বন্ধের আশংকায় ১১ তেল রিফাইনারি কোম্পানি
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও সরকার এখন পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম কমায়নি। উল্টো আমদানি শুল্ক না কমিয়ে সরকার স্থানীয় রিফাইনারি থেকে কেনা তেলের দাম হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে দিয়েছে। এতে যে কোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ১১টি স্থানীয় তেল রিফাইনারি কোম্পানি। জানা গেছে, তেল ভেদে প্রতি লিটারে দাম কমেছে ৮ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত। আর ৩ মাস আগের তারিখে নতুন এ দর কার্যকর দেখানো হয়েছে। স্থানীয় রিফাইনারি কোম্পানিগুলো এই অবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রিফাইনারি মালিক জানান, তারা ২-১ দিনের মধ্যে এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। তেলের দাম না কমানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য ইতিমধ্যে আবেদন করেছেন বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, সরকার যদি তাদের কথা না শোনে তাহলে তারা আদালতের আশ্রয় নেবেন। তবে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকার রিফাইনারিগুলো থেকে কেনা জ্বালানি তেলের দাম কমালেও তাদের কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ নানা ধরনের সুবিধা দেবে। এতে তাদের লোকসান পুষিয়ে যাবে। তাতে আগের চেয়ে বেশি লাভ হবে।
এদিকে তেলের দাম আকস্মিক এত কমিয়ে দেয়ায় রিফাইনারিগুলো ফুঁসে উঠেছে। তাদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের কাঁচামাল কনডেনসেটের (প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজাত) দাম কমেছে খুবই অল্প। কিন্তু তেলের দাম কমানো হয়েছে তার চেয়ে বেশি। ফলে তাদের বিপুল লোকসান গুনতে হবে। এমনকি ২-১টি কোম্পানি ছাড়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত ৮ মার্চ মঙ্গলবার জ্বালানি মন্ত্রণালয় তেলের দাম কমানো সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করে। প্রজ্ঞাপনে তেলের দাম কমানোর এ সিদ্ধান্ত ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে তাতে রিফাইনারি থেকে কেনা তেলের দাম কমানো নয়, বরং সরকারিভাবে বিক্রি করা তেলের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
তাদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের সুবিধা দিতে হলে বিপিসির তেলের দাম কমাতে হবে। তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যে হারে কমেছে, তাতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে (বিপিসি) এই মুহূর্তে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪ টাকা কমানো উচিত। তিনি বলেন, তেলের দাম না কমিয়ে সরকার ইতিমধ্যে তার প্রতিশ্র“তি ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। এখন লুটপাট চালাতে দেশীয় শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে নেমেছে। তার মতে, মূলত তেল চুরি, দুর্নীতি আর লুটপাটের জন্যই বিপিসি ইচ্ছা করেই তেলের দাম কমাচ্ছে না। জ্বালানি বিভাগের প্রজ্ঞাপনে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ টাকা ৯৪ পয়সা; যা আগের চেয়ে ৮.১৪ শতাংশ কম। কেরোসিনের দাম ৯.২৩ শতাংশ কমিয়ে ৫৫ টাকা ৯২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। পেট্রলের দাম কমেছে ২৯ টাকা ২৮ পয়সা বা ৩৪.২১ শতাংশ। নতুন দাম হয়েছে ৫৬ টাকা ২৯ পয়সা। অকটেনের দাম লিটারে ২৯ টাকা ৯৮ পয়সা বা ৩৩.৯৭ শতাংশ কমে ৫৮ টাকা ২৭ পয়সা হয়েছে। মঙ্গলবার তেলের দাম কমানোর প্রজ্ঞাপনটি জারি হওয়ার পরপরই সব রিফাইনারির পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়। সূত্র : যুগান্তর
এসএইচএ/আরআইপি