ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি সংসদে উত্থাপনের দাবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত সকল চুক্তি জাতীয় সংসদে উ্ত্থাপনের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারান্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে কী আছে তা সংসদে উত্থাপিত না হওয়ায় এ নিয়ে উদ্বেগও জানিয়েছে সংস্থাটি।
রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির নিজ কার্যালয়ে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ বিষয়ক সংবাদ সম্মলনে এ দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মলনে চলতি দশম সংসদের সপ্তম থেকে ১৩তম অধিবেশন পর্যন্ত সংসদীয় কার্যাবলীর গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে এর আগেও আমরা কথা বলেছি। সরকারের বিভিন্ন অনলাইনের তথ্য অনুযায়ী এর আগে ৫৯টি চুক্তি হয়েছে। সেগুলো সংসদে উত্থাপন হয়নি, তা নিয়ে আলোচনাও হয়নি। বিষয়টি উদ্বেগের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করছি।’
‘এখন থেকে শুরু করে ভবিষ্যতে ভারত সফরসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসকল চুক্তি হবে সেগুলো নিয়ে সংসদে অবশ্যই আলোচনা হওয়া উচিত’ বলে মত দেন তিনি।
এ বিষয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সুলতানা কামাল বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী সবকিছুর মালিক জনগণ। জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত নয় কিন্তু জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের সঙ্গে কিংবা সংসদে আলোচনা করবেন। সংসদের মাধ্যমে জনগণের কাছে সে তথ্য যাবে এবং যাওয়া উচিত বলেই আমরা মনে করি।’
সাত অধিবেশনে কোরাম সংকটে ক্ষতি ৪৭ কোটি ২০ লাখ টাকা
টিআইবির গবেষণা অনুযায়ী, গত সাত অধিবেশনে (দশম সংসদের সপ্তম থেকে ১৩তম অধিবেশন) কোরাম (৬০) সংকটের কারণে ব্যয়িত মোট সময়ের অর্থমূল্য ৪৭ কোটি ২০ লাখ ৩৩ হাজার ২০৪ টাকা। সাতটি অধিবেশনে প্রতি কার্যদিবসের গড় কোরাম সংকট ২৮ মিনিট। আর মোট কোরাম সংকট ৪৮ ঘণ্টা ২৬ মিনিট। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, সংসদ পরিচালনা করতে প্রতি মিনিটে খরচ হয় এক লাখ ৬২ হাজার ৪৩৪ টাকা।
এ বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কোরাম সংকটের বিষয়ে সংসদ সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ অত্যন্ত জরুরি। তবে সাতটির মধ্যে অষ্টম, নবম ও দশম অধিবেশনের তুলনা করে দেখা গেছে, কোরাম সংকট ক্রমান্বয়ে কমছে। অষ্টম অধিবেশনের ছিল দৈনিক ৩৯ মিনিট, নবমে ৩৩ মিনিট আর দশমে ২৮ মিনিট কোরাম সংকট হয়েছে।
সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে বিরোধী দল
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এ সময় সংসদ নেতার উপস্থিতির হার ছিল ৮৪ শতাংশ। নবম সংসদ এটি ছিল ৭৬ শতাংশ। বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের উপস্থিতির হার ৮৩ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে বিগত বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতির হার ছিল মাত্র ২ শতাংশ।
এ বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদে বিরোধী দলের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দুটি চ্যালেঞ্জ লক্ষ্য করা যায়। যখনই বিরোধী দল সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছে সরকারি দলের পক্ষ থেকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হলো, প্রধান বিরোধী দল হিসেবে তাদের বিতর্কিত দ্বি-মুখী অবস্থান অব্যাহত রয়েছে। যেটি তাদের কার্যকলাপের মধ্যে কিছুটা প্রতিফলিত হচ্ছে। যেটি খুবই স্বাভাবিক।
বিধি অনুযায়ী মাত্র দুই সংসদীয় কমিটির বৈঠক
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী প্রতিটি সংসদীয় কমিটির মাসে একটি করে বৈঠক করার কথা। কিন্তু দুটি কমিটি ছাড়া কোনো কমিটিই এ বিধানের তোয়াক্কা করেনি। গত সাতটি অধিবেশন চলাকালীন ৪৭টি সংসদীয় কমিটি মোট ৩৩৭টি সভা করে। এর মধ্যে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সর্বোচ্চ ২২টি সভা করে। আর হলফনামা অনুযায়ী, ১০ কমিটিতে স্বার্থসংশ্লিষ্ট সদস্য রয়েছেন, যা সংসদের কার্যপ্রণালী বিরোধী।
থেমে নেই কটূক্তি ও অশ্লীল শব্দ
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদের বাইরে থাকা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে দুই হাজার ১০১ বার এবং সংসদের ভেতরে থাকা প্রতিপক্ষকে নিয়ে ৪৩৩ বার কটূক্তি, অশালীন ও আক্রমণাত্মক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এটি সংসদীয় আচরণবিধির ব্যত্যয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ওয়াহিদ আলম, প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটি প্রমুখ।
সংসদ আরও কার্যকর করতে বেশ কয়েকটি সুপারিশও করে টিআইবি।
এইচএস/এমএআর/এমএস