পিলখানা ট্র্যাজেডির ৬ বছর
পিলখানা ট্র্যাজেডি’র ষষ্ঠ বার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের এই দিনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৭ জন কর্মকর্তা শহীদ হন। তৎকালীন বিডিআরের কতিপয় বিপথগামী সদস্য নির্মমভাবে তাদের হত্যা করে।
সেদিন সকাল ৯টা ২৭ মিনিটের দিকে বিজিবির বার্ষিক দরবার চলাকালে দরবার হলে ঢুকে পড়ে একদল বিদ্রোহী সৈনিক। এদের একজন তৎকালীন মহাপরিচালকের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। এরপরই ঘটে যায় ইতিহাসের সেই নৃশংস ঘটনা। বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। পুরো পিলখানায় এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চারটি প্রবেশ গেট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশেপাশের এলাকায় গুলি ছুঁড়তে থাকে তারা।
বিদ্রোহীরা দরবার হল ও এর আশপাশ এলাকায় সেনা কর্মকর্তাদের গুলি করতে থাকে। তাদের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়তে থাকেন সেনা কর্মকর্তারা।
ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর এ বিদ্রোহের অবসান হয়। পিলখানা পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তরে। পরে পিলখানা থেকে আবিষ্কৃত হয় গণকবর। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের লাশ।
৩৬ ঘণ্টার এ হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, একজন সৈনিক, দুই সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ বিজিবি সদস্য ও পাঁচ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।
পিলখানায় এই বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে যায়। শুরু হয় বিডিআর পুনর্গঠনের কাজ। বিডিআরের নাম, পোশাক, লোগো ও সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করা হয়। বিডিআর-এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরিবর্তন করা হয় বিদ্রোহের আইন।
২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন স্থানে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে মহানগর তৃতীয় দায়রা জজ ড. আক্তারুজ্জামান পিলখানা হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ২৭৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ১১৯টি ফৌজদারি আপিল, ১৪১টি জেল আপিল ও ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য একটি ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছে।
খালাসপ্রাপ্ত ২৭৮ জনের মধ্যে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিচারিক আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ৬৫৪ জন ও আসামিদের পক্ষে ২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে ৫৩৮ জন তাদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী পেশ করেছেন।
পিলখানা ট্রাজেডির ষষ্ঠ বার্ষিকীর দিনটিকে শাহাদাত বার্ষিকী হিসেবে পালন করবে বিজিবি। দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদ ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফেরাত কামনায় পিলখানাসহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সব রিজন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন হবে। বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
বিজিবি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রতিনিধি, তিন বাহিনীর প্রধানগণ (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় পিলখানার বীরউত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, শহীদ ব্যক্তিবর্গের নিকটাত্মীয়গণ, পিলখানায় কর্মরত সব অফিসার, জেসিও, অন্যান্য পদবীর সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করবেন।
এছাড়াও পিলখানা ট্রাজেডির ষষ্ঠ বার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে।
এসআরজে