অভিজিত হত্যায় ফারাবী জড়িত: র্যাব
‘মুক্তমনা’ ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আটক শফিউর রহমান ফারাবী জড়িত বলে জানিয়েছেন র্যাব। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে সোমবার ভোরে আটকের পর ফারাবীকে র্যাব হেড কোয়াটারে নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। এরপর সেখানে দুপুর ২টায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উয়িং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
মুফতি মাহমুদ জানান, ফারাবী নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর-এর সঙ্গে জড়িত। ২০১০ সাথে বিভিন্ন নাশকতা ও ভাঙচুরের মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এক মাস পর জামিনে তিনি মুক্ত হন।
মুফতি মাহমুদ খান ফারাবীর পরিচয় সম্পর্কে বলেন, বি-বাড়ীয়া জেলার সদর থানাধীন বড়ভিলা কুমারশীল মোড় কালাইশ্রী পাড়া গ্রামে মৃত ফেরদৌসুর রহমানের ছেলে শফিউর রহমান ফারাবী। বয়স আনুমানিক ২৯ বছর। ১৯৮৬ সালে জন্ম। ১৯৯৬ সালে প্রাথমিক স্তর শেষে ২০০১ সালে এসএসসি ও ২০০৫ সালে ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৫-২০০৬ সেশনে পদার্থ বিজ্ঞানে ভর্তি হয়। বর্তমানে সে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ বর্ষে অধ্যায়ন করছে।
তিনি বলেন, গত ৩/৪ বছর যাবৎ ব্লগার হিসেবে বিভিন্ন ব্লগে ইসলামিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে লেখা-লেখি করে বেশ জনপ্রিয়তা ফারাবী। এরই মধ্যে তার মতাদর্শের বিপরীতে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের বিভিন্ন ব্লগের বিরোধিতাও করতে থাকে।
এভাবে থাবা বাবা (ব্লগার রাজীব), আসিফ মহিউদ্দিন, অভিজিত রায়, তসলিমা নাসরিন, দাড়ি-পাল্লা ধমাধম, দিগম্বর-পয়গম্বর, সানতুনু মহাপাত্র, অগ্নিবীন, আল্লামা শয়তান (মশিউর রহমান), সানতুনু আদিম, প্যানগান দেবতা এবং হিন্দু যোদ্ধা নামক ব্লগারদের সাথে ধর্ম নিয়ে মত পার্থক্য সৃষ্টি হয় ফারাবীর। যা বিভিন্ন সময় তারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন ব্লগে মন্তব্যের তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থাবা বাবা ব্লগের ব্লগার রাজিব হায়দার মিরপুরে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়। পূর্বে ফেসবুকে রাজীব হায়দার এর সাথে তার ব্লগে মন্তব্যের কড়া তর্ক-বিতর্কে প্রমান থাকায় এবং নিহত রাজীবের জানাজায় অংশগ্রহনরত ইমামকে খুনের হুমকি দেয়ায় ফারাবীকে গ্রেফতার করে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে সে পুনরায় বেরিয়ে আসে।
র্যাবের এ গণমাধ্যম কর্মকর্তা বলেন, অভিজিৎ রায়ের ইসলামের বিরুদ্ধে লেখালেখি ৪/৫ বছর পূর্বে ফেইসবুকে জানতে পারে। এরপর থেকে সে অভিজিত এর ইসলাম বিরোধ লেখার প্রতিবাদে মন্তব্য লিখে প্রতিবাদ জানানোর কাজটি প্রায় প্রতিনিয়তই করতো।
ফারাবীর বরাতে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে ফেইসবুক বন্ধু সিহাব, রানা চৌধুরী, মেজবাহ কমেন্টস করে ফারাবীকে টিভি দেখতে বলে। তখনই সে প্রথম জানতে পারে ব্লগার অভিজিৎ ও তার স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। এরপর সে বিভিন্ন অনলাইন ও টিভিকে এ সংক্রান্ত খবর দেখে অভিজিতের নিহতের খবর নিশ্চিত হয়।
এর ২/১ দিন পরে পত্রিকায় অভিজিত হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্তার কথা ছাপা হলে তার মা তাকে বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে বলে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফারাবী জানায়, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সে কিংবা তার পরিচিত কেহ জড়িত নয়। তবে অভিজিতের সাথে ব্লগের পরিচয় থাকলেও হত্যাকাণ্ডে অন্য কারণ হতে পারে বলে তার ধারনা।
গ্রেফতারের ব্যাপারে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, অভিজিৎ রায়কে হত্যার ২ ঘন্টার মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে খুনের দায় স্বীকার করে আনছারুল্লাহ বাংলা সেভেন নামক সংগঠন। এ প্রেক্ষিতে অভিজিতের ফেসবুক পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, শফিউর রহমান ফারাবী নামক এক যুবক তাকে বিভিন্ন সময়ে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। অভিজিতের বাবার দাবি, দেড় বছর ধরে ফেসবুকে তার সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল শফিউর রহমান ফারাবী।
গত এক বছর পূর্বের ফারাবীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখা যায় যে, ফারাবী তার মান্নান রাহী নামক এক ফেসবুক ফ্রেন্ডকে বলে যে, "অভিজিৎ রায় আমেরিকা থাকে। তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে তখন তাকে হত্যা করা হবে।"
এছাড়াও সে তার অন্য এক ফেসবুক ফ্রেন্ডকে অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী ও কন্যাসহ একটি ছবি পোষ্ট করে তাদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে লেখে যে, "এটাই হলো অভিজিৎ রায়, তার স্ত্রী বন্যা আহমেদ ও তার মেয়ের ছবি, এরা সবাই আমেরিকার Louisiana প্রদেশের new orleans city তে থাকে।
সর্বশেষ অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর পরই ফারাবীকে তার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড অভিজিতের রক্তাক্ত ছবি পাঠিয়ে বলে যে, "ছবি পাইছেন কি" উত্তরে ফারাবী ছবি পেয়েছে বলে জানায়।
এরপর উক্ত ফেসবুক ফ্রেন্ড ফারাবীর অনুভূতি জানতে চাইলে সে বলে যে, "আমি গ্রেফতার হবো কাল পরশুর মাঝে।"
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এসব বিষয় বিবেচনায় প্রতীয়মান যে ব্লগার ফারাবী অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ‘মুক্তমনা’ ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ব্লগার ও লেখক প্রকৌশলী ড. অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যাকে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৩নং গেটের সামনে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে জখম করে। গুরুতর আহতবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর রাত সোয়া ১০টার দিকে তিনি মারা যান।
জেইউ/এআরএস/আরআই
সর্বশেষ - জাতীয়
- ১ জামুকা-মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন
- ২ শাহজালালে লাউঞ্জ চালু করায় প্রশংসা করলেন বিমান উপদেষ্টা
- ৩ সংবিধান সংশোধনের একমাত্র অধিকার পার্লামেন্টের: হাসান আরিফ
- ৪ পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন জলবায়ু অর্থায়নের আহ্বান জানালো বাংলাদেশ
- ৫ ১০ ডিসেম্বর থেকে প্রবাসীদের পাসপোর্ট পৌঁছানো হবে: আইন উপদেষ্টা