পুড়েছে খাদিজার নতুন সংসারও
নতুন সংসার। স্বামী মুরশিদুল ইসলাম ফার্নিচারের দোকানে কাজ করেন। সংসার এখনো গুছাতে পারেননি খাদিজা। মা-বাবার সঙ্গে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে থাকতেন তিনি। বাবার কেনা বাসার একটি কক্ষেই বসবাস করে আসছিলেন খাদিজা। কিন্তু গৃহস্থালির যা কিছু ছিল সবই আগুনে পুড়ে গেছে।
রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, খাদিজার মা মিনা বেগমের গলা জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। পাশেই মাদরাসা পড়ুয়া কিশোর তিন ভাইও নীরবতা ভেঙে কেঁদে উঠছে বার বার।
মা মিনা বেগম বলেন, জামাইকে আমি এখন কি উত্তর দেবো। ওরা এখানে থাকতে চায়নি। চেয়েছিল মহাখালী থাকতে। কিন্তু ওখানে বেশি ভাড়া হওয়ায় এখানেই আমাদের একটা ঘরে থাকার বন্দোবস্ত করেছিলাম। ঘর থেকে পরনের একটা কাপড় শুধু নয় একটা সুতাও বের করতে পারিনি। সব আগুনে পুড়ে গেছে।
পাশেই খাদিজার বাবা রমজান আলী। কাঁচামালের ব্যবসা করেন কারওয়ানবাজারে। তিন ছেলেমেয়ে, স্ত্রী ও জামাইকে নিয়েই সংসার। দুই ছেলে মুজাহিদ ও সোহেল টিএন্ডটি কলোনির মোশাররফ বাজারের মাদরাসায় পড়াশুনা করছে। ছোট ছেলে জুনায়েদ মাত্র হাঁটতে শিখেছে।
তিনি বলেন, ‘তিন লাখ টাকা দিয়ে লুৎফর রহমান নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২টি ঘর কিনেছিলাম। একটাতে আমরা থাকতাম। আরেকটায় মেয়ে জামাই। আগুনে সব পুড়ে ছাই। এখন থাকন খাওনের কোনো টাকাও নাই।’
রমজান আলী বলেন, ব্যবসার পুঁজি বলতে যে কয়টা টাকা ছিল সব ঘরেই ছিল। একটি টাকাও বের করতে পারিনি। লাখ টাকার মতো তার পুড়ে গেছে বলে দাবি তার।
পাশেই রিকশাচালক মিন্টু মিয়া। বলছিলেন, ‘আল্লাহও আমাগো আগুনে পুইড়া ছাই কইরা দিলো। মইরা গেলেও বাইচ্চা যাইতাম। এ পোড়া ঘরদুয়ার ঠিক করবো কেমনে।’
তিনি বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল ঘাটাইলে। স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে পেটের দায়ে ঢাকায় আসি। দিন খোরাকি চলে রিকশা চালিয়ে।
মিন্টু মিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময়েই চোখ পড়ে ষাটোর্ধ্ব ইদ্রিস মিয়ার দিকে। চোখে পানিতে শব্দহীন কান্না ইদ্রিস মিয়ার। পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলেন কাকা তোমার ঘরও কি গেছেনি আগুনে? হাউ মাউ করে কেঁদে উঠেন ইদ্রিস মিয়া। ‘বাবা রে! বেঁচে থাকার সম্বল বলতে যা ছিল সব শেষ।’
জেইউ/জেএইচ/পিআর