ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

মেহেদি-সাজগোজের উপকরণ কেনায় ব্যস্ত নারী-শিশুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:৪৬ পিএম, ২৯ মার্চ ২০২৫

 

‘দুইদিন আগে আমাদের সব কেনাকাটা শেষ। হঠাৎ দুপুরে মনে পড়লো মেহেদি তো কিনি নাই। রাতে বাসের টিকিট, গ্রামের বাড়ি যাবো। ওখানকার (গ্রাম) দোকানে ভালো মেহেদি পাব কি না, তার তো ঠিক নেই। মেয়েকে নিয়ে তাই মেহেদি কিনতে আসলাম। কোনটা কিনেবো সেটা নিয়ে কনফিউজড (দ্বিধায় পড়া)।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সুবাস্তু নজর ভ্যালি শপিংমলের ‘প্রিয়াঙ্গনে’ দাঁড়িয়ে মেহেদি দেখতে দেখতে কথাগুলো বলেন ফারজানা আক্তার। তার স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। গ্রামের বাড়ি যশোরে।

ফারজানা জানান, চার বছরের মেয়ে নূর ফায়জা, স্বামী, নিজের এবং পরিবারের জন্য ঈদের সব কেনাকাটা করেছেন ঢাকাতে। বাকি ছিল শুধু মেহেদি। সেটাও ঢাকা থেকে কিনে নিয়ে গ্রামে যাবেন। ঈদের দিন মেহেদির রঙে হাত রাঙাতেই এ ছোটাছুটি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

‘দুইদিন আগে আমাদের সব কেনাকাটা শেষ। হঠাৎ দুপুরে মনে পড়লো মেহেদি তো কিনি নাই

সুবাস্তু নজর ভ্যালি শপিংমলে শনিবার (২৯ মার্চ) বিকেলে ও সন্ধ্যায় ভিড় অনেকটা কম। তবে মেহেদি, প্রসাধনী ও নারী-শিশুদের সাজগোজের উপকরণ কিনতে বেশ ভিড় দেখা যায়। সুবাস্তুর দ্বিতীয় তলাজুড়ে কসমেটিকস, সাজগোজের উপকরণের দোকান। সেখানে সারাক্ষণ ভিড় লেগেই থাকছে। দম ফেলার ফুসরত নেই বিক্রেতাদের।

বিজ্ঞাপন

মার্কেটের শান্তা ফ্যাশন গ্যালারির দোকানি আবু জাফর বলেন, ‘বিক্রি পুরো রমজানজুড়ে ভালো ছিল। গত সপ্তাহ থেকে আরও বেড়েছে। একেবারে শেষ সময় তো। এখন আমাদের সাজগোজের দোকানে ভিড় বেশি।’

কোন কোন পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে মেহেদি। তাছাড়া বিভিন্ন অরনামেন্টস; যেমন- কানের দুল, চুড়ি, মাথার চুল বাঁধার ক্লিপ, লিপস্টিক, নেইল পলিশ, আইলাইনার, আই শ্যাডো, আই ল্যাশ ও কৃত্রিম নখের অনেক চাহিদা। তাছাড়া বাচ্চাদের মাথার চুল বাঁধার ব্যান্ড, রঙিন টুপি, মেকআপ আইটেমের ভালো চাহিদা।’

‘দুইদিন আগে আমাদের সব কেনাকাটা শেষ। হঠাৎ দুপুরে মনে পড়লো মেহেদি তো কিনি নাই

বিজ্ঞাপন

স্টাইল কর্নার নামে একটি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ছয়জন বিক্রয়কর্মী। দোকানে ক্রেতা অর্ধশতাধিক। ঠেলাঠেলি করে পছন্দের জিনিস খুঁজছেন তরুণী, শিশু ও মধ্যবয়সী নারীরা। বিক্রয়কর্মীদের ডেকেও সাড়া পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ নারী ক্রেতাদের। এ নিয়ে মাঝে-মধ্যেই চলছে বাকবিতণ্ডা। দাম নিয়েও চলছে বচসা।

দশম শ্রেণী পড়ুয়া আসমা বিনতে শাহীন। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট বোন রাইফা বিনতে শাহীনকে নিয়ে এসেছে সাজগোজের জিনিস কিনতে। কি কি কিনবা- এমন প্রশ্নে তার উত্তর, ‘আব্বু, দুজনের জন্য ১৫০০ টাকা দিয়েছে। দুইটা মেহেদি কিনেছি ১৪০ টাকা দিয়ে। ছোটবোনের মাথার চুল বাঁধার ব্যান্ড, চুড়ি, কানের দুল কিনেছি। আমার জন্যও চুড়ি, কানের দুল নিয়েছি। আর আই ল্যাশ কিনেছি। এখন লিপিস্টিক আর নেইল পলিশ কিনব।’

হল্যান্ড সেন্টার শপিংমলের নিচতলায় কসমেটিকস ও সাজগোজের দোকান। সেখানে ঘুরেও বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তা-সিন গিফটস অ্যান্ড কসমেটিকসের বিক্রয়কর্মী শিরিন আক্তার বলেন, ‘ভালো বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে বিক্রি বেড়েছে। ঈদ পর্যন্ত এমন বিক্রি হলে ভালোই হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘মেয়েদের সাজগোজের জিনিসগুলো সবই বিক্রি করি আমরা। দাম মিডিয়াম থেকে উচ্চপর্যায়ের আছে। যার যেমন বাজেট, তিনি তেমন প্রডাক্ট পছন্দ করে নিচ্ছেন। কিছুটা লাভ রেখে আমরাও ছেড়ে দিচ্ছি। মেহেদি, চুড়ি, নেইলপলিশে তো লাভ খুব একটা নেই। তবে এগুলোর বিক্রি অনেক বেশি।’

এদিকে, যাদের মার্কেটের বড় দোকান থেকে মেহেদি ও সাজগোজের জিনিস কেনার সামর্থ্য নেই, তারা বেছে নিয়েছেন ফুটপাতের দোকানগুলো। ফুটপাতে ভ্যানের ওপরও নানা রকমের মেহেদি, নেইল পলিশ, লিপস্টিকসহ সাজগোজের উপকরণ বিক্রি হচ্ছে। যারা বিক্রি করছেন, তাদের অধিকাংশই মৌসুমি বিক্রেতা।

‘দুইদিন আগে আমাদের সব কেনাকাটা শেষ। হঠাৎ দুপুরে মনে পড়লো মেহেদি তো কিনি নাই

বিজ্ঞাপন

উত্তর বাড্ডা ওভারব্রিজের নিচে ঠেলাগাড়িতে করে মেহেদি ও সাজগোজের বিভিন্ন উপকরণ বিক্রি করছেন নুরুল হক। সারা বছর তিনি ঘুরে ঘুরে আচার বিক্রি করেন। ঈদ এলেই মেহেদির পসরা সাজিয়ে ঠেলাগাড়ি নিয়ে ছুটে বেড়ান গোটা রাজধানী। কখনো কখনো গুলিস্তানেও চলে যান তিনি।

নুরুল হক বলেন, ‘এক সপ্তাহের ব্যবসা। পণ্য যা কিনি, বিক্রি না হলে লস হয়। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে ঈদের আগে ব্যবসাটা করি; ভালো লাগে। মার্কেটে যে মেহেদি বিক্রি হচ্ছে, ওগুলো এখানেও রয়েছে। মার্কেটে যে দাম, তার চেয়ে আমি ১০ টাকা কমে দিচ্ছি। কিন্তু একই কোম্পানির মেহেদি। ফুটপাতে বিক্রি করছি, সেজন্য অনেকে পছন্দ করে না।’

নুরুল হকের কাছ থেকে দরদাম করে দুইটা মেহেদি কেনেন সজীব হোসেন নামে এক যুবক। তিনি জানান, তার দুজন ভাতিজি আছে। বয়সে ছোট। বাসায় গেলে মেহেদি কেনার বায়না ধরে। সেজন্য কিনলেন।

বিজ্ঞাপন

সজীব বলেন, ‘ফুটপাতে হঠাৎ মেহেদি দেখে ভাতিজিদের কথা মনে পড়লো। ৭০ টাকা করে চাইলো। ৬০ টাকা করে দুইটা ১২০ টাকা কিনলাম। ছোট মানুষ ওরা। একদিন ব্যবহার করবে, রঙ ভালো হলেই হলো।’

এএএইচ/এএমএ/জেআইএম

বিজ্ঞাপন