ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

জনদুর্ভোগের ৩২ ঘণ্টা

প্রকাশিত: ০১:২৫ পিএম, ০১ মার্চ ২০১৭

ঢাকার সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে সোমবার চালক মীর হোসেনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এর একদিন আগেই চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীর নিহত মামলায় বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন মানিকগঞ্জের আদালত। এই রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে কর্মবিরতিতে যায় পরিবহন শ্রমিকরা।
 
এরপর ঢাকায় পুলিশের গাড়িতে আগুন, পুলিশ-শ্রমিক দফায় দফায় সংঘর্ষ। অবশেষে কয়েক দফা বৈঠকে সমঝোতায় আসে শ্রমিকরা। সড়কে যানবাহন চালানো শুরু করে তারা। গত ৩২ ঘণ্টায় ঘটে যাওয়া ঘটনা ও দুর্ঘটনাগুলো জাগো নিউজের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো।
 
মঙ্গলবার সকাল ৬টা- সাভারে চালক মীর হোসেনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশের পরপরই সোমবার রাতেই সড়কে যানবাহন না নামানোর মৌখিক সিদ্ধান্ত দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। এদিন সকাল ৬টায় ঢাকার বিভিন্ন বিভাগে গাড়ি ছাড়ার কথা থাকলেও রাজধানীর মহাখালী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস।
 
সকাল ৯টা- দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকে ধর্মঘটের ডাক। কার্যত অচল হয়ে যায় সারাদেশের আন্তঃজেলা বাস চলাচল।

mohakhali
 
দুপুর ১২টা- রাজধানীতে কমতে থাকে গণপরিবহনের সংখ্যা। শ্রমিকদের বাধার মুখে লোকাল বাসগুলো বন্ধ থাকে। ঢাকায় পরিবহন সংকট দেখা দেয়। অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশা ও সিএনজিতে গন্তব্যে যেতে হয়েছে অনেককে। অনেকে একসঙ্গে পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে বিকল্প উপায় বেছে নেন।
 
বেলা ১টা- মহাখালী বাস টার্মিনালে কয়েক দফা বৈঠক করে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেন তারা। কিন্তু ইউনিয়ন বৈঠকে রাজি হয়নি। তারা দাবি করে, কর্মবিরতি চালকদের ব্যক্তিগত। এতে শ্রমিক ইউনিয়নের কোনো ভূমিকা নেই। তাই সরাসরি চালকদের সঙ্গে সমঝোতার পরামর্শ দেন তারা।
 
বিকেল ৪টা- গাবতলী-আমিনবাজার সড়ক দখলে নেয় শ্রমিকরা। এ সড়কে যানবাহন চলতে বাধা দেয় তারা। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দিয়ে অবস্থান নেয় তারা।
 
রাত ৮টা ৫ মিনিট- গাবতলীতে বিক্ষোভের একপর্যায়ে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে শ্রমিকরা। পুলিশ বাধা দিলে তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করে। আগুন দেয় পুলিশের একটি র‌্যাকার ভ্যান ও পুলিশ বক্সে।
 
৮টা ২০ মিনিট- আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গাবতলীতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়নি। পুলিশের কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে গাবতলীর সড়ক বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা।
 
৮টা ৪৫ মিনিট- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অ্যাকশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল আর শটগানের গুলি করে তারা।

৮টা ৫৫ মিনিট- পুলিশের কয়েকজন সদস্য গাবতলী টার্মিনালের ভেতরের পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে সেটি ঘিরে রাখে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকলে সাঁজোয়া যান (এপিসি) ও জলকামান আনে পুলিশ। তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা হয়।
 
৯টা ৩০- লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আবারও গুলি ছোড়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আসে র‌্যাব সদস্যরা। মাইক হাতে শ্রমিক নেতারা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিচ্ছিল।
 
রাত ১২টা- গাবতলীর সড়ক থেকে বিক্ষুব্ধ পরিবহন শ্রমিকদের সরিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করতে র‌্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান শুরু করে। এ সময় তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। তবে পুলিশের অভিযান সত্ত্বেও মধ্যরাত পর্যন্ত টায়ার জ্বালিয়ে সড়কে অবস্থান নেয় তারা।

mohakhali
 
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা- সকাল থেকে আন্দোলনের একপর্যায়ে এক সেনা কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে শ্রমিকরা। এ সময় আবার অ্যাকশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। জলকামান, সাঁজোয়া যান, শটগান ও টিয়ারসেল নিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে তারা।
 
সকাল সাড়ে ১০টা- শ্রমিক ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয় বৈশাখী পরিবহনের চালক শাহ্ আলম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

এদিকে ধীরে ধীরে সড়কের দখল নেয় পুলিশ। সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে গাবতলীর সড়কটি খুলে দেয়া হয়। তবে আতঙ্কের কারণে সড়কটিতে রিকশা ছাড়া কোন যানবাহন চলছিল না।
 
বেলা ১টা- পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জানান, আজকের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হবে।
 
বেলা ১টা ৩০- ধর্মঘট নিয়ে মালিক-শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়।
 
বেলা সোয়া ২টা- সংবাদ সম্মেলন করে ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা জানান নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। আর এই ঘোষণার পরপরই সবধরনের গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়।
 
এআর/ওআর/আরআইপি

আরও পড়ুন