যে কারণে নিষিদ্ধ হল আনসার-আল-ইসলাম
বাংলাদেশে উগ্রপন্থি ইসলামী সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামের’ সব ধরনের কর্মকাণ্ড সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে; সাম্প্রতিক কয়েকটি গুপ্তহত্যার ঘটনায় দায়ী করা হচ্ছে এই জঙ্গি সংগঠনটিকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তার বিভাগ রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিষেধাজ্ঞার কথা জানায়।
সেখানে বলা হয়, “আনসার আল ইসলাম নামের জঙ্গি দল/সংগঠন ঘোষিত কার্যক্রম দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা পরিপন্থি।... সংগঠনটির কার্যক্রম জন নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হওয়ায় বাংলাদেশে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল।”
গত ৪ বছরে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন ব্লগার-অক্টিভিস্ট ও ধর্মীয় নেতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এসব হত্যাকাণ্ডের এর পরপরই এর দায় স্বীকার করছে আনসার-আল-ইসলাম। নিজেদের আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের শাখা (একিউআইএস) দাবি করা সংগঠনটি সাংবাদিকসহ বেশকয়েকজন পরিচিত মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। পুলিশের দাবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করার পর তারা আনসার-আল-ইসলামের নামে বিভিন্নজনকে হত্যা করেছে।
ফেসবুক, টুইটার ও সাইট ইন্টেলিজেন্সে খিলগাঁওয়ে ব্লগার নিলাদ্রী নিলয়, মিরপুরে রাজীব হায়দার, ঢাবির টিএসসিতে অভিজিত রায়, হাতিরঝিলে ওয়াশিকুর রহমান বাবু, সিলেটে অনন্ত বিজয় দাস, সুত্রাপুরের নাজিমুদ্দিন, জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, জুলহাজ মান্নান ও মাহাবুব তনয়কে হত্যার দায় স্বীকার করে তারা। পুলিশের তদন্তেও বার বার উঠে আসে সংগঠনটির নাম। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ৮ পেশার মানুষকে হত্যার ‘টার্গেট’ করে টুইটার-ফেসবুকে পোস্ট দেয় আনসার-আল-ইসলাম। সংগঠনটি নিষিদ্ধ করতে ২০১৬ সালের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় পুলিশ। রোববার তাদের নিষিদ্ধ করা হয়।
গত বছরের শেষ দিকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দেয়ার প্রক্রিয়া সহজ হবে। একই সঙ্গে এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের মনোবল দুর্বল হয়ে যাবে। এছাড়া তাদের নতুন করে সদস্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া আটকানো যাবে। এদের অর্থনৈতিক সাহায্য সহযোগিতা কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর তালিকা
আনসার-আল-ইসলামসহ এ পর্যন্ত সাতটি সংগঠনকে জঙ্গি কার্যক্রমের অভিযোগে নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্য ছয়টি সংগঠন হল- জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম।
এর মধ্যে জেএমবিসহ চারটি সংগঠন নিষিদ্ধ হয় ২০০৫ সালে। উগ্রপন্থা প্রচারের জন্য ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ করা হয় হিযবুত তাহরীরকে। ২০১৫ সালের মে মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ হয়।
এআর/জেএইচ/জেআইএম