ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সংঘর্ষের আশঙ্কায় জনভীতি : এলার্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ০৭:৩১ এএম, ০৪ জানুয়ারি ২০১৫

৫ জানুয়ারি উপলক্ষ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। সহিংসতা ও সংঘর্ষের আশঙ্কায় জনমনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।

সরকারি দল তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া শনিবার ২০ দলকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘দয়া করে রাস্তায় নামবেন না। বের হবেন না। আমরা ১৬টি স্পটে থাকব। বের হলে খবর আছে।’

এমন মন্তব্যের পরই শনিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয় থেকে বের হতে চাইলে পুলিশ তার গাড়ি আটকে দেয়।

এর আগে রাত ১২টার দিকে সব কর্মচারীকে বের করে দিয়ে নয়াপল্টন কার্যালয়ের গেইটে তালা ঝুলিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী আহমেদকে আটক করে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ ও রুহুল কবীর রিজভীকে আটক করে তারা মূলত বিএনপিকে একটি ভীতির বার্তা দিতে চেয়েছেন।

এসব মিলিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সংকট উত্তোরণে সমাধানের পথ না খুঁজে এভাবে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ঘোষণা অনাকাঙ্খিত সহিংসতা ডেকে আনতে পারে। যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।

সাধারণ মানুষ বলছেন, বিএনপি আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেশি। কর্মসূচি দেবেন তারা, আর মারা পড়বে সাধারণ মানুষ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজধানীসহ দেশের কোথাও সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড করতে দেয়া হবে না। শুধু তাই নয় সংঘর্ষ ও ব্যাপক সহিংসতা হতে পারে এমন কোনো কর্মসূচিও পালন করতে দেয়া হবে না কোনো দলকে।

ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষদের মধ্যেকার গোপন বৈঠক থেকে এমন মেসেজেই যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে। একইভাবে পুলিশ হেডকোয়াটার থেকেও এলার্ট থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তিতে বিএনপি ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেয়। এজন্য বিএনপি রাজধানীসহ সারাদেশে সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে।

অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ঘোষণা করে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ হিসেবে ৫ জানুয়ারি রাজধানীর ১৬টি সংসদীয় আসনে সমাবেশ করে উদযাপন করবেন।

৫ জানুয়ারির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চাইলেও ডিএমপি’র কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পায়নি বিএনপি। তবে শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দলটির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানান, যে কোনো মূল্যে ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করা হবে।

দেশের প্রধান দুই দলের অনড় অবস্থান এবং পুলিশ প্রশাসন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় সংঘর্ষের আশঙ্কা নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের। তারা মনে করছেন, ২০০৬ সালে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে, যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনার উদ্ভব হলে আবারও এমনটি ঘটতে পারে।

এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শাখাওয়াত হোসেন জাগোনিউজকে বলেন, ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে দুই দলই অনড় অবস্থানে। এটা গণতান্ত্রিক রাজনীতির খারাপ চর্চা। গণতান্ত্রিক চর্চা হলো বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া। কিন্তু সরকার তা দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, “বিএনপিই বা কিভাবে সমাবেশ করবে? তাদেরকে তো রাস্তায় বের হতেই দেয়া হচ্ছে না। মাঠে যদি দুই দল না খেলে তবে ফাউল হবে কিভাবে? আর ফাউলই বা কে ধরবে?”

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একা মাঠ দখলে রাখতে চাচ্ছে। বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দিয়ে আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে মাঠ দখলে রাখবে। এখন পর্যন্ত তাই মনে হচ্ছে। আর একারণেই জনমনে ভীতির কোনো কারণ দেখছি না।

বিএনপি’র শক্তি স্বামর্থ্য বিবেচনায় সরকার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে সমাবেশে বাধা দিলে সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কাটা বেশি বলেও মনে করেন তিনি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনার বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জাগোনিউজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘর্ষ গণতন্ত্রের পথে অন্তরায়। ৫ জানুয়ারিতে কি ঘটবে আমি জানি না। তবে যদি বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ ঘটে তাহলে তা গণতন্ত্রের জন্য শুভকর হবে না।’

তিনি বলেন, দুই দলের নেতাকর্মীদের শারীরিক ও মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি বলছে ৫ জানুয়ারি সহিংসতার আশঙ্কাই বেশি। জন নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় সেজন্য প্রশাসনকে অবশ্যই একটি শক্ত অবস্থান নিতে হবে।

ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার

৫ জানুয়ারি রাজধানীসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির কোনো ভূমিকা থাকবে কিনা জানতে চাইলে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ জাগোনিউজকে বলেন, আমরা পরিস্থিতি অবজার্ভ করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে বিজিবি সদস্যদের স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, সিভিল প্রশাসন যদি মনে করে মাঠে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবির প্রয়োজন রয়েছে তবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হবে। এ ধরনের নির্দেশনা আমাদের সব ব্যাটালিয়নকে জানানো হয়েছে।

৫ জানুয়ারি রাজধানীসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশের এআইজি (এডমিন) নাম প্রকাশ না করে জাগোনিউজকে বলেন, অনেকে অনেক ধরনের কথা বলে। এ সবই রিউমার। একটা শ্রেণি জনমনে ভীতি সঞ্চার করতে অপপ্রচার চালায়। তবে পুলিশের প্রস্তুতি রয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে কোথাও সহিংসতামূলক কর্মসূচি বরদাস্ত করা হবে না।

৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে যেন কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয় সেজন্য পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ। শনিবার সন্ধ্যায় ডিএমপি`র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ডিসি`দের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন।

বৈঠকের একটি সূত্রে জানা গেছে, কোনো স্পর্শকাতর স্থানে যেন সমাবেশ বা লোক জড়ো হতে না পারে মর্মে ওই বৈঠকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদি কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় তাহলে ডিএমপি কমিশনার ১৪৪ ধারা জারি করতে পারে বলেও সূত্রটি জানায়।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জাগোনিউজকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে বিগত দিনের ন্যায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নাশকতাকারীদের উপর নজর রাখতে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্য বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, র‌্যাবের প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়নকে সজাগ থাকার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির নির্দেশনাও রয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় ও পল্টন কার্যালয়ে ব্যাপক নিরাপত্তা

রোববার রাত থেকেই গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে পুলিশ। পুলিশ সদস্য বাড়ানোর পাশাপাশি র্যাব সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত হয়েছেন।

সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। পুলিশের সাঁজোয়া যান এপিসিও নিয়ে আসা হয়েছে।

গুলশান থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) ফিরোজ কবির বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের নিরাপত্তার বিষয় সামনে রেখে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে প্রস্তুতি রয়েছে।