টার্মিনালে বাস রেখে পত্রিকা পড়ছেন চালকরা
চিত্রটি রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালের। প্রতিদিন সকালে একের পর এক বাস ছাড়ার হিড়িক থাকলেও আজকের চিত্রটা ভিন্ন। নেই কোনো কোলাহল আর হৈচৈ। পত্রিকা পরে অবসর সময় কাটাচ্ছেন চালকরা।
দুই সহকর্মীর ফাঁসি ও যাবজ্জীবন রায়ের বিপক্ষে সোমবার অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট পালন করে সারা দেশের আন্তনগর বাসের চালকরা। তবে মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ধর্মঘট শুরু করে তারা। এ কারণে আজ বুধবার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দেশের কোথাও কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না।
সরেজমিনে টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেল, শত শত বাস সড়কে দাঁড়িয়ে থাকার চিত্র। টার্মিনালের প্রবেশমুখে পুলিশের তিন থেকে চারজন সদস্য আর শত শত পরিবহন শ্রমিক। কেউ সহকর্মীর সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছে, অনেকে আবার এক হয়ে পত্রিকা পড়ছে। টার্মিনালের প্রতিটি কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। টিকিট বিক্রেতা দূরের কথা কাউন্টারের সামনেও ভিড়ছেন না পরিবহন শ্রমিকরা।
রাজীব পরিবহনের চালক জাহাঙ্গীর শাহ জাগো নিউজকে জানান, আমাদের ভাইয়ের বিচারের রায় স্থগিত না করলে সারা দেশে কোনো বাস চলবে না।
নিরব ট্রাভেলসের পরিবহন শ্রমিক জয়নাল জানান, প্রতিটি দুর্ঘটনায় কারো না কারো দোষ থাকে কিন্তু এদেশে সব দোষ চালকদের। এই অবস্থা চলতে দেয়া যাবে না। আমরা নিজের ইচ্ছায় ধর্মঘট পালন করছি। নিজের ইচ্ছায় গাড়ি চালাবো।
এদিকে দূরপাল্লার বাস বন্ধের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের যাত্রীরা। বাসের অপেক্ষায় টার্মিনালে সারারাত অপেক্ষা করেছেন অনেকে। অনেকে ব্যাগ নিয়ে টার্মিনালেই ঘুমিয়ে পড়েছেন।
সিলেটের যাত্রী তরিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে অপেক্ষা করছি। একবার কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে টিকিট না পেয়ে আবার এসেছি। সারারাত অপেক্ষা করলাম। বাস ছাড়ার কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না।
উল্লেখ্য, ঢাকার সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীর নিহত হওয়ার ঘটনায় সোমবার চালক মীর হোসেনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীর নিহতের ঘটনায় করা মামলায় বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন মানিকগঞ্জের আদালত। এই রায় ঘোষণার পর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি বিভাগে অঘোষিত কর্মবিরতিতে যায় চালকরা।
পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরাও গাড়ির মালিক। গাড়ি না চললে আমাদের দৈনিক কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়। গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত একান্তই চালকদের। আমরাতো তাদের জোর করে গাড়ি চালাতে বাধ্য করতে পারি না।’
এআর/জেডএ/পিআর