হাসপাতালে সুইপারের ডাক্তারি চলতে পারে না : সংসদে ফরাজী
সরকারি হাসপাতালগুলোতে নৈরাজ্য চলছে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী বলেছেন, এ ধরনের অবজ্ঞা ও নিষ্ঠুর আচরণ চলতে পারে না। এজন্য দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য হাসপাতলের কর্তাব্যক্তিদের বিচার করতে হবে। রোববার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি।
ফরাজী বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগী ভর্তি হল। কিন্তু ডাক্তার চিকিৎসা দেয়ার আগেই হাসপাতালের সুইপার তাকে ইনজেকশন দিল। পরে তিনি মারা গেলেন। এটা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
তিনি বলেন, হাসপাতালের ডাইরেক্টর সাহেব কি করেন। ডিজি সাব কী করেন? আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অত্যন্ত দক্ষ একজন মন্ত্রী। তিনি এক সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শক্তিশালী একজন নেতা। কিন্তু তার অধীনে যারা কাজ করেন তারা ঠিকভাবে কাজ করছেন না। এজন্য দেশের সব মানুষ দুঃখিত। হাসপাতালে এ ধরনের নৈরাজ্য চলতে পারে না। হাসপাতালে চিকিৎসকরা চিকিৎসা করবেন। তার পরিবর্তে যদি যার কোনো অক্ষর জ্ঞান নাই এ ধরনের ব্যক্তি চিকিৎসা দেয় এর চেয়ে আর দুঃখজনক ঘটনা হতে পারে না।
তিনি বলেন, আমি বলছি এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদের শুধু ৩০০ বিধিতে বিবৃত্তি দেবেন। সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করবেন। এতে সংসদ সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটে তা বের করতে হবে। এখানে ডাইরেক্টর ডিজিরা তারাই কিন্তু দায়ী। অর্থাৎ হাসপাতালগুলোর দায়িত্বে যারা আছেন, তাদেরই এ দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। মন্ত্রী এই ব্যবস্থা করে সমগ্র জাতিকে জানাবেন। দায়িত্ব পালনের অবহেলার জন্য নিষ্ঠুরতার জন্য তাদের শাস্তি দিতে হবে।
এরপর আরেক স্বতন্ত্র সদস্য তাহজিব আলম সিদ্দিকী বলেন, যাদের ঘামে, শ্রমে ও রক্তে আমাদের এই নগর সভ্যতা, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, তাদের কি বছরে দুবার ঈদ উদযাপনের লক্ষে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে বাড়ি যাওয়ার অধিকার নেই?’
তিনি বলেন, ‘এবার ঈদের পূর্বে বাড়ি ফেরার সময় এবং ঈদ উদযাপনের পরে কর্মক্ষেত্রে ফেরার সময় কী নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। ঈদের সময় অধিক যানবাহনে কিছুটা দুর্ভোগ হবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে যাত্রীদের ত্রাহি নাভিশ্বাস উঠবে-এটি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।’
স্বতন্ত্র এ সংসদ সদস্য বলেন, সড়ক, রেল এবং নদীপথ এবার বরাবরের চেয়ে অনেক বেশি রক্তাক্ত হয়েছে। পত্রিকার রিপোর্ট মতে, সড়ক, রেল এবং নদীপথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬৪ জনের এবং আহত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি। এই অযাচিত মৃত্যুর দায় কে নেবে? কায়েমি স্বার্থের কাছে আত্মসমর্পণকারী মন্ত্রীরা, অযোগ্য এবং দায়িত্বহীন সরকারি কর্মকর্তা, মুনাফালোভী বাস-মালিক, অপেশাদার, উচ্ছৃঙ্খল এবং বেপরোয়া বাসচালকরা? যারা বছরে দুবার মাটির টানে, শেকড়ের সন্ধানে বাড়ি ফিরতে চায়? এতোগুলো নিষ্পাপ প্রাণ অকালে ঝরে গেল, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে কোনোরকম কার্যকর প্রতিক্রিয়া আমরা পাইনি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই এমন নজির আছে যে, রেল দুর্ঘটনার পরে রেলমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী নিজ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। কিন্তু যোগাযোগ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমাদের কোনো মন্ত্রীকে সামান্য দুঃখ প্রকাশও করতে শুনিনি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সেতুমন্ত্রী গাড়ি চালকদের কখনো রাস্তার রাজা, কখনো আলেকজান্ডার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আমার প্রশ্ন হলো- রাস্তায় যদি এতো প্রতাপশালী আলেকজান্ডারই থাকে, তাহলে মন্ত্রী-মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোথায়?
এইচএস/জেএইচ/পিআর