ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

পাইলট ব্যাচ পরেই না ফেরার দেশে হৃদি

প্রকাশিত: ০৪:৫২ পিএম, ০১ এপ্রিল ২০১৫

ডাক্তার বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়েও ডাক্তার হবে। কিন্তু, মেয়ে যে বিমানের পাইলট হতে চায়! সে কারণে ভর্তি হন বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমিতে। গ্রাউন্ড প্রশিক্ষণ শেষে ফ্লাইং প্রশিক্ষণও শুরু করে তামান্না রহমান হৃদি। কিন্তু, নিয়তির নির্মম পরিহাস! গত মঙ্গলবার পাইলট ব্যাচ পরে পরের দিনই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটিতে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর সফলতার সাথে শেষ করেছিলেন ‘সলো টেস্ট’। সে সময় তিনি প্রথম সামরিক পাইলট হিসেবে স্বীকৃতিও পান। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে পাইলটের ব্যাচ পরানো হয় তাকে।

প্রথম নারী হিসেবে সামরিক পাইলটের স্বীকৃতি পাওয়ার পর নিজেকে সৌভাগ্যবতী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন তামান্না।



সেই হৃদিই পারলেন না নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে। বুধবার রাজশাহীর শাহ মাখদুম বিমান বন্দরের রানওয়েতে প্রশিক্ষণকালে বিমানে আগুন লেগে যায়। সে আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান হৃদি। এ ঘটনায় প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন সাইদ কামাল দগ্ধ হয়েছেন।

পরে ঢাকা থেকে পাঠানো একটি বিমানে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। তার শরীরের ৫০ শতাংশই পুড়ে গেছে।

বুধবার রাতে নিহত হৃদির বাসায় গিয়ে দেখা যায় মা রেহানা ইয়াসমীন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। পাশে স্তব্ধ বাবা ডা. আনিছুর রহমানের সান্তনা দেয়ার ভাষা নেই। ভাই আসিফ রহমান শুভ বোন হৃদির লাশ আনার ব্যাপারে ছুটোছুটি করছেন।

হৃদির মামা লিয়াকত হোসেন মিয়া জাগোনিউজকে বলেন, হৃদি সফলতার সাথে ভালো ফলাফল নিয়ে এ লেভেল ও এবং ও লেভেল শেষ করে। এরপর বাবা-মায়ের স্বপ্ন মেয়েকে ডাক্তারি পড়াবেন। কিন্তু, হৃদি চেয়েছিলেন আকাশে উড়তে। নারী বেসামরিক পাইলট হতে। সে কারণে পরিবারের চাওয়াকে ডিঙিয়ে হৃদি ভর্তি হন বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমিতে।

তিনি আরো বলেন, গ্রাউন্ড প্রশিক্ষণ শেষ করে তামান্না সবে শুরু করেছিলেন ফ্লাইং প্রশিক্ষণ। গতকাল মঙ্গলবার পরেছিলেন পাইলটের ব্যাচ। কিন্তু, সেই পাইলটের ব্যাচ পরেই আমাদের আদরের হৃদি যে এভাবে চলে যেতে পারে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। এই বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন হৃদির মামা।



পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হৃদির বাবা আনিসুর রহমান ঢাকার বাসিন্দা। পেশায় চিকিৎসক। তিনি গাজীপুর সিভিল সার্জন হিসেবে কর্মরত। হৃদিদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল সদরের গালা গ্রামে।

ফ্লাইং একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, তামান্না রাজশাহীতে পার্সোনাল পাইলট লাইসেন্স (পিপিএল) কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী, এই কোর্সে এককভাবে ৫০ ঘণ্টা বিমান চালাতে পারলে সনদ দেওয়া হয়। এরপর কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (সিপিএল) কোর্সে ভর্তি হতে হয়। এরপর এককভাবে ১৫০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করলে সনদ দেওয়া হয়।



গতকাল মঙ্গলবার তামান্নাকে পিপিএল কোর্সের অধীনে এককভাবে বিমান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। বুধবার দুপুরে তিনি বিমানে ওঠেন। তার এককভাবে বিমান চালানোর কথা থাকলেও সাথে ছিলেন প্রশিক্ষক সাইদ কামালও।

সিভিল এভিয়েশনের জ্যেষ্ঠ উপ-পরিদর্শক এনামুল কবির জানান, বেলা ১টা ৫৮ মিনিটে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। উড্ডয়নের পরপর ‘টার্নিং’ নিতে গিয়ে বিমানটি রানওয়ের পূর্ব পাশে গিয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়।



রানওয়ের পূর্ব পাশের দেয়াল ঘেঁষে পবা উপজেলার নওহাটা পৌর এলাকার চালিকীপাড়া মহল্লা।

প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক মোহাম্মদ ডাবলু (২৮) ও লুৎফর রহমান জানান, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার শব্দ শুনে তিনি দেয়াল টপকে বিধ্বস্ত বিমানের কাছে যান। এসময় বিমানের মাঝখান থেকে প্রশিক্ষণার্থী পাইলট মেয়েটি হাত ইশারা করে তাকে ডাকছিলেন আর চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান’।

এ সময় বিমানটি জ্বলছিল। তার মাঝখানে ছিলেন মেয়েটি। তাদের কাছে পানি ছিল না। তারা আগুনের তাপের জন্য কাছে ভিড়তে পারছিলেন না। পুরুষ লোকটি বিমানের জানালার কাঁচ ভেঙে বাইরে পড়েছিলেন। তিনি ও লুৎফর মাটিতে গড়াগাড়ি করিয়ে প্রশিক্ষক সাঈদ কামালের শরীরের আগুন নেভান।

তারা বিমান থেকে সাঈদ কামালকে উদ্ধার করে আগুন নেভানোর প্রায় ২০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসে। তারা যখন আগুন নিভিয়ে ফেলেন, তখন বিমানের ভেতেরে নারী পাইলট পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিলেন।

ঘটনার পর সেখানে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে বিমানটি প্রথমে আছড়ে পড়েছিল সেখানে বিমানের সামনের চাকাটি ভেঙে পড়ে রয়েছে। খানিকটা জায়গার মাটি গর্ত হয়ে গেছে। সেখান থেকে প্রায় ৫০ হাত দূরে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে। এর ককপিট, ইঞ্জিন ও পাখা পুড়ে আলাদা হয়ে গেছে।

ঘটনার পরপরই রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সারুল ইসলামসহ র‌্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন।

ঘটনা তদন্তে সিভিল এভিয়েশনের ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনের পরিচালক নাজমুল আনামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি বিকেলেই একটি হেলিকপ্টারে করে রাজশাহীতে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা তদন্তকাজ শুরু করেছেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে রাতেই হৃদির লাশ হেলিকপ্টার যোগে নিকুঞ্জ-২, ১২ নাম্বার রোডের বাসায় আনা হবে। সেখানে কাল (বৃহস্পতিবার) বাদ যোহর জানাজা শেষে ঢাকাতেই দাফন করা হবে।

জেইউ/এমএএস/আরআই/এসআরজে