ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

চোরাচালান : নজরদারিতে বিদেশি কূটনীতিক ও ভিআইপিরা

প্রকাশিত: ০৫:০০ এএম, ০৭ মার্চ ২০১৫

বিমানে স্বর্ণ, মুদ্রা ও ডলার চোরাচালানের অভিযোগ উঠেছে এবার বিদেশি কূটনীতিক ও ভিআইপিদের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ২৭ কেজি স্বর্ণসহ উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি ইয়ং ফন ন্যাম আটকের পর নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে চোরাচালানের ঘটনায় দেশীয় চক্রের সাথে বিদেশি নাগরিকদের সংশ্লিষ্টতার কথা জানা গেলেও এবারই প্রথম কূটনীতিক পর্যায়ের কোনো লোক স্বর্ণসহ আটক হলেন।

এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, কিছুদিন থেকে বিদেশি কয়েকটি দেশের নাগরিক, ভিআইপি ও কূটনৈতিক পর্যায়ের লোক নজরদারিতে ছিলেন। এরই অংশ হিসেবে আটক হন উত্তর কোরিয়ান সেকেন্ড সেক্রেটারি পর্যায়ের ওই কূটনীতিক। তার আটক হওয়ার পর বিষয়টিই স্পষ্ট করলো স্বর্ণ-চোরাচালানের সাথে এই পর্যায়ের লোকজনও জড়িত রয়েছেন।

শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভিআইপি ডেলিগেট ও বিদেশি কূটনীতিক ও তাদের সাথে চলাচলকারী হোমরা-চোমরা পর্যায়ের লোকজনদের ওপর নজরদারি চলছিল। কোরিয়ান কূটনীতিক আটকের পর গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।

বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শুল্ক বিভাগ, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ও বিমানবন্দর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কূটনীতিক ও ভিআইপিদের আসা যাওয়ার সময় সাধারণত তল্লাশি চালানো হয় না। বিশেষ করে কূটনীতিক পর্যায়ের লোকদের নিরাপত্তার বিয়ষটি আরও বেশি গুরুত্বসহ দেখা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানায়, আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘ভিয়েনা কনভেনশন’ অনুযায়ী কূটনীতিকদের দেহ বা তাদের সাথে আসা লোকদের লাগেজ তল্লাশি করা বা আটক করা হয় না। সাধারণ যাত্রীদের ক্ষেত্রে যে ধরনের কড়াকড়ি আরোপ করা হয় কূটনীতিকদের ক্ষেত্রে তা না করে বরং সব সময়ই বাড়তি সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে।

কিন্তু এই সুযোগ নিয়ে কূটনীতিকদের ছত্রছায়ায় একটি অপরাধীচক্র আন্তর্জাতিকভাবে স্বর্ণ-চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার এই অপরাধী চক্র স্বর্ণ-চোরাচালান ও ডলার পাচারের মতো অপরাধ করছে।

কূটনীতিকরা ও সাথে আসা যাওয়ার সফর-সঙ্গীরা ন্যায্য সুবিধার বাইরে কূটনীতিক বলে ক্ষমতার অপব্যহার করছে। এমন তথ্য শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের কাছে ছিল বলেই সিলেক্টেড কয়েকজন কূটনীতিকের ওপর কয়েক মাস থেকে নজরদারি ছিল।

এই নজরদারির কারণেই গত বৃহস্পতিবার রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এপিবিএন ও শুল্ক বিভাগের নজরদারি পেরিয়ে যেতে পারেননি উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি ইয়ং ফন ন্যাম।

তল্লাশি চালিয়ে ২৭ কেজি স্বর্ণসহ ওই কূটনীতিককে এপিবিএন ও শুল্ক বিভাগ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে আটক করে। পরে অবশ্য ভিয়েনা কনভেনশনে স্বাক্ষরিত কূটনীতিক নিরাপত্তা চুক্তির কারণে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে ছেড়ে দেয়া হয় আটক ওই কূটনীতিককে।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পূর্বে থেকে নজরদারি এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তিতে ওই কূটনীতিককে আটক করা হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার শুল্ক বিভাগ বা এপিবিএন এর নেই। আর সে কারণেই ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আটক ওই কূটনীতিককে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিমানবন্দরে কর্মরত শুল্ক বিভাগের সহকারি কমিশনার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই একটি অপরাধী চক্রের উপর নজরদারি চলছিল। পরে জানা গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেলো ওই অপরাধী চক্রের সাথে কূটনীতিকদেরও যোগসাজশ রয়েছে।

তিনি বলেন, ২৭ কেজি স্বর্ণসহ উত্তর কোরিয়ান ওই কূটনীতিক আটক গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়টিকেই প্রমাণিত করে যে স্বর্ণ-চোরাচালান, মুদ্রা ও ডলার পাচারের মতো অপরাধকর্মের সাথে এক শ্রেণির অপরাধপ্রবণ কূটনীতিক জড়িত। এসব কারণে এখন কূটনীতিকদের উপর নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এপিবিএন-এর এক সিনিয়র কর্কমর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কূটনীতিকের সাথে একাধিক সফরসঙ্গী আসা যাওয়া করেন। তারাও কূটনীতিকদের মতো তল্লাশির আওতামুক্ত থাকেন। এসময় তাদের সাথে থাকা লাগেজের মধ্যে কী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানা সম্ভব হয় না।

এপিবিএন-এর ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আবার দেশের ভিআইপি লোকজন ও তাদের আত্মীয়-স্বজনও প্রতি সপ্তাহে একাধিক দিন বিদেশে যাতায়াত করেন। তারা তল্লাশির আওতায় থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে বেড়িয়ে যান।

গত চলতি সপ্তাহের একটি ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার একজনের লাগেজ চেক করতে চাইলে তিনি নিজেকে সরকার দলীয় এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ট আত্মীয় বলে পরিচয় দেন। এরপরেও তল্লাশির চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিকভাবে চাকুরি খাওয়ার হুমকিও দেন তিনি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এভাবেই অনেকে প্রভাব খাটিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এটা বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে বলে জানান তিনি।

বিমানবন্দর এপিবিএন সূত্রে জানা গেছে, অনেক কূটনীতিক স্বর্ণ-চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত এমন তথ্য অনেকদিন ধরেই পাচ্ছেন তারা। কূটনীতিকরা বিশেষ সুবিধা পেয়ে আসছেন।

অনেক সময় চোরাচালানের সাথে তাদের কারো কারো সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও শিষ্টাচার রক্ষার স্বার্থে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। আর এই সুযোগে বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে স্বর্ণ চোরাচালান ও ডলার পাচার করে অসাধু কূটনীতিকরা।

এপিবিএন-এর সহকারী পুলিশ সুপার ও মিডিয়া অফিসার তানজিনা আক্তার জাগোনিউজকে বলেন, ‘আটক কোরিয়ান কূটনীতিকের লাগেজ তল্লাশি করে ২৭ কেজি স্বর্ণ এবং অলঙ্কার পাওয়া গেছে। তিনি শুধু স্বর্ণ আনার জন্যই যে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন এ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট।

তাছাড়া পাসপোর্টে দেখা গেছে ওই কূটনীতিক ঘন ঘন বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। তল্লাশির সময় তিনি এপিবিএনকে যে ডকুমেন্ট দেখিয়েছেন পরে চেক করে দেখা গেছে তাও ভূয়া।

শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক মইনুল খান জাগোনিউজকে বলেন, অনেক কূটনীতিক বিশেষ সুবিধার বিষয়টিকে পুঁজি করে অপরাধী চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে চোরাচালানের কাজ করছে।

অনেকদিন ধরেই সন্দেহভাজন কূটনীতিকদের উপর নজরদারি চলছে দাবি করে মইনুল ইসলাম আরও বলেন, কোরিয়ান কূটনীতিক স্বর্ণসহ আটকের পর কূটনীতিক ও ভিআইপিদের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

জেইউ/বিএ/এমএস