সুনসান নীরবতা কারাফটকে : ছেলে-নাতির মুক্তির অপেক্ষায় বাবা-দাদা
রাত ১০টা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে সুনসান নীরবতা। হাতেগোনা দু`চারজন কারারক্ষী পালাবদলের অপেক্ষায় পায়চারী করছেন। অনুসন্ধান কেন্দ্রের সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছেন অনীল চন্দ্র শীল নামে মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক। তাকে বলতে শোনা যায়, শাঁখারীবাজারের কল্পনা বোর্ডিং ১২টার পর তালা মারা হয়। ওই সময়ের মধ্যে অনুপ কি বের হইতে পারবো। আচ্ছা ঠিক আছে, আামি অপেক্ষা করছি বলে মোবাইল ফোন কান থেকে নামালেন।
আপনার কি কেউ কারাগারে আছেন জিজ্ঞাসা করতেই অনুপ চন্দ্র শীল বলতে লাগলেন, ছেলেটা ঢাকা কলেজ থেকে অনার্সে সেকেন্ড ক্লাস পেয়েছিল। এক আত্মীয় শত্রুতা করে অপহরণ মামলা দিয়ে গ্রেফতার করিয়েছে। আট মাস পর আজ জামিন হয়েছে। এইমাত্র উকিল জানালেন, ছেলের জামিন হয়েছে। কাল যেহেতু নতুন কারাগারে বন্দি পাঠানো হবে তাই আজ যাদের জামিন হয়েছে তাদের সবাইকে ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছে। ছেলের জন্য যতক্ষণ লাগে অপেক্ষা করবেন তবে কল্পনা বোর্ডিং বন্ধ হলে আর যাওয়া হবেনা বলে জানান তিনি।
অনীল চন্দ্র শীলের মতো কুমিল্লার বাঞ্ছারামপুর থানার বাবুলের জন্য জন্য অপেক্ষা করছিলেন তারা দাদা, মামা ও খালা। সাতদিন আগে দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাঠান নাতিকে। কিন্তু কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে পুলিশের জেরায় সন্তোষজনক জবাব দিতে না পেরে ফেরত আসেন।
বাবুলের মামা জানান, ওর সঙ্গে আরও তিনজন বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের কথার জবাব দিয়ে ঢুকতে পারলেও তার ভাগ্নেকে ফেরত পাঠায়। তিনদিন আগে জানতে পারেন ভাগ্নে জেলে। উকিল ধরে জামিন করিয়েছেন বিকেলে। এখন সবাই অপেক্ষা করছেন কখন জেল থেকে ছাড়া পাবেন।
টেনশনে বারবার সিগারেট ফুঁকছিলেন বাবুলের দাদা। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, জামিন যখন হইছে তখন রাতে না হউক সকালে ছাড়া পাইবো। সারারাত নাতির জন্য জেলগেটের সামনেই অপেক্ষা করবেন। যারা জামিন পেয়েছে তাদের কাউকে কারা কর্মকর্তারা সেখানে নিয়ে যাবেন না। এখান থেকেই মুক্ত করে দেবেন বলে জানিয়েছেন বলে জানান এই বৃদ্ধ।
একইস্থানে দাঁড়িয়ে আনুমানিক ১৮/১৯ বছরের আরেক তরুণী একজন কারারক্ষীর হাতে একটি কাগজ দিয়ে বলছিল ভাই, আমার স্বামী মনিহার ৪ এ আছি। তার কাছে কাগজটা পৌঁছাইয়া ফোন দিতে কইবেন। তার জামিন অইয়া গেছে। আইজ তারে লইয়াই বাড়ি যামু।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কারারক্ষী জানান, শুনছি যা গো জামিনের কাগজ হইছে তাগো আইজ রাতে জেলখানা থেকে ছাইড়া দিবো। এ কথা শুনে আরেক কারারক্ষী বলে উঠলো, সকাল ছাড়া কারও জামিন অইবো না। এমন কথা শুনে বৃদ্ধের পাশে একটি শিশু কোলে বসে থাকা তার মেয়ে মন খারাপ করে উঠে গেল।
এমইউ/বিএ