ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

শিক্ষার্থী ও পর্যটক ভিসায় শ্রমিক যাচ্ছে বিদেশে

প্রকাশিত: ০৩:১৬ এএম, ১০ মার্চ ২০১৫

শিক্ষার্থী ও পর্যটক ভিসায় প্রতিদিন বিদেশ যাচ্ছে অসংখ্য বাংলাদেশী শ্রমিক। শিক্ষার্থী ভিসায় যারা বিদেশ যাচ্ছে তাদের অধিকাংশই নিরক্ষর বা স্বল্প শিক্ষিত। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের কোনো ধরনের যোগ্যতাও তাদের নেই। বিদেশী কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফারলেটার বা কাগজপত্র তাদের কাছে পাওয়া যায় না।

একইভাবে পর্যটক ভিসায় যারা যাচ্ছে তাদেরও পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-ব্যবহার, কথা-বার্তা প্রমাণ করে না তারা প্রকৃতপক্ষেই ট্যুরিস্ট। যাচাইকালে তাদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থও পাওয়া যায় না। তাদের লাগেজ পরীক্ষা করে পৃথকভাবে মালেশিয়ান এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যাম্প ভিসা পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে ভিজিলেন্স টাস্কফোর্সের অভিযানে পাওয়া গেছে এমন চিত্র।

বিষয়টি মানবপাচার উল্লেখ করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি চিঠি দেয় ভিজিলেন্স টাস্কফোর্স। অবৈধ কর্মী প্রেরণ রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইদানীং সহজ-সরল নিরীহ অনেক বাংলাদেশী দালালচক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে কর্মের উদ্দেশে অবৈধ পথে বিদেশ যাচ্ছে। বিদেশে মানবেতর জীবন-যাপন করছে যা মানাব পাচারের নামান্তর। সরকার মানব পাচার রোধকল্পে মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করেছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩-এর আওতায় অপরাধগুলো বিচার করতে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিধান রয়েছে। নিরাপদ অভিবাসন ব্যবস্থাপনা পরিবীক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ১৭ সদস্যের একটি ভিজিলেন্স টাস্কফোর্স গঠন করেছে। যারা প্রতি মাসে নিয়মিতভাবে বিমানবন্দরে অভিযান পরিচালনা করে থাকে। আর এ ধরনের অপরাধের বিচার করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তা সত্ত্বেও দিন দিন বাড়ছে অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা।

প্রচারণার শিকার হয়ে অবৈধভাবে কিংবা অধিক খরচে বিদেশ গমন ঠেকাতে ভিজিলেন্স টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে ভিজিলেন্স টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনাকালে দেখা যায় অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ও পর্যটক ভিসা সংগ্রহ করে কর্মের উদ্দেশে বিদেশে লোক যাচ্ছে। তিন প্রকার (শিক্ষার্থী, পর্যটক ও চাকরী ভিসা) ভিসায় কর্মের উদ্দেশে অবৈধভাবে অসংখ্য কর্মী প্রতিদিন মালেশিয়ান এয়ারলাইনস, এয়ার এরাবিয়া এয়ারওয়েজ, বাংলাদেশ বিমান, মালিন্ডো এয়ারলাইন্স, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ইত্যাদি বিমানযোগে বিদেশ গমন করছে। এদের অধিকাংশই অভিবাসী আইনের ১৯ ও ২০ ধারা অনুসরণ না করে বিএমইটি কর্তৃক প্রদত্ত স্মার্টকার্ড ছাড়াই এমপ্লয়মেন্ট ভিসায় বিদেশ যাচ্ছে। শিক্ষার্থী ভিসায় যারা বিদেশ যাচ্ছে তাদের অধিকাংশই নিরক্ষর বা স্বল্প শিক্ষিত। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের কোনো ধরনের যোগ্যতাও তাদের নেই। বিদেশী কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফারলেটার বা কাগজপত্র তাদের কাছে পাওয়া যায় না। আর পর্যটক ভিসায় যারা যাচ্ছে তাদেরও পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা প্রমাণ করে না তারা প্রকৃতপক্ষেই পর্যটক। যাচাইকালে তাদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থও পাওয়া যায় না। শিক্ষার্থী ও পর্যটক ভিসায় যারা যাচ্ছে তাদের লাগেজ পরীক্ষা করে পৃথকভাবে মালয়েশিয়ায় এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যাম্প ভিসা পাওয়া যাচ্ছে। এসব কর্মী নেপাল, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়াকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে সরাসরি মালয়েশিয়া অনুপ্রবেশ করছে এবং তাদের কাছে তল্লাশি করে মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

চিঠিতে সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, জাল স্মার্টকার্ড প্রদর্শন করে বিমানবন্দরগুলোর ইমিগ্রেশন পার হয়ে বিদেশ গিয়ে অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অনেকে দেশে ফেরত আসছে। আবার কেউ কেউ পালিয়ে থেকে স্বল্প বেতনে কাজ করছে। অধিক অভিবাসন ব্যয়ে দালালচক্রের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ায় রেমিটেন্স লাভের বদলে তা হ্রাস পাচ্ছে। অনেকে সে দেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেল খাটছে। ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রমসহ অর্থনীতিতে একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে- যা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় খুবই উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে। চিঠিতে আরও বলা হয়, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন অনুযায়ী কোনো অপরাধ সংঘটিত হতে পারে এমন ক্ষেত্রে পুলিশ অপরাধ সংঘটনের এজহার দাখিলের আগে প্রতিরোধমূলক অনুসন্ধান পরিচালনা করতে পারে। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের অনুসন্ধানমূলক তৎপরতা অধিকতর জোরদার করা হলে স্টুডেন্ট ও ট্যুরিস্ট ভিসায় অবৈধভাবে বিদেশে কর্মী গমনরোধ করা সম্ভব হবে বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মনে করে। সূত্র : যুগান্তর

এসএইচএ/আরআইপি