ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

অবরোধ সহিংসতায় নিহত ২৮, আহত পাঁচ শতাধিক

প্রকাশিত: ০১:২৫ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধ ও সরকারের হার্ডলাইনে মধ্যে সহিংসতা ক্রমেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। টানা অবরোধের ১১ দিন শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সারাদেশে ২৮ জন নিহতসহ আহত হয়েছেন প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ। এই সময়ের মধ্যে শুধু রাজধানীতেই আগুন দেওয়া হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক যানবাহনে। ভাঙচুর করা হয় অন্তত সাড়ে তিন শ`টি গাড়ীতে। শুধু ফায়ার সার্ভিসের হিসেব অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীতেই অগ্নিসংযোগ করা হয় ৫৭টি যানবাহনে।

গত ৪ জানুয়ারি সোমবার থেকেই শুরু হয় এ সংঘাত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে `অবৈধ সরকার` উল্লেখ করে সরকারের পদত্যাগ ও চলতি মাসের ৫ই জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে ৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন ২০ দলীয় জোট নেতা বিএনপি`র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
   ৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল রাজউক ভবনের সামনে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ছে প্রাইভেটকার ও বাস

টানা এই অবরোধে সরকার দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে যেমন অবরোধ সমর্থনকারীদের মৃত্যু হচ্ছে তেমনি অবরোধ সমর্থকারীদের হামলাতে নিহত হয়েছে সরকার সমর্থক নেতাকর্মীরাও। উভয় পক্ষের আপোষহীনতায় জনভীতি তৈরি হয়েছে সর্বস্তরে। হামলা-পাল্টা-হামলা আর নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষই বেশি নিহত ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। শুক্রবার পর্যন্ত ২০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন এবং দলীয় নেতাকর্মী মারা গেছেন ৮ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবরোধ কর্মসূচী চলাকালে গত বৃহস্পতিবার (১৫ জানুয়ারি) মারা গেছেন দু’জন। আর শুক্রবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে র‌্যাবের গুলিতে একজন যুবদল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অবরোধের দশম দিনে গত বৃহস্পতিবার ভোররাতে ঢাকার বাইরে গাজীপুরে হরতালের সময় একটি বাসে আগুন দেয়ার দেয়ার ঘটনায় ঘুমন্ত চালকের সহকারী তোফাজ্জল হোসেন মারা যান।

রাজধানীর মগবাজারে পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ আরো এক গাড়িচালক হাসপাতালে মারা গেছেন। দীর্ঘ এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থেকে প্রাইভেটকার চালক আবুল কালাম (৩৫) বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে মারা যান।
গত ৫ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয় থেকে বের হতে না পেরে কার্যালয়ের ভেতরেই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বেগম খালেদা জিয়া। এসময় চলমান এই অবরোধের ঘোষণা দেন তিনি

১৫ জানুয়ারি টানা অবরোধের দশম দিন ও বিএনপির ডাকা একদিনের হরতালে ঢাকাসহ ২০টি জেলায় গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর, সংঘর্ষ-সহিংসতার ঘটনাও ঘটে।

অবরোধের প্রথম দিনেই রাতে যশোরে একটি বাসে দুর্বৃত্তরদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হেলপার মুরাদ মোল্লা (২০)। পরে রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে দুর্বৃত্তদের হামলায় রাজধানীর সেনবাগে গুরুতর আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এক যুবলীগ নেতা।

এছাড়া গত বুধবার (৭ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামে অবরোধ চলাকালে জুবায়ের হোসেন (২২) নামে এক শিবির কর্মীর মৃত্যু হয়। লোহাগাড়ার চুনতি এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ ধাওয়া করলে গাড়িচাপা পড়ে মারা যান তিনি।

   গত ১৪ জানুয়ারি রংপুরে ঢাকা গামী যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপে একশিশুসহ চারজন নিহত হয়

অবরোধের পঞ্চম দিনে গত শনিবার (১০ জানুয়ারি) বগুড়ায় অবরোধকারীদের ইটের আঘাতে আহত ট্রাকচালক ইমাজুল ইসলাম রাজু (৩৫) মারা যান। ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত ইমাজুল ইসলাম রাজুর বাড়ি নাটোর গুরুদাসপুর উপজেলার মোল্লা বাজার এলাকায়।

গত রোববার (১১ জানুয়ারি) রাত ১২টায় রংপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী হেনা পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাস রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কালীতলা অতিক্রম করার সময় দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে। বাস থেকে জীবন রক্ষায় লাফ দেন পারভেজ মিয়া। ওই সময় বগুড়াগামী একটি মালবোঝাই ট্রাক চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

গত মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে রংপুরের মিঠাপুকুরে নৈশকোচে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান এক শিশুসহ ৫ জন এবং আহত হয় আরো ২০ জন সাধারণ মানুষ। রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মিঠাপুকুর উপজেলাধীন বাতাসন ফতেপুর নামক স্থানে ঢাকাগামী খলিল এন্টারপ্রাইজের একটি নৈশকোচে (ঢাকা মেট্রো-ব-০১১-৬৮৬০) এ নৃশংস বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার রাতে আরও এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। একইদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ঝরে গেল আরও দুই প্রাণ।
    খালেদা জিয়ার গুলশাল কার্যালয়ের সামনে জলকামানসহ আইনশৃঙ্খরা বাহিনীর অবস্থান

ফেনীর সোনাগাজীতে গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) অবরোধকারীদের সাথে সংঘর্ষে আহত যুবলীগ নেতা বেলাল হোসেন (৩৫) মারা যান। বেলাল হোসেন সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

একই দিনে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ছোট ভগবানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন (৫০) অবরোধকারীদের ধাওয়ায় ভটভটি উল্টে আহত হন। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

গত বৃহস্পতিবার (১৫ জানুয়ারি) অবরোধের দশম দিনগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার সোনাপুরে দুর্বৃত্তের গুলিতে যুবদল নেতা মোরশেদ আলম পারভেজ নিহত হন। সোনাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সেলিম জানান, মোরশেদ আলম পারভেজ ইউনিয়ন ছাত্রদলের একজন সক্রিয় নেতা।

সর্বশেষ অবরোধের একাদশ দিনে শুক্রবার গভীর রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে র‌্যাবের গুলিতে মতিউর রহমান (২৫) এক ছাত্রদল কর্মী নিহত হয়েছেন। উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের উলশাক আলীর ছেলে নিহত মতিউর। এই ঘটনা প্রতিবাদে রোববার (১৮ জানুয়ারি) থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল দিয়েছে জেলা বিএনপি।

নিহতের পরিবারের দাবি, যৌথবাহিনী তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর তার লাশ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে র‌্যাব বলছে, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে হাতবোমা, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপসহ গুলি করে মতিউরকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। হামলার এক পর্যায়ে পালানোর চেষ্টা করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হয় মতিউর।
    বিএনপির ডাকা চলমান অবরোধে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারের জট। ছবিটি ১৪ জানুয়ারির

এদিকে ডাকা টানা অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি নের্তৃত্বাধীন ২০ জোট। সরকার ও অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আগের তুলনায় অনেক বেশি হার্ডলাইনে। শুক্রবার রংপুরের মিঠাপুকুরে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক বলেছেন- হরতাল, অবরোধের নামে কেউ সন্ত্রাস ও নাশকতা করলে তা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিএনপি নের্তৃত্বাধীন ২০ জোট ও সরকারের এমন হার্ডলাইনে আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ জনগণ। তবে পরিস্থিতি যাই হোক দ্রুত রাজনৈতিক সমাধানের আশা সর্বমহলে।

জেইউ/আরএস