ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ফিলিস্তিনের প্রতিটি নারী-পুরুষ বাংলাদেশকে চেনে

প্রকাশিত: ০৩:৩৫ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসছেন বুধবার। দেশটির প্রেসিডেন্টের সফর নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি দূতাবাসের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ইউসুফ এস রামাদান কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে নানা বিষয়। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে কথা বলেন নিজস্ব প্রতিবেদক আমানউল্লাহ আমান।

২০১৬ সালে মাহমুদ আব্বাস বাংলাদেশে যাত্রাবিরতিকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী তাকে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। এ সফর তারই ধারাবাহিকতা। ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকালে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু আলোচনায় স্থান পাবে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে, সেক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা থাকবে। এভাবেই সফর প্রসঙ্গটি বর্ণনা করেন তিনি।

মাহমুদ আব্বাসের প্রথম বাংলাদেশ সফরে কি ধরনের চুক্তি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চুক্তিটি দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত হবে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে আন্তঃদেশীয় একটি কমিটি গঠন করা হবে। তারা একে অন্যকে সহযোগিতা করবে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোতে। প্রতি বছরই একটি বার্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হবে এবং দুই দেশের সম্পর্ককে কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ ধরনের বৈঠক দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে অনেকগুলো বিষয়ে মিল রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের যৌথ স্বার্থেও এই বৈঠকগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখবে।’  

ফিলিস্তিন কি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এমন প্রশ্নে এক বাক্যে উত্তর দেন ইউসুফ এস রামাদান। তিনি বলেন, ‘ভেরি মাচ’। কীভাবে বাংলাদেশ এবং ফিলিস্তিন সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গত বছর ডিসেম্বরে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং দুই দেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি বাণিজ্যিক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা করতে আমরা আগ্রহী। আমরা ধাপে ধাপে এগোবো এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এটি সম্পন্ন হবে। ২০১৭ সাল দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বছর হবে।

ইসরায়েলি দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেম স্থানান্তর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের ‍উত্তরে রামাদান বলেন, ‘আমরা এখন গভীর পর্যবেক্ষণ করছি বিষয়টি। ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতিতে এগুচ্ছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ইসরায়েল দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করা হবে। এটা শুধু তিনিই নন, এর আগেও অনেকে বলেছেন। কিন্তু আপনারা জানেন বিষয়টি কত কঠিন। কারণ আপনি জানেন হোয়াইট হাউসের বাইরে আর ভেতরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আপনাকে ‘বাস্তবসম্মত’ হতে হবে। আপনি যখন হোয়াইট হাউসের বাইরে তখন স্বাভাবিকভাবেই চাইবেন ভোট সংগ্রহ করতে। তখন আপনি আপনার ইচ্ছামতো যা খুশি বলতে পারেন। কিন্তু তার (ট্রাম্প) মতো একজন মানুষের কাছ থেকে আমরা যেকোনো কিছু আশা করি।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমাদের প্রেসিডেন্ট খুবই পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, যদি আমেরিকা তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর করে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া ভেস্তে যাবে। এখন শান্তি প্রক্রিয়া যদি বন্ধ হয়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই অস্থিতিশীলতা মাথাচাড়া দেবে। এটা সবাই জানে। যদি তিনি (ট্রাম্প) এই দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করেন তার অর্থ হচ্ছে তিনি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী বিবেচনা করছেন, ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে নয়। তার এ পদক্ষেপ শুধু ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধেই যাবে না, বরং গোটা মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধেই যাবে। দৃশ্যমানভাবে এটা হয়তো ফিলিস্তিনের অংশ, কিন্তু মানসিকভাবে এটা সমগ্র মুসলিম বিশ্বের। তাই কেন এটা ইসরায়েলের হবে? শুধুমাত্র ট্রাম্প বলার কারণে!’

ওয়েস্ট ব্যাংকে ইসরায়েল ৫০০ থেকে ৭০০ বসতি নির্মাণের প্রস্তুতি নিয়েছে। এ বিষয়ে ফিলিস্তিনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১৯৬৭ সালে ইসরায়েল যখন ওয়েস্ট ব্যাংক এবং জেরুজালেম দখল করে তার পরবর্তী দশকগুলোতে নতুন করে ভূমি দখল খুব ধীরগতিতে চলেছে। কিন্তু ইসরায়েলের বর্তমান সরকার অর্থাৎ বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পরিমাণে এবং দ্রুত ভূমি দখল করছে। সেটাই শান্তি প্রক্রিয়ায় বারবার বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আপনি যদি ‍যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির শেষ বক্তব্যটি লক্ষ্য করেন তিনি খুব পরিষ্কার এবং সাহসী ছিলেন।

জন কেরিকে উদ্বৃত করে তিনি বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলকে বলেছি, আমরা বলেই যাব ভূমি দখল শান্তি প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় বাধা।’ কিন্তু এ কথাটি যদি শুরু থেকেই বলা হতো, যখন প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু তারা এটা বলেনি। তারা এ বিষয়ে শেষ ছয় মাসে বেশ সক্রিয় ছিল।’     

ইউসুফ এস রামাদান বলেন, “ফিলিস্তিনের মহান নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তিনি সেখানে দেয়া তার বিখ্যাত ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমার একহাতে জলপাইয়ের পাতা (শান্তি), অন্য হাতে ফিলিস্তিনের মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র ধারণ করে আছি। আমার হাত থেকে জলপাই পাতাটিই নিন।’ এর অর্থ হলো আমাকে অস্ত্র ধরতে বাধ্য করবেন না। এর পরই বিশ্বের অধিকাংশ দেশই পিএলওকে স্বীকৃতি দেয়। আসলে আপনি ফিলিস্তিনকে সমর্থন করছেন মানে ন্যায়ের পক্ষ নিচ্ছেন, যখন ইসরায়েলকে সমর্থন করছেন তখন অন্যায়কে সমর্থন দিচ্ছেন। এটা বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার যে কে অন্যায় করছে আর কে নির্দোষ। কার অধিকার আছে এবং কার নেই। কে দখলদার এবং কে এই দখলদারিত্বের শিকার। এটা আগে বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার ছিল না, এখন এটা পরিষ্কার। পৃথিবীর ৭০টি দেশ প্যারিসের কনফারেন্সে আমাদের সমর্থন জানিয়েছে যার বেশিরভাগই ইউরোপীয়।”

বাংলাদেশের পাসপোর্টে লেখা আছে ইসরায়েল ব্যতীত এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের প্রতিটি নারী, পুরুষ এবং শিশু এ কারণে বাংলাদেশকে চেনে। এটা আমরা অনেক বেশি গুরুত্ব দেই।’

ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে সব বাংলাদেশিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, আমরা কীভাবে ফিলিস্তিনে যেতে পারি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা সত্যিই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ফিলিস্তিন অভ্যন্তরীণ সঙ্কটে আছে। আমরা যদি কাউকে আমন্ত্রণ জানাতে চাই তাহলে আমাদের ইসরায়েলের দখলদার সেনাবাহিনীর অনুমতি নিতে হয়। কারণ তারা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যদি অনুমতি না দেয় তাহলে আমরা কাউকেই ফিলিস্তিনে পাঠাতে পারি না।’

এইউএ/ওআর/আরআইপি