আইপিডি
বিল্ডিং কোড না মানলে নগরে ভূমিকম্প মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে

ঢাকা-চট্রগ্রামসহ বাংলাদেশের অধিকাংশ বড়-মাঝারি-ছোট শহরগুলো ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় একেবারেই অপ্রস্তুত। শনিবার (২৯ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার (২৮ মার্চ) মিয়ানমারে সংঘটিত ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ও আশপাশের দেশ ও অঞ্চলে সেটির বিরূপ প্রভাব পড়ে। এই ঘটনা আমাদের আরও একবার বাংলাদেশের নগরগুলোর ভূমিকম্প প্রস্তুতি না থাকা, ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড এবং মহাপরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবহার জোনিং না মানার প্রবণতার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট অনেকগুলো ভূমিকম্প বড় আকারের ভূমিকম্পের আসন্ন পূর্বাভাস দিলেও আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শূন্য। ফলে যে কোনো সময়ে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটার আগেই ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমাতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে এখনই যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে আইপিডি।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এ সময় আরও বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করলেও দেশের পরিকল্পিত নগরায়ন, টেকসই আবাসন ও ভবনের নিরাপত্তা বিষয়ক কোনো কমিশন করেনি। এই বিষয়টিকে অনভিপ্রেত বলে মনে করে আইপিডি। রাজউক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনেকের বিরুদ্ধেই আবাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিভিন্ন আঁতাত করে দূর্নীতির মাধ্যমে যত্রতত্র অনুমোদনহীন ভবন গড়ে উঠতে দেওয়া এবং পরবর্তীতে মহাপরিকল্পনা সংশোধনের নামে সেসব ভবন ও প্রকল্পের বৈধতা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সরু রাস্তায় বহুতল ভবন নির্মাণের অবাধ স্বাধীনতা কিংবা ১০ তলা পর্যন্ত আবাসিক ভবনকে বহুতল বিবেচনা না করে কাঠামোগত ও অগ্নি নিরাপত্তায় ছাড় দেওয়ার উদ্যোগগুলো অত্যন্ত বিপদজনক। নাগরিক, পেশাজীবী ও পরিকল্পনাবিদদের পক্ষ থেকে এই বিষয়গুলোকে বারংবার তুলে ধরা হলেও রাজউক ও মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করে আবাসন ব্যবসায়ীদের গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষায় অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করছে আইপিডি।
আইপিডি আরও মনে করে, ঢাকার ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনায় মাটির ভূতাত্ত্বিক গঠন ও গুণাগুণকে বিবেচনায় নিয়ে ভূমি ব্যবহার এবং ভবনের আকার-আয়তন নির্ধারণ করা প্রয়োজন। অথচ ঢাকার নগর পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলোকে সেভাবে বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে না। ঢাকার পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলসহ ঢাকার চারিদিকে বন্যা প্রবাহ অঞ্চল ও জলাশয়-জলাভূমি ভরাট করে অধিকাংশ অনুমোদনহীন যেসব আবাসিক প্রকল্প গড়ে উঠেছে, সেখানে ইতোমধ্যে অসংখ্য বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। ভূমিকম্পে দুর্বল মাটির ওপর গড়ে ওঠা এসব ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকার ড্যাপে এলাকাভিত্তিক ভিন্নতাকে মাথায় নিয়ে ভবনের আকার-আয়তন নির্দিষ্ট করার প্রস্তাবনা থাকলেও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার সংশোধন প্রস্তাবনায় মন্ত্রণালয় এলাকাভিত্তিক ভিন্নতাকে বাদ দিয়ে পুরো ঢাকা মহানগরীর জন্য একই ধরনের এফএআর বা ফার মান প্রস্তাব করেছে। পৃথিবীর কোনো শহরের নগর পরিকল্পনায় এ ধরনের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কৌশল না থাকলেও এভাবেই চলছে ঢাকার মতো অত্যন্ত অবাসযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ শহরের নগর পরিকল্পনা। এই ধরনের আত্ম-বিধ্বংসী প্রবণতা থেকে বের না হতে পারলে ঢাকার কাছাকাছি এপিসেন্টারে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এমএমএ/এএমএ
বিজ্ঞাপন