ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বছর জুড়েই অস্থির ছিল শিক্ষাঙ্গন

প্রকাশিত: ১১:০১ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৪ সালে ছিল অস্থির। ক্যাম্পাসগুলোতে  বছরজুড়ে প্রায় লেগেই ছিল  হত্যা, সংঘর্ষ, গোলাগুলির ঘটনা। ফলে বছরজুড়েই শিক্ষার্থীদের এক ধরনের ভীতি নিয়ে ক্লাস করতে দেখা গেছে। এছাড়া অজানা শঙ্কায় ছিল অভিভাবক ও শিক্ষকরাও। বছরের শুরু থেকেই রাবি, ইবি, যবিপ্রবি ও চবিসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে হত্যা ও সহিংসতার ঘটনায় এ শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে ছাত্র সংগঠনগুলোর আভ্যন্তরীণ কোন্দাল, নবাগতদের নিজ দলের ভাগিয়ে নেয়া, সিট বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি অন্যতম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বছর শুরু হয়েছিল শিক্ষককে মারধরের মধ্য দিয়ে। এরপর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ছাত্রদল নিরোধ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর, সাংস্কৃতিক সংগঠন পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, সমাজকর্মীদের মারধর, সাংবাদিকদের হুমকি, দোকান ভাঙচুর, ফ্রি খাওয়াসহ নানা অপরাধেই ২০১৪ সাল পার করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে  মওলানা ভাসানী হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের একাংশ হলে অবস্থান নিয়ে গেট বন্ধ করে দিলে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীই খাবারের জন্য বাইরে যেতে পারেনি। ফলে সারা দিনই অভুক্ত থাকে। এছাড়া হলের অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী সারা রাত বাইরে অবস্থান করে। পরের দিন ভোরে পুলিশের সহায়তায় ভিকটিম গ্রুপটি হলে উঠলে অপর অংশের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়।  এ ঘটনায়  ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা ও সাময়িক বহিস্কার করেই দায় সারে কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, সভার সিদ্ধান্তের আলোকে রাতেই জরুরী সিন্ডিকেট বসবে। সেখানেই দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর পর তা সকলকে জানানো হবে। এদিকে হামলার শিকার সভাপতি পক্ষের নেতা-কর্মীরা হলের বাইরে অবস্থান করছেন। পুলিশের উপস্থিতিতে কিছু ছাত্র হলে উঠলেও ছাত্রলীগের অপর অংশের নেতা-কর্মীদের বাধায় সভাপতি পক্ষের নেতা-কর্মীরা হলে উঠতে পারেনি। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সভাপতি পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী হলের বাইরে অবস্থান করছিল। এ ঘটনায়  ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত আসার পর ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত নেবে।

ঘটনার বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহমেদ রাসেল বলেন আমরা ঢাকায় এসেছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে সভা শেষে সিদ্ধান্ত জানাব। অন্যদিকে ঘটনার পর আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদাণে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করেছে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও প্রগতিশীল শিক্ষকরা।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
বছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তপ্ত ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। তবে ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটি শেষে স্বাভাবিকভা হতে শুরু ক্যাম্পাস। তবে এ স্বাভাবিকতা বেশিদিন স্থায়ী হয় নি। ছাত্র রাজনীতির কারণে সৃষ্ট অস্থিরতায় আবারও বন্ধ হয় ইবি।ফলে কয়েকদিনের ব্যবধানে আবারও বাড়ি ফিরতে হলো ইবি শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীরা জানান,  ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে ইবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করে ছাত্রশিবির। শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিবিরের মিছিলের প্রতিবাদে ছাত্রলীগ পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় মিছিলটি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বাসে ভাংচুর চালায়। পরে ছাত্রলীগ ভিসি ও প্রভিসির  গাড়ি লক্ষ্য করে হামলার চেষ্টা চালালে পুলিশ এতে বাধা দেয়। ফলে ছাত্রলীগ নেতারা পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এসময় ছাত্রলীগের হামলায় পুলিশের ৫ সদস্য আহত হন। পরে ছাত্রলীগ নেতারা ডায়না চত্বর থেকে চলে এসে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থানরত আরেক পুলিশ সদস্যকে মারধর করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ সদস্যরা ছাত্রলীগকে লক্ষ্য করে অন্তত ১৫ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
রোজার আগে ছাত্রলীগ কারনে অনেকটা অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে ক্যাম্পাস আগেই ছুটি ঘোষণা করা হয়। ক্যাম্পাস খোলার পর স্বাভাবিক চললেও হঠাৎ করে শুরু হয় অস্থিরতা। তবে শিবিরের সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) বন্ধ না হলেও ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছেন। যে কোন সময় ফের সংঘর্ষ বাধতে পারে এমন আশংকা তাদের। লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াজেদ আলী জানান, কর্তৃপক্ষ শক্ত পদক্ষেপ নিলে ক্যাম্পাসে কোন সমস্যা হতো না। আবার সমস্যা শুরুর পরও তারা নমে মাত্র তদন্ত আর একটি হল বন্ধ করেই দায় সেরেছে।



জানা গেছে, ছাত্রলীগের মানববন্ধনে ছবি তোলার সময় এক শিবির কর্মীকে পিটিয়ে পুলিশে দেয়ার জের ধরে চবি শিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় উভয় গ্রুপের মধ্যে অন্তত ৫০ রাউন্ড গোলাগুলি এবং ২০টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।  বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মো. সিরাজ উদ্দৌলাহ বলেন, জরুরি সভায় ঘটনা তদন্তের জন্য শামসুন নাহার হলের প্রভোস্ট প্রফেসর মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে হলের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কমিটি প্রতিবেদন না দেয়া পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হলে কোন শিক্ষার্থী থাকতে পারবে না। সেখানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করবেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের একটি অংশ হামলা চালায় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদদাতা বা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত শিক্ষার্থীদের ওপর। এতে শুরু হয়েছে আতঙ্ক। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ জানান, একটি পত্রিকার ভূয়া আইডি কার্ড ব্যবহারের প্রতিবাদে হামলার ঘটনা ঘটে। তবে প্রশাসনকে এ ব্যাপারে শক্ত কোন পদক্ষেপ  নিতে দেখা যায় নি।

যবিপ্রবি :  যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে  বছরের মাঝামাঝিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রাণ হারায় ছাত্রলীগের কর্মী রিয়াদ। রিয়াদ হ্ত্যার পর রাজনীতি মুক্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকে। অপরদিকে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলা তুলে নিতে নিহতের পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুন নাহার বলেন, হত্যাকারীরা গ্রেফতার না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে।



রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ছাত্রলীগ-শিবির রয়েছে মুখোমুখি অবস্থানে। নারী ঘটিত একটি বিষয়ে রুয়েটের সমস্যায় নাক গলাতে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগ। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হামলা, মার্চে হল উদ্ধারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, জুলাইয়ে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দাবিতে ভিসিকে অবরুদ্ধ করা, জুনে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ নানা কারণে অস্থির ছিল শিক্ষাঙ্গন। বন্ধ ছিল ক্লাস-পরীক্ষা।

এদিকে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু  হয়েছে। ভর্তির আবেদনের জন্য সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত না হতে হলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতংক তৈরি হয়েছে। অস্থিরতার মধ্যে অনেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে চাইবে না বা কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হবে।