ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

মানবপাচার চলছেই

প্রকাশিত: ০৪:০০ পিএম, ০৮ মার্চ ২০১৭

আইন-শৃঙ্খলা  বাহিনীর অভিযান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং থাকার পরও থেমে নেই মানবপাচার। রাজধানীর বিজয়নগর, ফকিরাপুল, নয়া পল্টন, পুরানা পল্টন, আরামবাগ, মতিঝিল এলাকায় ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে ওঠা নামধারী ট্রাভেল ও রিক্রুটিং এজেন্সি এসব মানবপাচারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। বিএমইটির ভুয়া ছাড়পত্র ও জাল ভিসার মাধ্যমে এক শ্রেণির আদম পাচারকারীর দ্বারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাম-গঞ্জ থেকে আসা সাধারণ মানুষ। যাদের অনেকেই না বুঝে সরল বিশ্বাসে ওইসব লোকদের হাতে তুলে দেন সুদে আনা কিংবা ঘরবাড়ি গরু ছাগল বেচা নগদ অর্থ। আর মানব পাচারকারী চক্রগুলো ওই টাকায় ফ্লাট আর দামি গাড়ি ব্যবহার করছেন।

সম্প্রতি র্যা বের অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আর্ন্তজাতিক মানবপাচারকারী চক্রের  এমন ২৪ জন প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরদিকে অবৈধ পথে মালয়েশিয়া পাচারকালে বিমানবন্দর এলাকা থেকে ১০ জনকে এবং অবৈধভাবে লিবিয়া গিয়ে পরে ফেরত আসা ২৭ জন  প্রতারিতকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ জাল ভিসা, দেশি বিদেশি পাসপোর্ট এবং জাল ভিসা ও পাসপোর্ট তৈরির সরঞ্জামাদিসহ উদ্ধার করা হয় নগদ ৬ লাখ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুনাম ও চাহিদার কারণে বিপুল পরিমাণ জনশক্তি রফতানির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে মানবপাচারকারীরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে চলা কয়েকটি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে প্রতিদিন শতশত আদম পাচার করছে অসাধু চক্র। এ ধরনের পাচারের শিকার সাধারণ জনগণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বনে জঙ্গলে কিংবা কোথাও কোথাও জিম্মি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদের অনেকেই নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে। এ চক্রটি প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অনেক নারীদের বিদেশে পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশের অনেক নিরীহ লোকজন এই প্রতারক চক্রের প্রতারণায় জায়গা জমি বিক্রি করে সর্বশান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে অবস্থিত এ ধরনের গর্হিত অপরাধের সঙ্গে যুক্ত মানব পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা ও তাদের মূল উৎপাটনের লক্ষ্যে র্যা ব সর্বদা সক্রিয় ভুমিকা পালন করে আসছে। র্যা ব এ পর্যন্ত মানবপাচার রোধে ১৫৫ টি অভিযান পরিচালনা করে মানবপাচারকারী চক্রের ৪৭২ জন সদস্যকে গ্রেফতার এবং ৭২৯ জন ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ১ মার্চ রাতে মালিন্দো এয়ারলাইন্সের ওডি-১৬১ ফ্লাইটে  বাংলাদেশের ১০ জন অভিবাসী প্রত্যাশীকে স্বল্পকালীন ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে প্রথমে ইন্দোনেশিয়া ও পরবর্তীতে ট্রলারের মাধ্যমে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে পাচার করার পরিকল্পনা করে।  সত্যতা যাচাই ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য র্যা ব-৩ তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ওইদিন র্যা ব অভিযান চালিয়ে ঢাকার বিমান বন্দর এলাকার আশেপাশে অভিযান পরিচালনা করে মালয়েশিয়া পাচারকালে ১০ জন শ্রমিককে উদ্ধার করে।

উদ্ধারকৃত ভিকটিমদের তথ্য মতে, মালয়েশিয়া ফেরত শফিকুল ইসলাম ওরফে গুরু এবং মালয়েশিয়া প্রবাসী আবুল বাসার (বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত) আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের মূল হোতা। তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় স্বল্প আয়ের মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে আর্ন্তজাতিক মানবপাচারকারী চক্রের যোগসাজশে বিদেশে প্রেরণের নামে মানবপাচার করছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য র্যা ব-৩ গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ৭ মার্চ র্যা ব মতিঝিল থেকে শফিকুল ইসলাম ওরফে গুরু, তানজিম এবং মিরপুর ডিওএইচএস হতে আবুল বাশারকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা জানায়, এ চক্রের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রতারনার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে মানবপাচার করে আসছে। তারা স্বল্পকালীন ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর উদ্দেশ্যে ইন্দোনেশিয়ার বিমান টিকিট ক্রয় করে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ-নবায়রা মহাসচিব রুহুল আমীন স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, এ ধরনের কাজে যারা জড়িত তাদের ছাড় দেয়া উচিৎ নয়। মূলধারার জনশক্তি রফতানিকারকদের সঙ্গে এদের কোন সম্পর্ক নেই। তিনি এদের আইন প্রযোগকারী সংস্থার হাতে তুলে দেয়ার পরামর্শ দেন।

জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশির জন্য অন এরাইভাল ভিসা পদ্ধতি চালু থাকার কারণে তারা সহজে ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশ করে। পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় অভিবাসন প্রত্যাশীদের বাসযোগে নর্থসুমাত্রা প্রদেশের রাজধানী মেদান নিয়ে যাওয়ার জন্য আরেকটি চক্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর অভিবাসন প্রত্যাশীদের মেদান থেকে সমুদ্র পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর প্রদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য আরেকটি চক্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরা সাধারণত বাংলাদেশের টাঙ্গাইল,পাবনা, মাগুরা, নওগা, যশোর এবং ঢাকার আশেপাশের লোকাল এজেন্টদের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

আরএম/ওআর/জেআইএম