পদোন্নতি পেলেন ৮৭৩ কর্মকর্তা
স্থায়ী পদ না থাকলেও উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব এবং অতিরিক্ত সচিবের তিন স্তরে এক সঙ্গে ৮৭৩ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে উপ-সচিব হয়েছেন ৩৪৩ জন, উপ-সচিব থেকে ২৯৯ জন যুগ্ম-সচিব এবং যুগ্ম-সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছেন ২৩১ জন।
সোমবার রাত পৌনে ১০টায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ শাখার (এপিডি) যুগ্ম-সচিব মহিবুল হক সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, লিয়েন থাকা এবং বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরতদেরও পদোন্নতির আওতায় নেওয়া হয়েছে। রাতেই পদোন্নতি সংক্রান্ত তিনটি আদেশ জারি করে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এ বছরের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত জনপ্রশাসনের ৯৮৬ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিল। বিগত সরকারের সময় (২০০৯-২০১৩) বিভিন্ন ধাপে জনপ্রশাসনের ২ হাজার ৫২৮ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। এই পদোন্নতি নিয়ে বর্তমানে ১০৮টি অতিরিক্ত সচিবের স্থায়ী পদের বিপরীতে ৪৫৭ জন, ৪৩০টি যুগ্ম-সচিবের স্থায়ী পদের বিপরীতে ৯৩৫ জন, ৮৩০টি উপ-সচিবের স্থায়ী পদের বিপরীতে ১ হাজার ৩২৪ জন, ২ হাজার ৭০০ জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবের স্থায়ী পদের বিপরীতে১ হাজার ২৯২ জন কর্মকর্তা আছেন।
এর বাইরেও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কিছু স্থায়ী পদ রয়েছে। জনপ্রশাসনে বর্তমানে ৬ হাজার ১৪ জন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা আছেন; এদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনকে অন্যক্যাডার থেকে প্রশাসন ক্যাডারে আত্মীকরণ করা হয়েছে। এই সরকারের আমলে সচিব পদে ২০ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৩১৭ জন, যুগ্ম-সচিব পদে ৩০২ জন এবং উপ-সচিব পদে ৩৪৭ কর্মকর্তা পদোন্নতি পেলেন। এর বাইরেও গত ২৩ ফেব্রুয়ারি নন-ক্যাডার কোটায় ১০ জনকে সহকারী সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এছাড়া কয়েকটি ধাপে দুই শতাধিক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবকে সিলেকশন গ্রেড দেওয়া হয়েছে।
গত সরকারের আমলে পদোন্নতি পাওয়া দুই হাজার ৫২৮ কর্মকর্তার মধ্যে সচিব পদে ৭৮ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ২৯৩ জন, যুগ্ম-সচিব পদে এক হাজার ৯১ জন এবং উপ-সচিব হিসাবে ১ হাজার ৬৬ জন পদোন্নতি পান। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদের সরকার গঠনের পর দিন ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি যুগ্ম-সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ৮০ জনকে পদোন্নতি দেয়।
এর আগে ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর উপ-সচিব থেকে যুগ্ম-সচিব পদে ৮০ জন এবং ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে উপ-সচিব হিসাবে ১৮২ কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছিলেন। গত বছরের ৭ অগস্ট সাত জন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনজন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি একজন এবং গত ২ মার্চ নয়জন অতিরিক্ত সচিবকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘ দিন ঝু্লে থাকার পর সোমবার সন্ধ্যায় পদোন্নতি সংক্রান্ত ফাইলে স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী। হঠাৎ সরগরম মন্ত্রণালয় এদিকে সোমবার বিকাল ৫টার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাসায় চলে গেলেও সন্ধ্যার পর পদোন্নতি সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের ডেকে আনা হয়।
রাত সাড়ে ৭টার পর থেকে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ শাখার (এপিডি) দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিবের দফতারসহ পদোন্নতি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পদোন্নতিপ্রত্যাশী কর্মকর্তাদের ভিড় বেড়ে যায়। কখন আদেশ জারি হবে সেই আশায় বসে থাকেন পদোন্নতিপ্রত্যাশী বেশ কিছু কর্মকর্তা। রাত ১০টা পর্যন্ত সাংবাদিকরাও অপেক্ষা করেন এই দপ্তরে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ ১, ২ এবং ৩ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দফতরে অবস্থান করেন। পরে রাত ১০টার দিকে পদোন্নতির আদেশ জারি করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রশাসনিক জটিলতায় সোমবার রাতে কামারুজ্জমানের ফাঁসি কার্যকর করতে না পারায় হঠাৎ করে পদোন্নতির আদেশ জারি করতে নির্দেশনা আসে। বঞ্চনায় ক্ষোভপদোন্নতির তালিকায় নাম না থাকায় সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে, তবে কেউ নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।
পদোন্নতি বঞ্চিত একজন উপ-সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কী কারণে তিনি বাদ পড়েছেন সেই হিসেব মেলাতে পারছেন না। তিনি বলেন, পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো অভিযোগ না থাকলেও তিন দফায় আমাকে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হলো।
আরেকজন যুগ্ম-সচিব বলেন, `দুই দিন আগেও খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম অতিরিক্ত সচিব হিসাবে পদোন্নতির তালিকায় নামরয়েছে। তবে চূড়ান্ত তালিকায় আমার নাম নেই।`
পদোন্নতিবঞ্চিতরা একসঙ্গে হয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, জ্যেষ্ঠ সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন বলেও জানান একজন কর্মকর্তা।
বিএ/এমএস