ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ডিএসসিসির এক রাস্তায় দুই কার্যাদেশ

প্রকাশিত: ০৩:৩৩ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়েছে। একই রাস্তা পৃথক দুটি নামে ও আয়তন বেশি দেখিয়ে দুটি কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এভাবে এক কাজের দুটি বিল করে ৭ কোটি টাকা ভাগাভাগির সব আয়োজন প্রায় চূড়ান্ত করেছে ডিএসসিসির একটি চক্র। সম্প্রতি ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলীদের এমন অনিয়মের চিত্র ধরা পড়ে।
 
এ বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ঘটনা সত্য। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। দায়ীদের বরখাস্তসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর বিভিন্ন রাস্তা ও ফুটপাত সংস্কার এবং আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। সময় সংস্থা অঞ্চল-৫ এর ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিস্টিলারি রোড ও দীননাথ সেন বাইলেনের কোকা-কোলার গলির পাইপ, নর্দমা নির্মাণসহ রাস্তা ও ফুটপাতের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের বিপরীতে তিনটি গ্রুপে কার্যাদেশ দেয়া হয়।
 
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৪৫ নং ওয়ার্ডের পাইপ ও নর্দমা নির্মাণসহ রাস্তা ও ফুটপাতের উন্নয়ন কাজে দুটি গ্রুপে প্রাক্কলন ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডিস্ট্রিলারি সড়কের ১০৭ নম্বর হোল্ডিং থেকে ২১/ঙ পর্যন্ত এবং ১২৬ নম্বর হোল্ডিং থেকে ১১৯/১৩ কাঁঠেরপুল পর্যন্ত রাস্তায় ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ কাজ। এ কাজের জন্য প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ১২৯ টাকা।
 
এমন অভিযোগ ওঠার পর মেয়র সাঈদ খোকন বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে দুর্নীতির এই চিত্র উঠে আসে। এতে দেখা যায়, একই রাস্তার বিপরীতে দুটি কার্যাদেশ ছাড়াও আধুনিকায়নের জন্য যে ব্যয় ধরা হয়েছে তাও প্রায় দ্বিগুণ। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ কাজের সর্বোচ্চ প্রাক্কলন ধরা যেত এক কোটি ২১ লাখ ৪৬ হাজার ১৮ টাকা। এতে অতিরিক্ত ২ কোটি ৭৭ লাখ ৫৪ হাজার ১১১ টাকা ধরা হয়েছে।
 
একই রাস্তার হোল্ডিং নম্বর পরিবর্তন করে আরও একটি প্রকল্প তৈরি করে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ডিস্টিলারি রোডের ১৫৭ নম্বর হোল্ডিং থেকে ৭৬ নম্বর পর্যন্ত এবং ২১ থেকে ১০২ নম্বর ধূপখোলা রোড পর্যন্ত নাম দেয়া হয়। তবে কাজের প্রকৃতি এক ও অভিন্ন রাখা হয়। এ দুটি কাজের প্রথমটির ঠিকাদারি দায়িত্ব পায় নাওয়াল কনস্ট্রাকশন-এসসিইএল (জেভি) ও দ্বিতীয়টি মেসার্স ওপাল ইন্টারন্যাশনাল।
 
একই সড়কের ১১৬ নং হোল্ডিং থেকে উত্তর দিকে দয়াগঞ্জ রোড পর্যন্ত দৈর্ঘ্য বাস্তবে ১৬৫ মিটারের স্থলে নকশা ও প্রাক্কলনে ২৫০ মিটার এবং প্রস্থ ৪ দশমিক ৫০ মিটারের স্থলে ৯ মিটার দেখানো হয়েছে। এছাড়া পাইপের ডায়া, পিটের গভীরতা, ব্রিক ওয়ার্কে চওড়াসহ অন্যান্য বিষয় বাস্তবের সঙ্গে অসামঞ্জস্য রয়েছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭ হাজার টাকা। পুরো কাজের টাকা কাজ না করেই আত্মসাতের পাঁয়তারা করে চক্রটি।
 
জানা গেছে, সাঈদ খোকন কাজটি শুরুর আগেই কর্পোরেশনের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করেন। এ সময় এ কাজের দায়িত্বে ছিলেন অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সি আবুল হোসেন। তাকে অঞ্চল- ১ এ বদলি করা হয়। ২ নম্বর অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী বোরহান আহমেদকে বদলি করা হয় অঞ্চল-৫ এ।
 
বোরহান আহমেদ এ কাজের দায়িত্ব নিয়েই দেখতে পান লুটপাটের ষড়যন্ত্র। মুন্সি আবুল হাশেম আগেই কার্যাদেশ দেয়ায় ঠিকাদাররা কাজ শুরুর জন্য বোরহান আহমেদকে জোড়াজুড়ি করতে থাকেন। ঠিকাদারদের তিনি কাজ করতে না দিয়ে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানান। একপর্যায়ে বিষয়টি মেয়র সাঈদ খোকনের কান পর্যন্ত গড়ায়।
 
এছাড়া আরেকটি প্রকল্পে অনিয়ম ধরা পড়েছে। এটি ছিল নর্দমা নির্মাণ কাজ। এ কাজে ২০ শতাংশ প্রাক্কলন ও নকশার সঙ্গে বাস্তবের হোল্ডিং নম্বরের পুরোপুরি মিল নেই। এতে ৯৪/৭ থেকে ২৫/১ পর্যন্ত রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ২৩১ মিটার, যাকে ৩০০ মিটার হিসেবে ধরা হয়েছে। এ রাস্তার প্রস্থ ৪ দশমিক ৫ মিটার থেকে ৫ মিটার ধরা হয়েছে। বাস্তবে এর প্রস্থ ৩ দশমিক ৫ মিটার।
 
এছাড়া ১০৬/৭ দীন নাথ সেন রোড সংলগ্ন (পূর্ব-পশ্চিম) রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ১০০ মিটার। বাস্তবে এটি ৮৮ মিটার। ৩১৯ মিটারের পরিবর্তে নর্দমার দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ৪০০ মিটার। এছাড়া  ১৫ মিটার বালু ভরাট ধরা হয়েছে যার প্রয়োজন নেই। পুরো প্রকল্পটির প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ লাখ ১৩ হাজার ২ টাকা। তদন্তে দেখা গেছে, এটি ৪৮ লাখ ৪ হাজার ৪৮৪ টাকা ধরা যেত।

এছাড়া বিভিন্ন আইটেমের বাজারদর অনুযায়ী মোট প্রাক্কলন ব্যয় ৯৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৭ টাকার স্থলে ৯৫ লাখ ১৩ হাজার ২ টাকা ধরা হয়েছে।

পুরো প্রকল্পে ৪৮ লাখ ৮ হাজার ৫১৮ টাকা বেশি ধরা হয়েছে।
 
ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এ তিনটি কাজে সিটি কর্পোরেশনের ৭ কোটি টাকার বেশি লুটপাটের সব আয়োজন চূড়ান্ত ছিল। কাজ না করেই তারা পুরো টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারায় লিপ্ত ছিলেন।

এই তিনটি প্রকল্প প্রণয়ন থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ডিএসসিসির চার প্রকৌশলী। এরা হলেন- অঞ্চল-৫ এর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সি আবুল হাশেম, সহকারী প্রকৌশলী (পুর) পারভেজ রানা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর) আতিক উল্লাহ মৃধা ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. ফরিদুজ্জামান। এই চার প্রকৌশলীর মধ্যে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা ও একজনের বিরুদ্ধে শুধু বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
 
এমএসএস/ওআর/আরআইপি