বর্ষবরণে টিএসসিতে নারীর শ্লীলতাহানি : বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ
পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পাশবিকতার শিকার হয়েছেন অনেক নারী। নিপীড়নকারীদের নিবৃত করতে গিয়ে আহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র। পুলিশের উপস্থিতিতেই অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলের কয়েক গজ দূরেই ঘটেছে এসব ঘটনা। ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার দাবি করেছে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন। বুধবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনগুলো এ দাবি জানায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পহেলা বৈশাখের দিন সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ আসতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি চত্বরই ছিল লোকে-লোকারণ্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ও টিএসসিতে ভিড় ছিল বেশি। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বহিরাগত যুবকরা হামলে পড়ে নারীদের ওপর। বিকাল পর্যন্ত ইভটিজিংয়ের ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও বিকাল গড়াতেই এক শ্রেণীর বখাটে হামলে পড়ে নারীদের ওপর। ঘটনাস্থলের চারদিক পুলিশ পরিবেষ্টিত থাকলেও তখন তাদের কেউ এগিয়ে আসেনি। বরং পুলিশের উপস্থিতিতেই এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটেদের হামলার শিকার হয়ে হাত ভেঙে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি লিটন নন্দীর। এসময় আরও বেশ কয়েকজন ছাত্র বখাটেদের হামলায় আহত হন বলে জানান লিটন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, শুধু টিএসসিতে নয়। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোড, চারুকলা, শহীদ মিনার, কার্জন হল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাহবাগ এলাকায় অন্তত অর্ধশত নারী বিভিন্নভাবে যৌননিপীড়নের শিকার হয়েছেন। অনেকে সম্মানের ভয়ে কোনো প্রতিবাদ না করেই ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েছেন।
যেভাবে শ্লীলতাহানি হয় : প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সকাল থেকেই সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। প্রতিটি চক্রেই ২৫-৩০ জনের মতো সদস্য ছিল। চক্রগুলো ভূভূজেলা বা বাশি বাজিয়ে, কখনও হৈ-হুল্লোড় করে নির্দিষ্ট কাউকে লক্ষ্য করে হাঁটতে শুরু করে। পরে যখন তার পাশ দিয়ে যায় তখন আচমকা টান দিয়ে ভিড়ের মধ্যে নিয়ে এ ধরনের কাজগুলো করে। এর আগে পুলিশের সামনে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও কোনো শাস্তি না হওয়ায় তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে যেভাবে শ্লীলতাহানি : সন্ধ্যা নামতে শুরু করলে যখন সবাই উদ্যান থেকে বের হচ্ছিলেন। তখন প্রতিটি গেটেই ব্যাপক ভিড় লেগে যায়। এসময় সংঘবদ্ধ ওইসব চক্র গেটে অবস্থান নেয়। হঠাৎ করে তারা গেট দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করে একটা হট্টগোল পাকায়। এসময় আশাপাশে থাকা নারীদের শ্লীলতাহানি করে তারা। অনেক সময় সঙ্গে থাকা পুরুষসঙ্গী ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাদেরও হেনস্থার শিকার হতে হয়।
জড়িতদের বিচার দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ : এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজেয় বাংলায় সমাবেশ করে। এছাড়া ঘটনায় জড়িতদের সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।
বুধবার বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংগঠনটি সংবাদ সম্মেলন করে। এসময় সংগঠনের নেতারা নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় থাকার কারণ তদন্ত করে জড়িত পুলিশ সদস্যদের অপসারণ দাবি করেন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম জিলানী শুভ।
উপস্থিত ছিলেন, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক, সহ-সভাপতি মারুফ বিল্লাহ তন্ময়, দফতর সম্পাদক আল আমিন, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন সেনগুপ্ত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তুহিন কান্তি দাশ। হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন ঢাবি শাখার সভাপতি লিটন নন্দী। সংবাদ সম্মেলনে তিনটি দাবি করা হয়। এগুলো হল ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জড়িতদে শনাক্ত করে বিচার, ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যদের বহিষ্কার ও এক সপ্তাহের মধ্যে ঘটনার যৌক্তিক সমাধান করে নারীদের নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ।
শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, পুলিশ তৎপর থাকলেও এ ধরনের বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। তারা অপরাধীদের শনাক্ত করে আটকের চেষ্টা করছেন।
এআরএস/পিআর