ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

মহাসড়কে নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের গলদঘর্ম

প্রকাশিত: ০৩:৩২ এএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালে প্রতিদিনই মহাসড়কে ঘটছে নাশকতা। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। হামলার ঘটনা ঘটছে নির্বিচারে। এতে প্রাণ যাচ্ছে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের। আহত হচ্ছে অনেকে। বাধ্য হয়ে মহাসড়কের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে আনসার-ভিডিপি। টহল দিচ্ছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদস্যরা। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পুলিশের অনুরোধে রাতে বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন পরিবহন মালিকরা।

মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার মূল দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের। তবে নাশকতা মোকাবিলা তো দূরের কথা, পুলিশের আলাদা এই ইউনিট একেবারেই অক্ষম তাদের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও। কারণ হাইওয়ে পুলিশ নিজেরাই আছে নানা সংকটে।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, হাইওয়ে পুলিশের নেই পর্যাপ্ত জনবল, থানা ও ফাঁড়ি। নেই যানবাহন, রেকার, অ্যাম্বুল্যান্সসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। নেই মামলা তদন্তের ক্ষমতাও। এর মধ্যে চলতি নাশকতা তাদের কাছে `মরার উপর খাঁড়ার ঘা` হয়ে উঠেছে। এক বছর আগে হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার কোনোটিই এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। শেষ হয়নি নতুন অর্ধশত থানা ও ফাঁড়ি স্থাপনের কাজও।

পুলিশ, হাসপাতাল, পরিবহন ব্যবসায়ী, ভুক্তভোগীসহ বিভিন্ন মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত ৪২ দিনের অবরোধে অন্তত এক হাজার ৯০টি যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় ৮৭ জন সাধারণ মানুষ মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে ৫৩ জনই যানবাহনে দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা যান। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। পুড়েছেন আড়াই শ মানুষ। তাঁদের মধ্যে ১৩৫ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়েছেন। এসব ঘটনার সিংহভাগই ঘটেছে বিভিন্ন অঞ্চলিক মহাসড়কে।

১৩ জানুয়ারি ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কের মিঠাপুকুরে বাসে আগুনের ঘটনায় শিশুসহ ছয়জন নিহত হন। ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমায় মারা গেছেন আটজন। ৬ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধায় পেট্রলবোমায় শিশু-নারীসহ আটজনের মৃত্যু হয়। একই দিন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীতে ট্রাকে আগুনে প্রাণ হারান তিনজন। এ ছাড়া বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ কয়েকটি এলাকার মহাসড়কে বেশ কয়েকটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ প্রধান, উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মল্লিক ফকরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে নিরাপত্তা দিতে আমরা দিন-রাত কাজ করছি। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও অবরোধ-হরতালের সময় আমরা হাইওয়েতে সতর্ক থাকি। নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য আমরাই আনসার সদস্য চেয়েছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারা দেশে প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক আছে। এ মহাসড়কগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার ও দুর্ঘটনা রোধে ২০০৫ সালের ১৪ জুন গঠন করা হয় হাইওয়ে পুলিশ। এখন পর্যন্ত ১১ হাজার কিলোমিটার মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের ২৮টি স্টেশন (থানা) এবং ৪৪টি ফাঁড়ি স্থাপন করা গেছে। সব মিলিয়ে জনবল আছে মাত্র দুই হাজার ১৯২ জন। রেকার আছে মাত্র ছয়টি। নেই কোনো অ্যাম্বুল্যান্স। হাইওয়ে পুলিশ চারটি অঞ্চলে বিভক্ত। এগুলো হচ্ছে- কুমিল্লা, বগুড়া, মাদারীপুর ও গাজীপুর। কুমিল্লা অঞ্চল দাউদকান্দি, কক্সবাজার থেকে পার্বত্য জেলাসহ পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কিছু অংশ। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ নিয়ে বগুড়া অঞ্চল। খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা নিয়ে মাদারীপুর অঞ্চল। সিলেট বিভাগসহ বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলা নিয়ে গাজীপুর অঞ্চল। এসব অঞ্চলের প্রতিটি থানা ও ফাঁড়ির দূরত্ব ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। প্রতিটি হাইওয়ে থানার জন্য আছে একটি গাড়ি। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে একবার টহল দিতেই দুই থেকে তিন ঘণ্টা লেগে যায়। এর মধ্যে কোনো নাশকতা বা দুর্ঘটনা ঘটলে হাইওয়ে পুলিশের নজর এড়িয়ে যায় সহজেই।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালের নাশকতায়ও অসহায় ছিল হাইওয়ে পুলিশ। এরপর তারা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেসব দাবি মেনে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়। এগুলোর মধ্যে জনবল বাড়ানো, সদস্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণ, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রতি পাঁচ কিলোমিটার ব্যবধানে একটি করে ফাঁড়ি স্থাপন, দুই শতাধিক জিপ ও মোটরসাইকেল সরবরাহ ছিল অন্যতম। এখনো সেসব উদ্যোগের কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। গত ৬ জানুয়ারি থেকে অবরোধ শুরু হওয়ায় আরো বেকায়দায় পড়ে যায় হাইওয়ে পুলিশ। তাদের সঙ্গে জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা নিয়েও রাতে মহাসড়কগুলোকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তার আওতায় আনা যায়নি। তাই গত ৭ ফেব্রুয়ারি পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হক রাত ৯টার পর বাস না চালানোর অনুরোধ জানান। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ীরা তাতে সম্মত হন। এদিকে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে নজরদারি বাড়াতে আনসার সদস্যও চায় হাইওয়ে পুলিশ। এখন ৯৯৩টি পয়েন্টে ১১ হাজার ৯১৬ জন আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছে। মহাসড়কে টহল দিচ্ছে বিজিবি ও র্যাবের দলও।

হাইওয়ে পুলিশের কয়েকজন সদস্য জানান, তাঁদের জন্য নেই বাসস্থান। থানা ও ফাঁড়ির নেই নিজস্ব জায়গা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে জীবনবাজি রেখেই তাঁরা দায়িত্বপালন করছেন। হাইওয়ে পুলিশ পায়নি মামলা করা এবং তদন্তের ক্ষমতা। মহাসড়কের বাইরে গ্রেপ্তারের ক্ষমতাও নেই তাঁদের। অথচ রেলওয়ে পুলিশের এসব ক্ষমতা আছে।

ডিআইজি মল্লিক ফকরুল ইসলাম বলেন, অনেকগুলো উদ্যোগ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানি। ৫০টি স্টেশন ও ফাঁড়ি হচ্ছে। ২৯টির কাজ চলছে। আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো হলে নাশকতা বা জরুরি প্রয়োজনে আমরা সফলভাবে কাজ করতে পারব।

এএইচ/আরআইপি