ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

অর্থমন্ত্রীর সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:৩৯ এএম, ০৪ মার্চ ২০১৭

দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে ক্ষুদ্র ঋণে- এমন দাবি করে নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শনিবার মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ক্ষুদ্র ঋণ নয় বরং সরকারের পদক্ষেপের ফলেই দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) এক অনুষ্ঠানে দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের প্রশংসা করেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। তিনি ওই সময় বলেন, ‘একসময় এদেশে ৭০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। সেখান থেকে এখন ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। গ্রামীণ ব্যাংক এ ভূমিকাটি সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছে।’

অর্থমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখলাম মাননীয় অর্থমন্ত্রী ক্ষুদ্র ঋণের প্রশংসা করলেন। যারা ক্ষুদ্র ঋণ দেয়, তারা ধনশালী হয়। তারা ব্যবসা করে। তারা চায় না, মানুষ দারিদ্র্য থেকে উঠে আসুক। মানুষ দারিদ্র্য থেকে উঠে আসলে তারা ব্যবসা কী নিয়ে করবে।’

শেখ হাসিনা এ সময় প্রশ্ন রাখেন, ‘ক্ষুদ্রঋণের জন্য যদি দারিদ্র্যতা বিমোচন হয় তাহলে এটি ৬০ ভাগে কেন ছিল। আর এখন কেন ২২ ভাগে নেমেছে। অর্থমন্ত্রীকে বলবো আপনি যদি হিসাব নেন, তাহলে এর কারণ দেখতে পারবেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গৃহীত নানা পদক্ষেপের কারণে দরিদ্রতা ২২ ভাগে নেমে এসেছে। যেখানে অর্থমন্ত্রীও কমর্সূচি নিয়েছেন।’

মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুননেসা মোশাররফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের মা বোনরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে। আর লাভ নিয়ে যায় ক্ষুদ্র্রঋণের ব্যবসায়ীরা। যারা ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করে তারাও চায় না দরিদ্রতা থেকে সাধারণ মানুষ উঠে আসুক। তা করলে তাদের ব্যবসা থাকবে না। দুঃখ লাগে অর্থমন্ত্রী এমন একজনের প্রশংসা করলেন যার কারণে পদ্মা সেতুর কাজই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমেরিকা থেকে আমাকে বারবার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমার ছেলেকে বারবার স্টেট ডিপার্টমেন্টে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখন কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে পদ্মা সেতুতে কোনও দুর্নীতি হয়নি। অর্থমন্ত্রীকে বলি দরিদ্রতা বিমোচন হয়েছে আওয়ামী লীগের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে।’

‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষ পুরস্কৃত হয় আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারা তিরস্কৃত হয়’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সামগ্রিক নিরাপত্তা কাজ যখন শুরু করলো তখনই দারিদ্র্যের হার কমেছে। পাঁচ কোটি মানুষ আজ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে।’

সম্মেলনে আসা নারীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে নারীরা এসেছেন। তাদের বলবো, জঙ্গিবাদ একটি বিশ্বব্যাপী উপসর্গ। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের সঙ্গে মেয়েরাও সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। মেয়েরা মায়ের জাত। ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানুষ খুন করে কীভাবে ইসলাম কায়েম হবে জানি না। মেয়েদের বলবো, আপনাদের ছেলে-মেয়েরা কী করে, কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে, স্কুল-কলেজে যাচ্ছে কিনা এগুলো ভালো করে খোঁজ-খবর রাখবেন। সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় বন্ধু হবেন মা। সন্তান যেন মন খুলে সব কথা বলতে পারে সে সম্পর্ক স্থাপন করেন। সন্তানরা মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পথে যাতে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শুধু শাসন নয়, আদরও করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি অবাক হই যখন দেখি উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের পথে যাচ্ছে। সবই পেয়ে গেছে বলে কি তারা বিপথে চলে যাচ্ছে? এক্ষেত্রে সন্তান যাতে বিপথে না যায় সেদিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে।’   

দীর্ঘ ১৩ বছর পর সম্মেলন উপলক্ষে শনিবার সকালে রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে মহিলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ছুটে আসেন। শত শত নেতাকর্মীর উদ্দেশে বক্তৃতার শুরুতেই শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে আপনাদের অনেকের সাথে চোখের দেখা হয় না, কিন্তু মনের দেখা ঠিকই হয়। সবার কথা মনে পড়ে।’

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে মহিলা নেতাকর্মীরা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নারীদের ক্ষমতায়ন ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার সকল প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরা সমান তালে এগিয়ে চলেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষদের পিছু ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ যেন স্বাচ্ছন্দে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারে সেজন্য বর্তমান সরকারের আমলে সরকারি চাকরিজীবিসহ বিভিন্ন সেক্টরে বেতনভাতা বৃদ্ধি করেছে। বিশ্বের কোনো দেশের সরকারের এত বেতন বৃদ্ধির রেকর্ড নেই।  

এফএইচএস/এমএআর/এসএইচএস/জেআইএম

আরও পড়ুন