প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ৩৩ চুক্তি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় ভারত সফর বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তারা।
মন্ত্রী জানান, এ চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকের বেশিরভাগই বর্ডার হাট স্থাপন, তথ্য ও সম্প্রচার, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ভূ-তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা, ভারত কর্তৃক প্রদেয় তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি), কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দুই প্রধানমন্ত্রী বিরল-রাধিকারপুর রুটে মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল এবং ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীদ্বয় যৌথভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর হিন্দু সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন। অনুষ্ঠান শেষে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করবে দুই দেশ।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ভারতের অতিথি ভবন হায়দারাবাদ হাউসে। দুদেশের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বসবেন।
ভারত সফরে প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, পানিসম্পদমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়েরসচিবসহ ৪০ জন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি থাকবেন। আগামী ৭ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে সমালোচনার জবাবে মাহমুদ আলী বলেন, নিন্দুকরা যেসব বলছেন তার মধ্যে তেমন কিছু নেই। যা হবে দেখতেই পাবেন। তবে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে সীমান্ত হত্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে অতি সম্প্রতি বৈঠক হয়েছে। সীমান্ত হত্যা শূন্য নামাতে দুই পক্ষই খুব সিরিয়াসলি চেষ্টা করছে। কাজেই এটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই।
তিনি বলেন, বৈঠকে দুই দেশের পারস্পারিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন- দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ তথা কানেকটিভিটি, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, পদ্মা (গঙ্গা) ব্যারেজ নির্মাণ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবসম্পদ রোধ প্রভৃতি অধিকগুরুত্ব পাবে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল অংশ নেবে। আগামী ১০ এপ্রিল দুদেশের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি বিজনেস ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে মাহমুদ আলী বলেন, এই বিজনেস ইভেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশের চিত্র ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরা হবে। তেমনি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে।
জেপি/জেএইচ/পিআর