আনসার-ভিডিপি মাটি ও মানুষের বাহিনী : প্রধানমন্ত্রী
আনসার-ভিডিপিকে ‘মাটি ও মানুষের বাহিনী’ হিসেবে বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জরুরি প্রয়োজনে সরকারের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে এ বাহিনী বার বার উৎকৃষ্ট প্রমাণ রেখেছে।
আনসার-ভিডিপি সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস কেবল বাংলাদেশে নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই একটি সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা যাতে মাদকাসক্ত না হয়, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে না জড়ায়- এ ব্যাপারে আপনাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং এটা প্রতিরোধ করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখায় বিশেষ ভূমিকা রাখবেন, সেটাই আমরা চাই।
রোববার সকালে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৭তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন রজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংসতা প্রতিরোধে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আনসার সদস্যরা বিরাট ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে অপারেশন রেলরক্ষা, এটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনসার সদস্যদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে তাদের ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের প্রতিটি নির্বাচনেই আপনাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকে।
সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উন্নয়নে নেয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের সুযোগ-সুবিধা প্রতি বছরই বিভিন্নভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
সকালে আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে পৌঁছার পর প্রধানমন্ত্রী প্যারেড পরিদর্শন করেন। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান খান এবং প্যারেড কমান্ডান্ট আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতা ও সেবামূলক কাজের জন্য আনসার সদস্যদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন। ব্যাটালিয়ন আনসারদের চাকরি নয় থেকে ছয় বছরের পূর্ণতা সাপেক্ষে স্থায়ী করার খসড়া আইনটি অনুমোদন দেয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে আইনটা হয়ে যাবে। আপনারা ছয় বছরে স্থায়ীত্ব পাবেন। কেবিনেটে অনুমোদন হয়ে গেছে। ইনশাল্লাহ আমরা পাস করে দেব।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা কারও কাছে মাথা নিচু করে চলবো না, মাথা উঁচু করে চলবো। তাই আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। পরমুখাপেক্ষী হয়ে নয়। এই বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের প্রশিক্ষণ শুধু নিজেদের না, গ্রামের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে আপনারা তাদের আত্মমর্যাদাশীল হিসাবে গড়ে তুলতে পারেন।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা বর্তমানে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসহ দেশে-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে। এছাড়া আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে এ বাহিনী সারাদেশে এক বিশাল পরিবর্তন সূচনা করেছে।
আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও ঋণ গ্রহণের সম্মিলনের মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণে এ ব্যাংক কাজ করছে।
মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনীর ৬৭০ জন শহীদকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে এ বাহিনীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। তাদের কাছে রক্ষিত ৪০ হাজার থ্রি নট থ্রি রাইফেলই ছিল, সে রাইফেলই মুক্তিযুদ্ধে মূল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সম্প্রতি অস্থায়ী ব্যাটালিয়ন আনসার, অঙ্গীভূত আনসার, হিল আনসার ও ভিডিপি দলনেতা-দল নেত্রীদের ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, খুলনা ও রাঙামাটিসহ পাঁচ জেলায় আনসার ব্যাটিলিয়ন সদর দফতরের উদ্বোধন করেন।
এরপর তিনি কেক কাটেন এবং আনসার সদস্যদের অংশগ্রহণে সচেতনতামূলক নাটিকা দেখেন ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে রচিত গান শোনেন। প্রধানমন্ত্রী আনসার সদস্যদের নির্মিত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের স্টলও পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শিশু ও মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, স্বরাষ্ট্র সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারউজ্জামান, জেলা প্রশাসক এসএম আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ প্রমুখ।
আমিনুল ইসলাম/এআরএ/আরআইপি