শনিবার বিকেলে উপকূলে আঘাত হানতে পারে রোয়ানু
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আরো ঘনীভূত হয়ে শনিবার বিকেল বা সন্ধ্যা নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। শুক্রবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিনে এ কথা বলা হয়েছে।
সন্ধ্যা ৬টায় রোয়ানু চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এই সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। দুপুর ১২টার রোয়ানু চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটরা দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। অর্থাৎ ছয় ঘণ্টায় এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের দিকে ৭৫ কিলোমিটার এগিয়েছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকেও সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। দুপুরের ১২টার বুলেটিনে এ দুই বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছিল। তখন মংলা সমুদ্রবন্দর ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে রোয়ানু যথাক্রমে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং ৮১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
সন্ধ্যা ৬টায় মংলা ও পায়রা বন্দর থেকে রোয়ানু যথাক্রমে ৬৭৫ কিলোমিটার ও ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এছাড়া কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে রোয়ানু ৮৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে; দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে যা ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটারেও পৌঁছাচ্ছে।
চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরের পাশপাশি উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলো ও সেসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করার সময় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুরে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সক মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু মোকাবিলার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সারা দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
রোয়ানুর প্রভাব ও জোয়ারের পানির চাপে বরগুনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ঘূণিঝড়ের জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা
• বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের আগেই ঘূণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো উচিৎ
• প্রয়োজনে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার বিকল্প পথের সন্ধান করা উচিৎ
• ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় টর্চ লাইট, দেয়াশলাই, মোমবাতি, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে নেয়া উচিৎ।
• ঘূর্ণিঝড়ে সম্পূর্ণরুপে অতিক্রম না করা পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করা উচিৎ নয়
• ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি ও গণমাধ্যমে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সতর্ক থাকা উচিৎ
• ঘন ঘন টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত ঘূর্ণিঝড়েরর বার্তা সম্পর্কে অবহিত থাকা উচিৎ
ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণিবিন্যাস
কোনো ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারের বেশি হয়, তবে সেই ঘূর্ণিঝড়ের একটি নাম দেয়া হয়। আর বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগের ভিত্তিতে করা হয় ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণিবিন্যাস।
• বাতাসের সর্বোচ্চ গতি যদি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হয় তবে তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়।
• বাতাসের সর্বোচ্চ গতি যদি ঘণ্টায় ১১৮ কিলোমিটার থেকে ২১৯ কিলোমিটারের মধ্যে হয় তবে তাকে হ্যারিকেনের গতিসম্পন্ন তীব্র ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।
• বাতাসের সর্বোচ্চ গতি যদি ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটারের মধ্যে হয় তাকে তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।
• বাতাসের সর্বোচ্চ গতি যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে তবে তাকে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।
এনএফ/এমএস