‘র্যাব ছাড়ার দিনে ভাইয়া পৃথিবী ছেড়ে গেলেন’
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) পোস্টিং হয়েছিল কয়েকমাস আগেই। র্যাবের অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে বিদায়ও নিয়েছিলেন। আজ তার শেষ দিন ছিল র্যাবে। ১ এপ্রিল বিজিবিতে যোগদানের তারিখ ছিল তার। র্যাব থেকে বিদায়ের দিন পৃথিবী থেকেই চিরবিদায় নিলেন র্যাবের গোয়েন্দাপ্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ।
শুক্রবার র্যাব হেড কোয়ার্টার্সে আজাদের আবেগাপ্লুত ছোট ভাই এভাবেই সবাইকে বলছিলেন বড় ভাইয়ের (আজাদ) বিদায়ের কথা। ছোট ভাই ইউসুফ হাসান হিমেল বলেন, সবাইকে বলেছিলেন ৩১ মার্চ র্যাবে তার শেষ দিন। র্যাব ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বিজিবিতে। অথচ আজ ভাইয়া পৃথিবী ছেড়েই চলে গেলেন।
গত শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানার পাশে বোমা বিস্ফোরণে লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ গুরুতর আহত হন। ওই রাতে তাকে হেলিকপ্টারে সিএমএইচে নিয়ে আসা হয়। পরদিন সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে সিঙ্গাপুরে নিয়ে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে বুধবার চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ঢাকায় এনে আবারও সিএমএইচে রাখা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় মারা যান তিনি।
শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লে. কর্নেল আজাদের মরদেহ নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে। ময়নাতদন্ত শেষে নেয়া হয় ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে। সেখানে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দ্বিতীয় জানাজার জন্য বেলা ৩টায় তার মরদেহ উত্তরায় র্যা ব হেড কোয়ার্টার্সে নেয়া হয়।
সেখানে পরিবারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন লে. কর্নেল আজাদের ছোট ভাই ও ছেলে। এসময় র্যাব কর্মকর্তারা তাদের সান্ত্বনা দেন। সবসময় তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
দ্বিতীয় জানাজার ঠিক আগে সবার উদ্দেশ্যে কথা বলেন লে. কর্নেল আজাদের ছোট ভাই হিমেল। বড় ভাইয়ের পক্ষ থেকে যেকোন ধরনের দেনা পাওয়া মিটিয়ে দেয়ার কথা বলেন তিনি। সবার কাছে ভাইয়ের জন্য দোয়া চান।
তিনি বলেন, আমার ভাই রাসেল (ডাকনাম) খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। ভাই বলে বলছি না তিনি গণমানুষের কাছেই ভালো মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল গত বুধবার রাতে। তিনি রাত সোয়া ১২টার দিকে বাসায় ফেরেন। কিন্তু রাত দেড়টার দিকে কাজের কথা বলে ফের বেরিয়ে পড়েন। এরপর আর বাসায় ফেরেননি তিনি।
দ্বিতীয় জানাজা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা যা হারিয়েছি তার ক্ষতি পূরণীয় নয়।
গত বুধবার আজাদের সুস্থতা কামনায় ফেসবুকে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছিলেন র্যা বের ডিজি বেনজীর আহমেদ। পোস্টে তিনি আজাদকে ‘সাহসী বীর’ বলে উল্লেখ করেন।
র্যাবের ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, লে. কর্নেল আজাদ সাহসী, পেশাদার, নিবেদিতপ্রাণ, সদা হাস্যোজ্জ্বল ও বন্ধুবৎসল একজন কর্মকর্তা ছিলেন। শেষ সময় পর্যন্ত তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
লে. কর্নেল আজাদের জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ অক্টোবর। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়ায়।
তিনি ৩৪তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। ৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে আইও, অ্যাডজুটেন্ট এবং কোয়ার্টার মাস্টারসহ নানা দায়িত্ব পালন করেন। সেনা কমান্ডো আজাদ সেনাসদর, ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন এবং ১৯ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সালের ২৬ অক্টোবর র্যাব-১২ এর কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে এই বাহিনীতে আসেন। তিনি র্যা বে ৬ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর আজাদকে ওই বছর শেষেই র্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ে আনা হয়। দুই বছর উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে উইংয়ের পরিচালক হন তিনি।
এআর/জেএইচ/এএইচ/পিআর