ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

থেমে নেই মানব পাচার

প্রকাশিত: ০৩:৩১ এএম, ২৮ মার্চ ২০১৫

মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মানব পাচার চলছেই। এ কাজে দালালরা রুট হিসেবে ব্যবহার করছে কক্সবাজার জেলাকে। কারণ এখানে থেকে খুব সহজে সমুদ্রপথে পাড়ি দেয়া যায়। প্রথমে সারাদেশে থেকে লোক সংগ্রহ করে জড়ো করা হয়। এরপর সুযোগ বুঝে এখান থেকে পাচার করে দেয়া হয় মালয়েশিয়ায়। এর সাথে জড়িত স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি।

স্থানীয় এই প্রভাবশালীদের সহায়তায় জেলার মহেশখালী, রামু, উখিয়া-টেকনাফ উপকূল দিয়ে  মানব পাচার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সর্বশেষ সোমবার রাতে সেন্টমার্টিন চ্যানেলে মানব পাচার জাহাজের ক্রুসহ ৪০ জন মালয়েশিয়াগামীকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। একই দিন মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেলে ২০ মালয়েশিয়া যাত্রীসহ ট্রলার আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। র‍্যাবের অপর একটি টিম টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, রামুর বিভিন্ন এলাকায় গোপন অভিযানে ১১ জন চিহ্নিত দালালকে আটক করেছে। একদিকে চলছে প্রশাসনের টিলেঢালা ধড়পাকড় অভিযান, অন্যদিকে শক্তিশালী পাচারকারী সিন্ডিকেট মুহূর্তের জন্য পাচার কাজ বন্ধ না করে শত শত লোককে প্রতিদিন মালয়েশিয়ায় পাচার করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রামুর হিমছড়ি পেঁচারদ্বীপ হয়ে মেরিনড্রাইভ সড়কসহ টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর, মহেশখালী ও সেন্টমার্টিন চ্যানেলে এ মানব পাচার চলছে। তাদের খপ্পরে পড়ে অনেক পরিবার এখন নিঃস্ব। চলছে কান্নার রোল। স্বজনহারাদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠেছে।

মানব পাচারে জড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ, থানার ওসি, ফাঁড়ির আইসি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারাও। অসংখ্য মানুষ কাঙ্খিত স্বপ্ন বুকে বেঁধে অসীম সম্ভাবনা নিয়ে সাগরপাড়িতেই নিখোঁজ হয়ে যায়। আবার পাচার হওয়া অনেক যাত্রী দালালদের শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়ে না ফেরার দেশে চলে যায়। বুক ভাঙ্গা স্বপ্নের জবাবে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোতে শোকের মাতম চলছে।

এ পাচার কাজে জড়িত প্রভাবশালীদের মধ্যে রয়েছেন রামুর ধোয়াপালং গ্রামের হোছন আলীর ছেলে আবদুল করিম, তার ছেলে শফি প্রকাশ বাপ্পী, ধেছুয়াপালং গ্রামের মৃত আবদলু জলিলের ছেলে হামিদুল হক প্রকাশ কালাব ডাকাত (বর্তমানে র‍্যাবের হাতে আটক), সাহবুলু, ধোয়াপালংয়ের আবদুর রহমান প্রকাশ কইল্ল্যার বাপ, পেঁচারদ্বীপ গ্রামের মৃত আলী আহমদেও ছেলে ছুরুত আলম (ট্রলার মালিক), আবদুল গফুর, আবদুর রহমান চৌকিদারের ছেলে বেলাল চৌকিদার, মোহাম্মদ শফির ছেলে মোহাম্মদ জাবেদ, উখিয়ার জালিয়াপালং এলাকার নুরুল কবির, বহুল আলোচিত রেজিয়া আকতার রেবি প্রকাশ রেবি ম্যাডাম, মোহাম্মদ শফির বিলের বাসিন্দা সোলতান আহমদের ছেলে ছৈয়দ আলম প্রকাশ হাফিচ্যা, মৃত দুদু মিয়ার ছেলে নুর হোসেন প্রকাশ ভুলাইয়া, মোহাম্মদ কালুর ছেলে জাফর আলম, আবদুল বারির ছেলে শফিকুর রহমান প্রকাশ শফিন্যা, তার ছেলে আবদুল হক ও শাহ আলম।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, রামু, উখিয়া টেকনাফে তিন শতাধিক শ্রমিক নিয়োগ করে দালালরা পাচার কাজ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। নিয়োগকৃত শ্রমিকদের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার সরল মানুষের কাছে গিয়ে বিদেশি নানা প্রলোভন দেখিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া গমন মর্মে রাজি করানো। পরে তারিখ সময় ডাক পড়লে প্রতিনিধিরা মোটরসাইকেল, অটোবাইক, সিএনজি করে তাদের আশ্রয়স্থল ওই দুর্গম পাহাড়ে রাখে। রাত যখন গভীর হয় তখন উল্লিখিত উপকূল দিয়ে যাত্রী এনে জোয়ারের সময় ছোট নৌকায় তুলে সাগরের মাঝে গিয়ে অবস্থানরত বড় নৌকায় উঠিয়ে দেয়।

পাচারকারীদের হয়ে যারা কাজ করে তারা হলেন উখিয়ার এন্ডা মিয়ার ছেলে নাছির, ফারুকের ছেলে কলিম উল্লাহসহ আরও দিুই ভাই সহযোগী, বশির আহমদেও ছেলে হোসেন, এলাস হোসেন, সোলামাইনের ছেলে কামাল, জাকির হোসেনের ছেলে ছিদ্দিক আহমদ, ইনানীর জাকির হোসেনসহ অনেকেই। এদিকে র‍্যাবের অভিযানে রামুর ধেচুয়াপালংয়ের আবদুল জলিলের ছেলে হামিদুল হক প্রকাশ কালাব ডাকাত গ্রেফতার হওয়ায় এলাকায় সাধারণ জনগণ মিষ্টি বিতরণ করে।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার জসিম উদ্দিন কালাব ডাকাতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন, মানব পাচার রোধে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্তকাবস্থায় রয়েছে।

বিএ/আরআইপি