দেশে বস্তি বেড়েছে ৩৬৬ শতাংশ
দেশের ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও বেকার মানুষ জীবিকার সন্ধানে প্রতিনিয়তই গ্রাম ছেড়ে শহরে ছুটছে। নদীভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও গ্রাম ছাড়ছে অসংখ্য মানুষ। খেটে খাওয়া হতদরিদ্র মানুষগুলো কাজের আশায় শহরে এসে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে আশ্রয় নিচ্ছে বস্তিতে। স্বাধীনতার আগে ও পরে দেশের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা সদর ও অন্যান্য শহরাঞ্চলে ছোট-বড় অসংখ্য বস্তি গড়ে উঠেছে। তবে দেশব্যাপী বস্তির বিকাশ ঘটেছে আশির দশকে। সেসব বস্তিতে খানার সংখ্যাও বেড়েছে; একই সঙ্গে মানুষও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ `বস্তিতে শুমারি ও ভাসমান লোকগণনা ২০১৪` বলছে, দেশে এখন বস্তির সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৩৮। এর আগে ১৯৯৭ সালে বিবিএসের করা জরিপ মতে তখন বস্তির সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৯৯১। সে হিসাবে গত ১৭ বছরে দেশের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা সদর ও অন্যান্য শহরাঞ্চলে বস্তি বেড়েছে ৩৬৬ শতাংশ।
বিবিএস বলছে, এসব বস্তিতে এখন সাড়ে ২২ লাখ মানুষ বসবাস করছে, যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। দেশের বস্তিগুলোতে এখন সাড়ে ১১ লাখ পুরুষ এবং ১১ লাখ মহিলা বসবাস করছে। ১৯৯৭ সালে দেশে বস্তিবাসীর সংখ্যা ছিল সাত লাখ। সে হিসাবে গত দেড় দশকে বস্তিতে বসবাসকারীর সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে ১৫ লাখ। এ সময়ে বস্তিতে খানার হার বেড়েছে ৭৯ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে সব বৃহৎ শহর ও পৌরসভায় বস্তিতে খানার সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৩৪ হাজার ৪৩১, সেটি এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৯৮ হাজার ৪৯০।
বিবিএসের কর্মকর্তারা বলছেন, সুউচ্চ দালান নির্মাণ, আধুনিকায়ন ও পরিচ্ছন্নতার জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী শহরে অনেক বড় বড় বস্তি উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদকৃত বস্তির অধিবাসীরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা ছোট ছোট দলে মিলিত হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বস্তি গড়ে তুলেছে। ফলে দেশে বস্তির সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি খানা ও মানুষও বেড়েছে। যদিও বেসরকারি হিসাবে বস্তিতে বসবাসকারীর সংখ্যা আরো বেশি। অনেক বেসরকারি সংস্থার মতে, দেশের বস্তিগুলোতে এখন ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করছে।
গত বছর ২৪ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে দেশব্যাপী একসঙ্গে `বস্তি শুমারি ও ভাসমান লোকগণনা ২০১৪`-এর কাজ শুরু করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। জরিপ চলে ২ মে মধ্যরাত পর্যন্ত। ওই সময় পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তৎকালীন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নজিবুর রহমান ও বিবিএস মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল জরিপের তদারকি করেন। বিবিএসের কর্মকর্তারা বিভাগীয় শহর, জেলা সদর, পৌরসভাসহ অন্যান্য শহরাঞ্চলের বস্তিতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। বস্তি ছাড়াও পার্ক, রেলস্টেশন এবং ফুটপাতে ভাসমান মানুষের তথ্যও সংগ্রহ করা হয়।
জরিপকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিবিএসের কর্মকর্তারা জানান, দেশে বস্তির সংখ্যা, খানা, বসবাসকারীর সংখ্যা জানার জন্য তৃতীয়বারের মতো এই শুমারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বস্তিবাসীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, আর্থসামাজিক অবস্থা, পেশাগত অবস্থা, ভূমিহীনতা, কোন বিভাগে বস্তির সংখ্যা বেশি এবং কোন জেলা থেকে বস্তিতে আগতসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন চলছে শুমারির বই ছাপানোর কাজ।