মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা
রাজধানীর অদূরে তুরাগ তীরে সমবেত লাখো মুসল্লির অশ্রুসিক্ত মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো তাবলীগ জামায়াতের ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। আল্লাহর কাছে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ’র সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা ও গুনাহ থেকে পানাহ চেয়ে মোনাজাতে শরিক হন মুসল্লিরা।
আরবি ও উর্দু ভাষায় মোনাজাত শুরু হতেই লাখো মুসল্লির কলরব মুহূর্তে থেমে যায়। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নেমে আসে নীরবতা। তাঁর সঙ্গে লাখো মুসল্লি দুই হাত তুলে ‘আমিন’ ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনি তোলেন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। মোনাজাতে বাংলাদেশের উত্তোরত্তর উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্যও দোয়া করা হয়।
ভারতের দিল্লি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সা’দের পরিচালয়নায় রোববার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে শুরু হওয়া মোনাজাতে গুনাহ থেকে পানাহ চেয়ে গগনবিদারী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।এর আগে চলে হেদায়েতি বয়ান। এ বয়ানে তাবলিগ জামাতের ৬টি উসুল নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছিল ৯ জানুয়ারি। ১১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়। দ্বিতীয় ও শেষ পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয় ১৬ জানুয়ারি। বিশ্বের ৮৮টি দেশের ৪ হাজার ৫৭৪ জন বিদেশি মেহমানসহ কয়েক লাখ মানুষ এই আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। কয়েকটি স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি মোনাজাত সম্প্রচার করে। এসময় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ পরোক্ষভাবে মোনাজাতে শরিক হন।
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকায় নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা। প্রবেশের ১৭টি পথে ৫ স্তরের নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে হয় ইজতেমা মাঠে।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া যান চলাচল বন্ধের কারণে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় কল-কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষ বিশ্ব ইজতেমার জন্য ১ দিন কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।
শুক্রবার আম বয়ান দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের এবারের বিশ্ব ইজতেমা। হরতাল-অবরোধে ও প্রাকৃতিক দুর্ভোগ সত্ত্বেও দ্বিতীয় পর্বে ইজমেতায় শরিক হতে শনিবারই জনসমুদ্রে পরিণত হয় টঙ্গীর তুরাগ তীর ও এর আশপাশের এলাকা।
টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান ছাড়াও আশপাশে প্যান্ডেলে জায়গা না পেয়ে নিজ উদ্যোগেই পলিথিন টানিয়ে ইজতেমায় শরিক হন মুসল্লিরা।
উল্লেখ্য, ঢাকার রমনা উদ্যানসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদে ১৯৪৬ সালে প্রথম ইজতেমার আয়োজন করা হয়। মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৪৮ সালে ইজতেমার স্থান পরিবর্তন করে বর্তমান হাজি ক্যাম্পের স্থলে নেওয়া হয়। ১৯৫৮ সালে ইজতেমা হয় সিদ্ধিরগঞ্জে। মুসল্লি আরও বাড়তে থাকায় সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর তুরাগতীরের মাঠে ইজতেমার স্থান নির্ধারণ করা হয়। সেই মাঠেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই হিসাবে এবার ইজতেমার প্রথম পর্ব ৯ জানুয়ারি শুরু হয়ে রোববার শেষ হয়। আর দ্বিতীয় পর্ব ১৬ জানুয়ারি শুরু হয়। যার সমাপ্তি ঘটে আজকের আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে।
জেইউ, আরু
বিশ্ব ইজতেমা সম্পর্কিত আরো কিছু সংবাদ-
## বিশ্ব ইজতেমায় ১৭ মুসল্লির মৃত্যু
## মুসল্লিদের গন্তব্যে পৌঁছতে বিশেষ নিরাপত্তা
## মোনাজাত শেষে বাড়ি-ফেরা মুসল্লির ঢল
## ইজতেমায় পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু