বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত পুলিশ জাদুঘর
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সময়কার পুলিশের নানা স্মৃতি ও অবদানের গল্প নিয়ে সেজেছে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পূর্ব পাশে পুলিশ টেলিকম ভবনের পাশে এ জাদুঘরের অবস্থান।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধকারী রাজারবাগের পুলিশের যুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে গড়ে উঠেছে জাদুঘরটি।
রাজারবাগের স্মৃতিবিজড়িত এ জাদুঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে ‘বঙ্গবন্ধু গ্যালারি’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্লভ কিছু ছবি রয়েছে এখানে। রেসকোর্সের ভাষণসহ বঙ্গবন্ধুর নানা সময়কার ছবি কাচের ফ্রেমবন্দি। প্রতিটি ছবির নিচে রয়েছে প্রেক্ষাপটের কথা। পাশেই রাখা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তৈরি দুটি ডকুমেন্টারি।
গ্রাউন্ড ফ্লোরে বঙ্গবন্ধুর ছবিগুলোর পাশেই একটি লাইব্রেরি। এখানে রয়েছে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন বই। পাশেই চারটি কম্পিউটার। এগুলোর মাধ্যমে অনলাইনে ই-বইগুলো পড়তে পারবেন পাঠকরা।
জাদুঘরের বেজমেন্টে নামতেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত রক্তভেজা প্যান্ট-শার্ট। পাশেই কাচের ভেতর রাখা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পুলিশের ব্যবহৃত ডায়েরি, বই, পরিচয়পত্র, খাবার প্লেট, টুপি, বেল্ট, টাই, স্টিক, পানির মগ-গ্লাস, রেডিও, শার্ট, প্যান্ট, চশমা, কলম, মেডেল, বাঁশি, মাফলার, জায়নামাজ, র্যাং ক ব্যাজ, ক্যামেরা, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মানিব্যাগ, লোহার হেলমেট, হ্যান্ড মাইক ইত্যাদি।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের জন্য বাজানো হয়েছিল একটি পাগলা ঘণ্টা। স্মৃতিবিজড়িত সেই ঘণ্টাটিও রয়েছে জাদুঘরে।
বেজমেন্টের অপর প্রান্তে চোখে পড়ে ’৭১-এ ব্যবহৃত পুলিশের সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু এমএম রাইফেল, ২ ইঞ্চি মর্টার, মর্টারসেল, সার্চলাইট, রায়ট রাবার শেল, রিভলবার, .৩০৩ এলএমজি, মেশিনগান, ৭.৬২ এমএম এলএমজি, .৩২ বোর রিভলবার, .৩৮ বোর রিভলবার, .৩০৩ রাইফেল, ১২ বোর শটগান, ৯ এমএম এসএমজি।
বেজমেন্টে আরও রয়েছে মুঘল, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের পুলিশের ব্যবহৃত তলোয়ার, চাবুক, রামদা, ইউনিফর্মসহ অন্যান্য জিনিসপত্র।
শিক্ষার্থীরা আগ্রহ নিয়ে এসব দুর্লভ অস্ত্রগুলো দেখছিল। বাবার সঙ্গে জাদুঘরে আসা সালমান নূর নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলে, এখানে আসার আগে এসব অস্ত্র কখনো দেখিনি। এখানকার সবকিছুই নতুন লাগছে।
জাদুঘরের গ্রাউন্ড ফ্লোরের লাইব্রেরির পাশেই রয়েছে একটি স্যুভেনিয়ের শপ। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে লেখা বই, প্লেট, মগ, কলমদানি, চাবির রিং, ব্যাগ, গেঞ্জি, পেপার ওয়েট, কলম এবং ক্রেস্ট বিক্রি করা হচ্ছে এখানে। গত ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের শুভ উদ্বোধন করেন।
বুধবার ছাড়া সপ্তাহের যেকোনো দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে জাদুঘরটি (শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত)।
জাদুঘরের প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। তবে স্কুল-কলেজের ড্রেস পরিহিত ছাত্র-ছাত্রী ও ৫ বছরের নিচের শিশুরা বিনামূল্যে জাদুঘরে প্রবেশ করতে পারবে।
এআর/জেএইচ/জেআইএম