ঢাকার চারপাশের নদী দূষণমুক্ত করার দাবি
পৃথিবীতে তিনভাগ জল ও একভাগ স্থল হলেও সারাবিশ্বে চলছে সুপেয় পানির সংকট। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পানির চাহিদা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। শহরগুলোতেই এই চাহিদা বেশী হবে। বাংলাদেশেও পানির চাহিদা মেটাতে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামার কারণে অদূর ভবিষ্যতে পানি সংকট আরো বৃদ্ধি পাবে।
শুক্রবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, স্বপ্নের সিড়িঁ সমাজ কল্যাণ সংস্থা, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এবং এএলআরডি ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের কার্যালয়ে আয়োজিত বিশ্ব পানি দিবসের এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ঢাকার চারপাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোই হচ্ছে ঢাকার লাইফ লাইন। ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় ঢাকার জনপদকে সুজলা-সুফলা এবং সুরক্ষিত নাগরিক সভ্যতা গড়ে ওঠার মূলে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর প্রবাহই প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এসব নদীর সুপেয় স্বচ্ছ পানি কৃষির সেচ, বাণিজ্যিক পরিবহন এবং মৎস্যের উৎস হিসেবে যুগ যুগ ধরে মানুষের চাহিদা পূরণ করে এসেছে। অথচ মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো উপযোগিতাই হারিয়ে ফেলেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নে এসব নদীর পানি স্বাভাবিক গুণাগুণ হারিয়ে ফেলেছে।
বক্তারা আরো বলেন, শহরগুলোতে যেমন মানুষের চাপ বাড়ছে সঙ্গে বাড়ছে সুপেয় পানির চাহিদা। ঢাকায় প্রাকৃতিক পানির উৎস এখন নেই বললেই চলে। যাও কিছু আছে, সেগুলোতে দূষণের মাত্রা এমন স্থানে পৌঁছেছে যে মাছসহ জলজ প্রাণী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর ভয়াবহ দূষণের ফলে বর্জ্য পানির আধারে রুপ নিয়েছে যা নদীর অস্তিত্ব ও পানি নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। দূষণের কারণে চারটি নদীর পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যের কোঠায় চলে গেছে। এর ফলে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর পানি দূষণ একটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর দূষিত পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় পানির প্রয়োজন মেটাতে নির্বিচারে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর ১০ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে।
পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বুড়িগঙ্গা রিভারকিপার ও বাপার যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা, পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন পবার সহ-সম্পাদক মো. সেলিম, স্বপ্নের সিড়িঁ সমাজ কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক উম্মে সালমা, সচেতন নগরবাসী সংগঠনের সভাপতি রোস্তম খান, কামরাঙ্গীরচর জাগরণী ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির, এলআরবি ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুলতানা রিজিয়া, মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেন ও সেতুবন্ধন কামরাঙ্গীচরের লায়লা ফেরদৌসী প্রমুখ।
এমএসএস/এআরএস/পিআর