এমপিদের ইচ্ছাকৃতভাবে অসম্মান করেছে টিআইবি : চিফ হুইপ
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জাতীয় সংসদ নিয়ে করা গবেষণা প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেছেন, ‘এর মাধ্যমে দেশের সব এমপিকে (সংসদ সদস্য) ইচ্ছাকৃতভাবে অসম্মান করা হয়েছে।’
এমপিরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সমাজের সম্মানিত প্রতিনিধি। তাই তাদের বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার আগে প্রকারান্তরে জনগণকে অপমানিত করা হচ্ছে কিনা- বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানান তিনি।
সোমবার জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
রোববার টিআইবির গবেষণাপত্র ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’-এ উল্লেখ করা হয়, চলমান জাতীয় সংসদের সপ্তম থেকে ১৩তম অধিবেশনে ১০৩ কার্যদিবসে সংসদের বাইরে থাকা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুই হাজার ১০১ বার এবং সংসদের ভেতরে থাকা প্রতিপক্ষকে ৪৩৩ বার বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি, অশালীন ও আক্রমণাত্মক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ওই সাতটি অধিবেশনে কোরাম (৬০) সংকটে ক্ষতি হয়েছে ৪৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।
চিফ হুইপ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে অভূতপূর্বভাবে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য বিদেশি প্রভুদের অর্থ হালাল করার লক্ষ্যে তুচ্ছ বিষয়াদি নিয়ে টিআইবি অযথা পানি ঘোলা করছে।’
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে তারই সুযোগ্য উত্তরসূরি দেশরত্ন শেখ হাসিনা যখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সর্বোচ্চ সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন; সে মুহূর্তে টিআইবি ‘কান নিয়েছে চিলে’ চিৎকার তুলে জনমনের স্বস্তিকে অস্থিরতায় পর্যবসিত করতে ‘উলুবনে মুক্তা ছড়াচ্ছে’।”
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘কটূক্তি নিয়ে প্রতিবেদনটি সঠিক নয়। এজন্য আমি একজন সংসদ সদস্য হিসেবে সব সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ করছি এবং সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে এ ধরনের প্রতিবেদন পেশ না করার অনুরোধ করছি।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘টিআইবি সবসময়ই এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক ও নেতিবাচক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের হেয়প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে কাজ করে।’
হুইপ বলেন, ‘সংসদে অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার হচ্ছে কি হচ্ছে না- এ বিষয় দেখভাল করার জন্য অভিভাবক হিসেবে রয়েছেন স্পিকার। অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার হলে কার্যপ্রণালি বিধির ৩০৭ বিধি অনুযায়ী তা এক্সপাঞ্জ করেন স্পিকার। এসব কিছুই সংসদীয় রীতি-নীতির অংশ। এছাড়া কোনো সদস্য বিশৃঙ্খল আচরণে লিপ্ত হলে কার্যপ্রণালি বিধি ১৫ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সদস্যকে স্পিকার বহিষ্কার করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘কোরাম সংকট হতেই পারে। এক্ষেত্রে হুইপরা যথাযথভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উপস্থিতির ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা নেই। আর কোরাম সংকটের কারণে অর্থ অপচয়ের যে হিসাব টিআইবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তা কল্পনাপ্রসূত ও মনগড়া। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক, বানোয়াট ও উদ্ভট তথ্য জনসম্মুখে প্রচার করার পূর্বে দ্বিতীয়বার চিন্তা করার জন্য টিআইবিকে অনুরোধ করছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে ৫৯টি আন্তর্জাতিক চুক্তি হলেও সংবিধান মেনে কোনো চুক্তিই সংসদে তোলা হয়নি। বক্তব্যটি সঠিক নয়। আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি দ্বি-পাক্ষিক এবং এক্ষেত্রে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। উপরন্তু চুক্তি সম্পাদনের সামগ্রিক বিষয়টি রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের কাজ। সঙ্গত কারণে চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে কখনই জাতীয় সংসদে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় না। বরং জাতীয় সংসদ হচ্ছে আইনসভা এবং এখানে আইন প্রণয়ণ করাই মূল কাজ।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এবারের চুক্তির পূর্ব পর্যন্ত ৮৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে বিএনপি সরকারের শাসনামলে ১৩টি চুক্তি এবং জাতীয় পার্টির শাসনামলে ছয়টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কখনোই ওইসব চুক্তি সংক্রান্ত বিষয় সংসদে আলোচনা হয়নি। তখন তো টিআইবি প্রশ্ন তোলেনি।’
ফিরোজ বলেন, ‘সংবিধান বিষয়ে সংসদ সদস্যরা ভাল বোঝেন বলেই জনগণ তাদের নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছেন। টিআইবি এ সম্পর্কে কথা বলতে চাইলে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সংসদে আসার আহ্বান জানাই।’
তিনি টিআইবির উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘তারা দশম সংসদ সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এর পূর্বে অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তি কি সংসদে তোলা হয়েছিল? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে সে বিষয়ে আপনারা নীরব কেন? কিংবা সে সময় আপনাদের মতামত কেন পাওয়া যায়নি?’
প্রেস বিফ্রিংয়ে হুইপ শহিদুজ্জামান সরকার ও ইকবালুর রহিম উপস্থিত ছিলেন।
এইচএস/এসআর/এমএআর/এমএস