‘হায়রে মানুষ রঙ্গিন ফানুস, দম ফুরাইলেই ঠুস’
‘হায়রে মানুষ রঙ্গিন ফানুস, দম ফুরাইলেই ঠুস’ কালজয়ী এ গানটির রচয়িতা সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। সোমবার সন্ধ্যায়ও রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে কোনো প্রকার যান্ত্রিক সহায়তা ছাড়াই নিশ্বাস নিতে পেরেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার ভোর ৪টায় স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের ক্ষমতা হারান তিনি। ভেন্টিলেটর মেশিনে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চলছিল মরণব্যাধি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত কবির। কিন্তু তার লেখা কালজয়ী গানের পংক্তির মতো বিকেল ৫টা ২৬ মিনিটে ‘দম ফুরাইলে ঠুস’ ইহলোকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে পরপারে পারি জমান সৈয়দ শামসুল হক।
মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকজুড়ে কবির প্রতি কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যমকর্মীসহ অসংখ্য ভক্তকূলের মনের গহীনের বেদনাযুক্ত স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই করেন স্মৃতিচারণ আবার অনেকে কবির শ্রেষ্ঠ কবিতার পংক্তি লিখে শ্রদ্ধা জানান।
কবি ফরিদ কবির লিখেছেন, মন খুব খারাপ হয়ে গেলো! হক ভাই এতো দ্রুত চলে যাবেন, ভাবিনি। যে কারণে তাঁকে দেখতে যাওয়ার তাড়াও বোধ করিনি! এতো দ্রুত তো আপনার যাওয়ার কথা ছিলো না, হক ভাই?
প্রিয় হক ভাই, আমাকে ক্ষমা করবেন, আপনার নিথর মুখ দেখতে আমি আসবো না। আপনার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিল বারডেম হাসপাতালে। আপনি তখনো ছিলেন যেকোনো তরুণের মতোই সতেজ! আমার প্রতি বরাবরের মতোই স্নেহশীল! ভাবিকে বারবার বলছিলেন আমাকে কিছু খেতে দেয়ার জন্য। আমার তীব্র `না`ও তখন খড়কুটোর মতোই উড়ে গিয়েছিল আপনার স্নেহের কাছে! সেই স্মৃতিই আমি আমরণ জাগরুক রাখতে চাই।
অবশ্য, আরো অনেক স্মৃতিই এখন আসছে ভিড় করে। তার সবগুলোই খুব দামি।
আমার সৌভাগ্য, সেই আশির দশকে, লেখালেখির শুরুতেই আপনার স্নেহ আমি লাভ করেছিলাম!
আপনি যেখানেই থাকুন, চির শান্তিতে থাকুন।
অশেষ শ্রদ্ধা আপনার জন্য
নাট্যাভিনেতা মাসুদ সেজান লিখেন, ‘হক ভাই, আপনার ঋণ কোনোদিন শোধ হবার নয়। আমার জীবনের সবচাইতে খারাপ সময়গুলোতে, আপনি আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সবচাইতে প্রিয় বন্ধু হয়ে...
...বিনম্র শ্রদ্ধা।’
আজাদ মহিউদ্দিন নামে একজন লিখেছেন, ‘কথা ছিল শেষ নাটকটি লিখে যাবেন। নাম ঠিক করা ছিল ‘শেষ যোদ্ধা’। সে লেখা শেষ হয়েছিল কি-না জানা যায়নি। কিন্তু শেষ হয়ে গেল বাংলা সাহিত্যের একটা অধ্যায়। এমন ‘সব্যসাচী’ আর কবে জন্মাবে এই বাংলায়!
কবি তোমার কথা আবার মনে পড়বে, যখন শকুন নেমে আসবে আমার সোনার বাংলায়
কবি তোমার কথা আবার মনে পড়বে, যখন আমার দেশ ছেয়ে যাবে দালালেরই আলখাল্লায়।
কাওসার আলম নামে আরেকজন লিখেন, ‘হে প্রিয় কবি তোমাকে আবার মনে পড়বে, যখন আমার স্বপ্ন লুট হয়ে যাবে আমার সোনার বাংলায়।
হে জাগরণের কবি তোমায় আবার মনে পড়বে, যখন আমার কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যাবে।
হে সংগ্রামী কবি তোমার ধ্বনি মনে পড়বে, আমারই দেশে এ আমারই দেহ থেকে যদি রক্ত ঝরে যায়।
সাহসী, সংগ্রামী, "নুরুলদিনের সারাজীবন" এর কবি, জাগরণের কবি সৈয়দ শামসুল হক।
বিনম্র শ্রদ্ধা সব্যসাচী লেখক।
হামিদ কায়সার নামে একজন ভক্ত কবির লেখা পরানের গহীন ভিতর নামক লেখাটি তুলে ধরেন।
আমি কার কাছে গিয়া জিগামু, সে দুঃখ দেয় ক্যান,
ক্যান এত তপ্ত কথা কয়, ক্যান পাশ ফিরা শোয়,
ঘরের বিছন নিয়া ক্যান অন্য ধান থ্যাত রোয়?-
অথচ বিয়ার আগে আমি তার আছিলাম ধ্যান।
আছিলাম ঘুমের ভিতরে তার য্যান জলপিপি
বাঁশীর লহরে ডোবা পরানের ঘাসের ভিতরে,
এখন শুকনা পাতা উঠানের পরে খেলা করে,,
এখন সংসার ভরা ইন্দুরের বড় বড় ঢিপি।
মানুষ এমনভাবে বদলায়া যায়, ক্যান যায়?
পুন্নিমার চান হয় অমাবস্যা কিভাবে আবার?
সাধের পিনিস ক্যান রঙচটা রদ্দুরে শুকায়?
সিন্দুরমতির মেলা হয় ক্যান বিরান পাথার?
মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর
নিতান্ত মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর।
(৪/ পরানের গহীন ভিতর/ সৈয়দ শামসুল হক।
এ রকম অসংখ্য স্ট্যাটাসে কবিকে স্মরণ করছেন সবাই।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক।
এমইউ/বিএ
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - জাতীয়
- ১ জামুকা-মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন
- ২ শাহজালালে লাউঞ্জ চালু করায় প্রশংসা করলেন বিমান উপদেষ্টা
- ৩ সংবিধান সংশোধনের একমাত্র অধিকার পার্লামেন্টের: হাসান আরিফ
- ৪ পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন জলবায়ু অর্থায়নের আহ্বান জানালো বাংলাদেশ
- ৫ ১০ ডিসেম্বর থেকে প্রবাসীদের পাসপোর্ট পৌঁছানো হবে: আইন উপদেষ্টা