ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

শাস্তি হলে বন্ধ পদোন্নতি

প্রকাশিত: ১০:৪৪ এএম, ০৮ এপ্রিল ২০১৫

চাকরি জীবনে কোনো কর্মকর্তা একবার শাস্তি পেলে তিনি আর পদোন্নতি পাবেন না। বিশেষ বিবেচনায় শুধু উপসচিব পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) এমন সিদ্ধান্তের কারণে এবার তিন স্তরে একযোগে পদোন্নতি দেয়ার সময় অন্তত আড়াইশ’ কর্মকর্তা পদোন্নতি পাওয়া থেকে ছিটকে পড়েছেন।

এছাড়া বেঞ্চ মার্ক (প্রয়োজনীয় পাস নম্বর) না থাকা, গুরুতর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা চলমানসহ অন্য আরও কিছু কারণে পদোন্নতি পাননি কয়েকশ’ কর্মকর্তা। এর ফলে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য প্রায় দু’হাজার কর্মকর্তার নাম বিবেচনায় নেয়া হলেও শেষমেশ পদোন্নতির দেখা পেয়েছেন ৮৭৩ জন। বাদ পড়েছেন প্রায় ১১শ’।

তবে আশার কথা, বঞ্চিত তালিকা থেকে ১৭৪ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু তারপরও এমন কিছু কর্মকর্তা পদোন্নতি থেকে বাদ পড়েছেন যাদের বাদ পড়ার মতো দৃশ্যমান কোনো কারণ জানা যায়নি। এসব কর্মকর্তার মধ্যে অনেকে মেধাবী হিসেবে পরিচিতি।

বিশেষ করে ‘নেক্সট বিলো রুল’ অমান্য করে ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা না দিয়ে জুনিয়রকে পদোন্নতি দেয়ায় ক্ষোভ অসন্তোষের শেষ নেই। এ কারণে যারা অতিরিক্ত সচিব হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের কেউ কেউ এ পদোন্নতিকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করবেন বলেও ইঙ্গিত দেন। সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যারা উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের কষ্টের শেষ নেই। অনেকে কোনো কারণ জানতে না পেলে ক্ষোভ-হতাশায় ভুগছেন। ইচ্ছে করলেও আগের মতো অফিসের কাজে মন বসাতে পারছেন ন।

এদিকে সোমবার রাতে জনপ্রশাসনে এ বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার পদোন্নতি হওয়ার পর মঙ্গলবার প্রশাসনজুড়ে এক ধরনের অচলাবস্থা নেমে আসে। পদোন্নতির পর সঙ্গতকারণে সবাইকে ওএসডি করায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মঙ্গলবার কোনো রুটিন ওয়ার্ক করতে পারেননি। অনেকে পেছনের তারিখ দিয়ে পেন্ডিং কাজ সেরেছেন।

অপরদিকে এক রকম শূন্যপদ ছাড়াই পদোন্নতি দিতে গিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখন রীতিমতো বিপাকে পড়েছে। সবাইকে পোস্টিং দিতে পারছে না। আবার প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রাইজপোস্টিং বাগিয়ে নেয়ার অদৃশ্য প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এবার যারা পদোন্নতি পাননি তাদের সবাইকে গড়ে পদোন্নতি বঞ্চিত বলা সঠিক হবে না। কেননা, চাকরি জীবনে যেসব কর্মকর্তা একবার দণ্ডিত হয়েছেন তাকে যুগ্ম সচিব কিংবা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত করা হয়নি। হোক তা গুরুদণ্ড বা লঘুদণ্ড। এসএসবির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একবার কেউ দণ্ডিত হলে বড়জোর তাকে শুধু উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হবে। এরপর তিনি আর কোনো পদে পদোন্নতি পাবেন না। ইতোমধ্যে যারা যুগ্ম সচিব হয়ে গেছেন তাদের গতি ওই পর্যন্ত বহাল রেখে থামিয়ে দেয়া হবে। ভবিষ্যতে এমনও হতে পারে, কেউ দণ্ডিত হলে তাকে কোনো প্রকার প্রদান দেয়া ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

এ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রয়োজনীয় পাস নম্বর বা বেঞ্চমার্ক না থাকায় পদোন্নতি পাননি প্রায় একশ’ কর্মকর্তা। অন্যরা বাদ পড়েছেন বিভাগীয় মামলা, অদক্ষতা ও গোয়েন্দা সংস্থার নেতিবাচক গোপনীয় প্রতিবেদনের কারণে। এছাড়া পদোন্নতি বিধিমালার ৪ এর ২(ক) অনুযায়ী এসএসবির হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা তো রয়েছেই। বিধির এ উপবিধির ক্ষমতাবলে যুগ্মসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ে পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে একজন কর্মকর্তার সমগ্র চাকরি জীবনের গতি, প্রকৃতি ও পোস্টিং রেকর্ড পর্যালোচনা করে এসএসবি কাউকে যোগ্য মনে করলে পদোন্নতি দেয়ার সুপারিশ করবে। আর যোগ্য মনে না করলে পদোন্নতি হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, এরপরও কেউ যদি মনে করেন তার প্রতি ন্যায়বিচার করা হয়নি তবে তিনি প্রতিকার চেয়ে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে আবেদন করতে পারেন।

প্রশাসনবিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ১৯৮৪, ৮৫ ও ১৯৮২ বিশেষ ব্যাচের মতো বড় তিনটি ব্যাচের (দেড় হাজার কর্মকর্তা) কারণে প্রশাসনে দীর্ঘদিন থেকে পদোন্নতি ও পদায়ন নিয়ে নানা জটিলতা বিরাজ করছে। বিশেষ করে বড় প্যাকেজে ব্যাচ ধরে পদোন্নতি দিতে গিয়ে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। দলীয়করণের ধাক্কাধাক্কি তো আছেই। এর ফলে প্রতিটি পদোন্নতির ক্ষেত্রে গড়ে কমবেশি ৫০ ভাগ কর্মকর্তা বঞ্চিত হয়েছেন। কিন্তু সংকট নিরসনে কোনো সরকারই যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি।

বিএ/আরআই