মিতু হত্যা : জবানবন্দিতে যা বললো আসামিরা
৫ থেকে ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করে খুনিরা। কিন্তু হত্যার পর খুনিরা পেয়েছে মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এমন তথ্য জানায় গ্রেফতার সন্ত্রাসী মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম (২৭) ও আনোয়ার হোসেন (২৮)।
রোববার রাতে চট্টগ্রাম সিনিয়র মেট্রোপলিটন ম্যাজিট্রেট মোহাম্মদ হারুন-অর রশিদের আদালতে দুই আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিতে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে বলে আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জবানবন্দিতে তারা জানায়, জনৈক মুছার মাধ্যমে মিতুকে হত্যার বিনিময়ে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার চুক্তিতে খুন করা হলেও খুনের পর পালিয়ে গিয়ে মুছার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা পায় মূল খুনি ওয়াসিম। এছাড়া এই খুনে ঘটনাস্থলে থেকে সহায়তাকারী সবাই ২ থেকে তিন হাজার টাকা করে পায়।
তবে গ্রেফতারা মুছার মাধ্যমে ভাড়াটে খুনি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও খুনের প্রকৃত নির্দেশ দাতা এবং খুনের কারণ রহস্যের মধ্যেই রয়েছে। পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্ট কোনো সূত্র থেকেই এই খুনের রহস্য খোলাসা করা যাচ্ছে না।
তবে পুলিশের একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে- এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মাধ্যমে আপাতত বাবুল আক্তারকে স্ত্রী হত্যার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে।
রোববার রাতে একটি সূত্র জানায় ঘটনার সাথে নগরীর এক প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা জড়িত রয়েছেন। হয়তো তিনিই মূলহোতা হতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে মিতু খুনের তদন্তকারী সংস্থা চট্টগ্রাম নগর পুলিশ প্রধান ইকবাল বাহার জানিয়েছে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।
সূত্র মতে স্বীকারোক্তিতে খুনি ওয়াসিম জানায়, ঘটনার আগের রাতে তারা ৭ জন রাঙ্গামাটির ঠান্ডাছড়ি মধ্যম ঘাঘরা এলাকার কামরুল সিকদার মুছার বাসায় মিটিং করে। মিটিংয়ে মিতু জঙ্গিদের অর্থ দিয়ে সহায়তা করে, তাই তাকে মেরে ফেলতে হবে উল্লেখ করে বিত্তশালী ব্যক্তির নির্দেশে তাকে হত্যা করার মিশন দেয়া হয়েছে বলে মুছা ও ভোলা অন্যদের জানায়।
তবে, কে এই নির্দেশদাতা তারা এই ব্যাপারে কিছু জানেন না। মুছা এসব বিষয় বিস্তারিত জানে বলে উল্লেখ করে দুই খুনি। মিতুকে হত্যা করতে পারলে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা দেয়ার লোভ দেখানো হয়। এসময় একটি রিভলবার ও একটি পিস্তল সরবরাহ করে মুছা।
গভীর রাতে ভোলা রাজাখালীর নিজ বাসায় চলে যান। ঘটনার দিন ভোরে ভোলা রিকশাযোগে নগরীর প্রবর্তক মোড়ে আসেন। মুছা ও অন্য একজন মোটরসাইকেলে প্রবর্তক আসেন। বাকিরা একটি সিএনজি অটোরিকশাযোগে প্রবর্তক মোড় আসে।
এর আগে নগরীর কালামিয়া বাজার এলাকায় মুছা সিএনজি ভাড়া বাবদ ৫শ টাকা দেয় ওয়াসিমদের। এভাবে ভোরে ৭ জন প্রবর্তক মোড়ে এসে জড়ো হয়। এরপর তারা হেঁটে গোলপাহাড় এলাকায় পৌঁছে। ওয়াসিম গোলপাহাড় মন্দিরের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে মিতু বাসা থেকে বের হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করে। আর মুছা মোটরসাইকেল নিয়ে জিইসির মোড়ে অবস্থান নেয়।
নগরীর ওয়েলফুডের সামনে অবস্থান নেয় আনোয়ার। অন্যরাও গোলপাহাড় থেকে জিইসি মোড়ের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। যাতে হামলাকারীরা আক্রান্ত হলে অন্যরা ছুটে আসার পরিকল্পনা ছিল। এরপর মিতু গলি থেকে বের হওয়ার সময় আনোয়ার ও মুছাকে মোবাইল ফোনে কথা বলে মিতুকে শনাক্ত করে দেয়। এরপর মুছা বিপরীত দিক থেকে মোটরসাইকেলে এসে মিতুকে ধাক্কা দেয়। এরপর আনোয়ার মিতুকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। এক পর্যায়ে মিতু রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে ওয়াসিম মিতুর মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেলে তিনজন বাকলিয়ার কালামিয়া বাজারে চলে যায়।
সেখানে খুনিরা একত্রিত হলে মুছা মূল খুনি ওয়াসিমকে ৩ হাজার ও অন্যদের দুই হাজার টাকা করে দেয়। এদের মধ্যে একজনকে ৩ লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিলো, অন্যদেরকে ২ লাখ টাকা করে দেয়ার কথা থাকলেও ওই টাকা আর দেয়া হয়নি বলে আদালতে
স্বীকারোক্তিতে জানায় খুনিরা।
স্বীকারোক্তিতে ওয়াসিম জানায়, কালামিয়া বাজার পৌঁছার পর রিভলবার ও পিস্তল ভোলা তার সাথে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জানান, দুই খুনি আদালতে মিতু হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। রোববার বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ওয়াসিম ও রাত ৮টা থেকে ৯টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত আনোয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ম্যাজিট্রেটের কাছে। এর মধ্যে ওয়াসিমের ১৪ পাতা ও আনোয়ারের ১০ পাতা জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত।
এঘটনায় বর্তমানে পুলিশের হাতে আটক রয়েছেন মোট ৫ জন। এদের মধ্যে একজন মহিলাও রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে কে এই মহিলা এ ব্যাপারে কিছুই জানা সম্ভব হয়নি। বাকি চারজন হলেন ওয়াসিম, মুছা, ভোলা ও আনোয়ার।
জীবন মুছা/এসকেডি