ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : প্রস্তুত সর্বস্তরের মানুষ

প্রকাশিত: ০২:৫৪ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আগামীকাল মহান ২১ ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এ দিনে ‘বাংলা’কে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ শাসকগোষ্ঠির চোখ-রাঙ্গানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শংকিত করে তোলায় সে দিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক শহীদ হন।

ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি সেদিন ‘মায়ের ভাষার’ মর্যাদা অর্জনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও পায় নব প্রেরণা। এরই পথ বেয়ে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। পরবর্তী নয় মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে সংযোজিত হয় নতুন এক স্বাধীন সার্বভৌম দেশ ‘বাংলাদেশ’।

এদিকে, মাতৃভাষা আন্দোলনের ৬৩ বছর পূর্ণ হবে আগামীকাল শনিবার। একুশে ফেব্রুয়ারি শোকাবহ হলেও এর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় পৃথিবীর বুকে অনন্য। কারণ বিশ্বে এযাবতকালে একমাত্র বাঙালি জাতিই ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত কয়েক বছর ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।

একুশের প্রথম প্রহর ১২টা ০১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

ইতোমধ্যেই অমর একুশে পালনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আজিমপুর কবরস্থানসহ একুশের প্রভাত ফেরি প্রদক্ষিণের এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রণয়ন করা হয়েছে শহীদ মিনারে প্রবেশের রোডম্যাপ।

শহীদ মিনারে প্রবেশের রোডম্যাপ শুক্রবার রাত আটটা থেকেই কার্যকর হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকায় সর্বসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে যানবাহন চলাচলেও নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। শুধুমাত্র সুর্নিদিষ্ট স্ট্রিকার সম্বলিত যানবাহন ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে। অন্যদিকে, শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাত ১২টা ৪১ মিনিটের পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ছুটির দিন। এদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বাণী
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ এবং বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।

রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিতে ঋদ্ধ হয়ে অন্যের ভাষা ও সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্যে নিহিত আছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল চেতনা। এ চেতনাকে ধারণ করে পৃথিবীর সব ভাষাভাষী মানুষের সাথে যোগসূত্র স্থাপিত হোক।

রাষ্ট্রপতি অমর একুশে বাঙালি জাতির চিরন্তন প্রেরণার উৎস উল্লেখ করে ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা অসংখ্য শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। সেই সাথে তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সকল ভাষা সৈনিককে। তাদের অসীম সাহসিকতা, দক্ষ সাংগঠনিক ক্ষমতা ও ত্বরিত কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। বাঙালি পায় মাতৃভাষার অধিকার।

প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, আসুন সকল ভেদাভেদ ভুলে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হই। পবিত্র সংবিধান ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখি। সন্ত্রাস ও হানাহানির পথ পরিহার করে দেশ ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শপথ নিই।

শেখ হাসিনা মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলা ভাষাভাষীসহ বিশ্বের সকল ভাষা ও সংস্কৃতির জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রী মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক উল্লেখ করে বলেন, ১৯৫২ সালের এদিনে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ আরো অনেকে।

ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রদ্ধা জানাই বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সকল ভাষা সৈনিকের প্রতি।

বিরোধীদলীয় নেতা
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ তার দেয়া বাণীতে বলেছেন, বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের পাতায় একুশে ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বের বাংলাভাষীদের জন্য অনন্য মহিমায় সমুজ্জ্বল একটি দিন। আত্মত্যাগ আর গৌরবে ভাস্বর মহান শহীদ দিবস। এদিনটি আজ বিশ্ববাসীর জন্য মাতৃভাষাকে সম্মান জানানোর উপলক্ষও বটে।

বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া
বাণীতে খালেদা জিয়া বলেছেন, ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের এক তাৎপর্যময় দিন। মাতৃভাষা বাংলার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য সে দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জীবনবাজী রেখে রাজপথে নেমে এসে পুলিশের গুলিতে আত্মদান করেন। তাদের এই মহিমান্বিত আত্মত্যাগের বিনিময়ে রচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রথম সোপান। বায়ান্ন সালের ২১শে’র পথ ধরেই এ দেশের সকল গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীকারের সংগ্রাম সম্প্রসারিত হয়েছে, অর্জিত হয়েছে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা।

মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের আয়োজিত নানাবিধ কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে তিনি বলেন, আমি ৫২’র ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের জানাচ্ছি সমবেদনা। পাশাপাশি ভাষা সৈনিকদের জানাই শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন।

আরএস