যন্ত ভাল কাজ।’
পরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সংসদ সদস্য আবেগের বশবর্তী হয়ে ‘জঙ্গি ধরছেন সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলছেন’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ঠিক নয়। আমরা জঙ্গিদের মারি না। তাদের হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন পাল্টা জবাব দেন তখনই জঙ্গিরা মারা পড়ছে। ইদানিং তো তারা নিজেরাই মরছে। সুইসাইড করছে।”
মন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমরা অপেক্ষা করেছি। শত শত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করে পালিয়ে যাবে- এমন যারা ভাবেন তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন।’
‘আজ শুধু ইসলাম কেন, কোনো ধর্মে মানুষ হত্যার বিধান নেই। সেখানে ইসলাম তো শান্তির ধর্ম। যেখানে ইসলাম মানবতার কথা বলে, শান্তির কথা, উন্নয়নের কথা বলে; সেখানে আজ আমাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। আমাদের ভুল পথে ধাবিত করার চেষ্টা করছে গুপ্তঘাতকেরা।’
‘জঙ্গিবাদের পেছনে একটা ষড়যন্ত্র আছে। কখনো হুজি, কখনো বাংলা ভাই, কখনো বা আনসার আল ইসলাম, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, নয়া জেএমবি ইত্যাদি নাম একই। তাদের অপকর্ম একই। তাদের ষড়যন্ত্র একই। তারা ইদানিং নয়া ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা নিজেরা যা করে এর পেছনে নাকি আইএস রয়েছে। আইএস কোত্থেকে আসবে? কেন, কী কারণে আসবে? এর কোনো ব্যাখ্যা আমরা পাইনি। পৃথিবীব্যাপী ষড়যন্ত্র চলছে। আজ শুধু বাংলাদেশ নয় অনেক আগে থেকে এ ধরনের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হচ্ছে বিশ্বকে’ বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত ভাল হৃদয়ের অধিকারী। আবেগপ্রবণ হলেও জঙ্গিবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিবাদকে মোকাবেলা করা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করে যাচ্ছে। আজ তারা মনে করছে অপারেশনের বাইরে আরও কিছু করা দরকার। জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচার-প্রচারণা করা দরকার, ইসলাম কী বলে তা জানানো দরকার। এক্ষেত্রে র্যাবের নতুন প্রকাশনাটি কাজে আসবে’ যোগ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক অধ্যাপক ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বি-মত পোষণ করে বলেন, ‘আমরা জঙ্গিদের হত্যা করি না। তারা হিউজ পরিমাণ এক্সপ্লোসিভ রাখছে। সিলেটে তাদের ঘেরাও করে রাখা হয়। কিন্তু তারা এক্সপ্লোসিভ দিয়ে আত্মহত্যা করে। তারা নাকি জান্নাতে যাবে!’
তিনি বলেন, ‘তাদের হাত-পা খুঁজে খুঁজে মিলিয়ে দেখেছি, আসলে কতজন মারা গেছে। মৌলভীবাজার, সীতাকুণ্ড, সিলেটসহ অন্যান্য জায়গাতে একই অবস্থা দেখা গেছে। পুলিশ কোনো জঙ্গিকে হত্যা করেনি, পুলিশ যখন হামলার জবাব দিয়েছে, তখনই তারা মারা গেছে। পুলিশ কখনও কোনো জঙ্গিকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেনি।’
আইজিপি বলেন, ‘অনেক জঙ্গি আমাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। জঙ্গি রাজীব গান্ধীর অনেক নাম। সে গ্রেফতারের পর বিভিন্ন ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে।’
জেইউ/এমএআর/এমএস