ভারতীয় চক্রের সহযোগিতায় দেশেই তৈরি হচ্ছে জাল টাকা
জাল টাকা আরো সূক্ষ্মভাবে ও অত্যন্ত সুকৌশলে তৈরির জন্য ভারত থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে নিরাপত্তা সুতা। এজন্য ভারতের জাল টাকা প্রস্তুতকারী চক্রের দক্ষ লোকজনের সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশেই তৈরি করা হচ্ছে জাল টাকা। এই টাকায় বঙ্গবন্ধুর ছবির অবিকল জল ছাপ ও টাকার রেখাগুলোও দেওয়া হচ্ছে অবিকলভাবে।
বুধবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী ও জুরাইন এলাকা থেকে কোটি টাকার জাল নোট ও জাল নোট তৈরির সরঞ্জামসহ পাঁচজনকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আটককৃতরা হলেন- মো. ফাতেমা বেগম (২৫), মো. রুবিনা বেগম (২৪), মো. আব্দুর রশিদ (৬৫), মো. দুলাল (৩০) ও মো. সারোয়ার হোসেন (২৩)। এদের মধ্যে আব্দুর রশিদ ছিলেন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক জুনিয়র অফিসার। মূলত তার পরিকল্পনাতেই তার নিজস্ব ছাপাখানায় তৈরি করা হচ্ছিল জাল টাকা। তার বনশ্রীর বাসায় টাকা তৈরির টাকশাল আবিষ্কারের দাবি করছে র্যাব-১।
বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব-১ কার্যালয়ে অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, প্রতি বছরই ঈদের সময় কুরবানির পশুর হাট সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে ওঠে জাল টাকা কারবারি চক্র। চক্রগুলো জাল টাকা তৈরি করে নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে ছাড়ে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে বুধবার রাতে রাজধানীর রামপুরা থানাধীন দক্ষিণ বনশ্রীর ১০/৪ নম্বর রোডের এফ/৭৭ নং বাসায় অভিযান চালিয়ে ফাতেমা ও রুবিনাকে আটক করা হয়। সেখান থেকে ৭৮ লাখ জাল টাকার ১০০০ ও ৫০০ টাকার নোট জব্দ করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকিদের আটক করা হয় জুরাইন থেকে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে অগ্রণী ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার পদে চাকরি করতেন আব্দুর রশিদ। দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর তিনি প্রেসের ব্যবসা শুরু করেন। সে সময় ভারতীয় জাল নোট ব্যবসায়ী নুরুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তার মাধ্যমে নিজের প্রেসেই জাল নোটে জাল ছাপ বসানো শুরু করেন তিনি।
এরপর তিনি প্রেস বিক্রি করে নিজের বাসায় জাল নোট তৈরি শুরু করেন। এজন্য ভারতীয় জাল নোট কারবারি নুরুজ্জামান তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছিলেন।
র্যাব-১ এর সিও বলেন, ‘আব্দুর রশিদ গত ১৪/১৫ বছর ধরেই জাল নোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও গ্রেফতার হয়েছিলেন মাত্র একবার। তবে জামিনে বেড়িয়ে তিনি আবারো একই পেশায় জড়িয়ে পড়েন। আব্দুর রশিদ ভারতীয় নুরুজ্জামানের মাধ্যমে জাল টাকার কাগজ ও মিহি নিরাপত্তা সুতা আমদানি করেন। এরপর নিজের চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে জল ছাপ দেন।তিনি বলেন, আসল টাকার সঙ্গে এই জাল টাকার তফাৎ খুবই কম। দেখে বোঝা খুব কঠিন আসল না নকল। নিরাপত্তা সুতাও আছে, রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবির জল ছাপও। টাকার পাশে লেখাগুলো অমসৃণ হলেও তা তারা দিতে পেরেছে।
আটককৃতদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জাল টাকা প্রস্তুতকারী ও বাজারজাতকারী সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
জেইউ/এনএফ/আরআইপি