শিল্পখাত পরিদর্শনে শিগগিরই সমন্বিত নীতিমালা
শিল্পখাতের কল-কারখানা পরিদর্শনের সময় বিদেশিদের ফরমায়েশ মেনে নেয়ার চাপ কমাতে কৌশল খোঁজা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে পোশাক খাতসহ ৪৫ খাতের জন্য সমন্বিত নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। তৈরি পোশাক খাতে প্রণীত ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের বাইরে এ নীতিমালা তৈরি হবে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহায়তায় ইতিমধ্যে এর খসড়াও প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন চলছে এর যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। শিগগিরই নীতিমালাটি চূড়ান্ত হবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বর্তমানে শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কোনো সমন্বিত নীতিমালা নেই। ফলে বিদেশি ক্রেতারা কারখানাগুলোতে নিজস্ব মানদণ্ড চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন। বাধ্য হয়ে পরিদর্শকদের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের মেনে নিতে হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের হয়রানি কমাতেই শিল্পকারখানায় সমন্বিত পরিদর্শন নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শ্রম অধিকার রক্ষার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, বিদ্যমান আইন আরও দক্ষভাবে বাস্তবায়ন, পোশাক খাত পুনর্গঠন, সব খাতের কলকারখানার তথ্য হালনাগাদ, দুর্ঘটনার তথ্য অন্তর্ভুক্তি, সমন্বিত তথ্যভাণ্ডার প্রস্তুতকরণ, পরিদর্শন ফলাফলসহ শিল্প খাতের বিস্তারিত তথ্যের মাধ্যমে শ্রমস্বার্থ নিশ্চিত করা এবং দেশের সব কলকারখানায় কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন এ নীতিমালা তৈরির অন্যতম উদ্দেশ্য।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের বাইরে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর এ সমন্বিত নীতিমালা করছে। শিল্পোদ্যোক্তাদের হয়রানি ও ভোগান্তি দূর করে স্বাধীনভাবে সংস্কারকাজ প্রতিপালন করতে দেয়াই হচ্ছে এর মুখ্য উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, বর্তমানে নানা কারণেই আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। চাপের মুখে সরকার ও শিল্পোদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার অনধিকার হস্তক্ষেপও সইতে হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজস্ব শিল্প সুরক্ষাও প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। অন্যদিকে নিজস্ব নীতিমালা না থাকার কারণেই অ্যাকোর্ড ও অ্যালায়েন্সকে মানদণ্ড অনুযায়ী পরিদর্শনের অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের চাপিয়ে দেয়া অনেক বিষয় আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। নিজস্ব নীতিমালা থাকলে আমরা নিজেরাই শিল্পমান যাচাই-বাছাই করতে পারতাম। তিনি মনে করেন, পরিদর্শন অধিদফতরকে আরও শক্তিশালী করতেই এ নীতিমালা অত্যাবশ্যক।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পরিদর্শন নীতিমালা যাচাই-বাছাইয়ে গত মাসে একটি কমিটি গঠন করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ এ কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সূত্র আরও জানায়, খসড়াটি যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় সংযোজন ও বিয়োজনের পর বাংলা ভাষায় রূপান্তর করা হবে। এসব কাজ শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ বলেন, এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। আবার পৃথকভাবে শুধু পরিদর্শনের কাজে এ ধরনের সমন্বিত নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা কতটকু সেটিও বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে আমরা আইএলওর সঙ্গে শলাপরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ দেশে এখন পৃথক পৃথক শ্রম আইন, শিশুশ্রম আইন, গৃহশ্রমিক আইনসহ শিল্পকারখানা সম্পর্কিত বিভিন্ন আইন রয়েছে। তবে বিশ্বের কোথাও আলাদাভাবে পরিদর্শন আইন আছে কিনা এবং না থাকলে বাংলাদেশে এর প্রয়োজন কতটা বাস্তবসম্মত এ দিকটাও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সমন্বিত নীতিমালা করতেই যদি হয়, তাহলে আমরা আরও সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে এগোতে চাই। বর্তমানে শুধু পোশাক খাতের জন্য একটি পরিদর্শন নীতিমালা রয়েছে। যদিও দেশে ৪৫টিরও বেশি শিল্প খাত রয়েছে। ফলে দেশের সব শিল্প খাতের জন্য সমন্বিত আধুনিক, কার্যকর ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধ শ্রম পরিদর্শন নীতিমালা তৈরির বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে সব খাতের পরিদর্শন প্রতিবেদনও সবার জন্য প্রকাশ করার উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রাথমিক খসড়ায় পরিদর্শকদের কার্যপরিধিসহ অধিদফতরের কর্তৃত্ব নির্দিষ্ট করা হচ্ছে।
এ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে থাকছে শিল্পোদ্যোক্তাদের করণীয়, পরিদর্শনসংক্রান্ত সরকার-মালিক-শ্রমিকের ত্রিপক্ষীয় কার্যক্রম ও তিন পক্ষের সমন্বয় কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা। নীতিমালায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া বিষয়ের মধ্যে থাকছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা। সূত্র : যুগান্তর
বিএ/আরআইপি