বিমানে আসছে নতুন রুট পরিকল্পনা
লোকসান কমাতে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট পরিকল্পনা ঢেলে সাজাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এতে লোকসানি রুটগুলো বন্ধ করা হবে। পাশাপাশি বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে লাভজনক রুটগুলোয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বহরের কলেবর বাড়াতে নতুন প্রজন্মের আরো তিনটি বোয়িং উড়োজাহাজ লিজ নেয়া হচ্ছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই লাভজনক রুটগুলোয় পর্যায়ক্রমে ফ্লাইট বাড়ানো হবে। বর্তমানে ঢাকা-দাম্মাম-ঢাকা রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চলছে। লাভজনক হওয়ায় এ রুট চালু রেখে ২৯ মার্চ থেকে কুয়েতকে সংযুক্ত করে ঢাকা-দাম্মাম-কুয়েত-ঢাকা রুটে সপ্তাহে আরো তিনটি বাড়তি ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বর্তমানে ঢাকা-জেদ্দা রুটে সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট চলছে। শিগগিরই এ রুটের ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়ে সপ্তাহে সাতটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইভাবে সৌদি আরবের রিয়াদেও ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে রুটটিতে সপ্তাহে ছয়টি ফ্লাইট চললেও শিগগিরই তা সাতটিতে উন্নীত করা হবে।
বাড়তি ফ্লাইট প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সৌদি আরবের প্রধান তিনটি শহরের সবক’টিতেই যাত্রী চাহিদা রয়েছে। এ কারণে এসব রুটে ফ্লাইট বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি আসন সক্ষমতা বাড়াতে সব রুটের ফ্লাইটই ওয়াইড বডি (বেশি আসনের) উড়োজাহাজ দিয়ে পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাভজনক রুটগুলোয় আসন সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে লোকসানি রুটগুলো। এর অংশ হিসেবে আগামী এপ্রিল থেকে বন্ধ করা হচ্ছে বিমানের ঢাকা-রোম-ঢাকা রুটটি।
জানা গেছে, শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীদের যাতায়াত বেড়েছে। যাত্রী চাহিদার এ সুযোগ কাজে লাগাতে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটেও ফ্লাইট বাড়াচ্ছে বিমান। বর্তমানে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট চলছে, যা ২৯ মার্চ থেকে বাড়িয়ে ১০টি করা হচ্ছে। যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে রুটটির আসন সক্ষমতা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিমান।
এদিকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমানের বহরে যুক্ত হচ্ছে ৭৪ আসনবিশিষ্ট দুটি ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ। উড়োজাহাজ দুটি বহরে যুক্ত হলে অভ্যন্তরীণ রুটের পাশাপাশি সেগুলো রিজিওনাল (আঞ্চলিক) রুটে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান। এর অংশ হিসেবে ঢাকা-কলকাতা রুটের ফ্লাইটগুলো বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজের পরিবর্তে জ্বালানি সাশ্রয়ী ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ দিয়ে পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি ঢাকা-কলকাতা রুটের বর্তমান সাপ্তাহিক ফ্লাইট সংখ্যা ১২ থেকে বাড়িয়ে ১৪টি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটের ফ্লাইটের ক্ষেত্রে বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজই ব্যবহার করা হবে।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বিমানের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, লোকসানি রুটে ফ্লাইট চালু রাখা মানেই বিমানের বোঝা বাড়ানো। তাই লোকসানি রুটগুলো বন্ধের পক্ষে আমরা। পাশাপাশি লাভজনক রুটে ফ্লাইট বাড়িয়ে প্রতিষ্ঠানকে আরো লাভে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
রুট পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বহর পরিকল্পনায়ও পরিবর্তন আনছে বিমান। এর অংশ হিসেবে বহর থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে ব্যয়বহুল পুরনো দুটি এয়ারবাস-৩১০ উড়োজাহাজ। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের তিনটি বোয়িং উড়োজাহাজ লিজ নেয়া হচ্ছে। এগুলো হলো— ৪১৯ আসনের বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর, ৩১৯ আসনের বোয়িং-৭৭৭-২০০ ইআর এবং ১৬২টি আসনের বোয়িং-৭৩৭-৮০০। উড়োজাহাজ লিজ নিতে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দূরপাল্লার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম উড়োজাহাজ তিনটি দিয়ে আন্তর্জাতিক রুটের বাড়তি ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করবে বিমান।
এছাড়া আগামী ৬ এপ্রিল থেকে একযোগে বন্ধ থাকা অভ্যন্তরীণ পাঁচটি রুটে ফ্লাইট শুরু করবে বিমান। এরই মধ্যে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বিমান। অভ্যন্তরীণ রুটগুলোর মধ্যে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সপ্তাহে ছয়টি ফ্লাইট, ঢাকা-যশোরে পাঁচটি, ঢাকা-রাজশাহীতে তিনটি, ঢাকা-সৈয়দপুর ও ঢাকা-বরিশালে দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করবে জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইনস। এর বাইরে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেটে সপ্তাহে ২৫টি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনার রয়েছে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেটে কানেক্টিং ফ্লাইট যথারীতি চালু থাকবে। প্রয়োজনে এসব কানেক্টিং ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
উড়োজাহাজ সংকট ও ক্রমাগত লোকসানের কারণে ২০০৭ সালের বিভিন্ন সময়ে অভ্যন্তরীণ সাতটি রুটের মধ্যে চারটিই বন্ধ করে দেয় বিমান। বন্ধ করে দেয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা-যশোর রুটে সপ্তাহে পাঁচটি, ঢাকা-বরিশাল রুটে দুটি ও ঢাকা-রাজশাহী-সৈয়দপুর রুটে প্রতিদিন একটি করে ফ্লাইট চালু ছিল। পরবর্তীতে ২০১২ সালে বহরের এফ-২৮ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন অনুপযোগী ঘোষণা করে বিমান। এর ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ফ্লাইটও বন্ধ হয়ে যায়।
এসআরজে