ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ঘর পালানো কিশোরী সুরমার দ্রোহের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:৫৯ পিএম, ০৭ জুন ২০২০

বাবা-মায়ের যখন বিচ্ছেদ হয় তখন সুরমা সবেমাত্র ১৪-১৫ বছরের এক কিশোরী। কিন্তু মা যখন আবার বিয়ে করে ঘর বাঁধেন নতুন জায়গায়, সুরমা তখন বিদ্রোহ করে। কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে উদ্দেশ্যহীন পথে যাত্রা শুরু করে অভিমানী সুরমা।

ভোলার চরফ্যাশনের কিশোরী ঘর পালিয়ে সাত বছর আগে রাজধানী ঢাকায় আসে। ধানমন্ডির এক প্রবাসীর বাসাবাড়িতে কাজ পায়। কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও আশ্রয়। কিন্তু কোনো বেতন নেই। এতেই খুশি সুরমা।

কিন্তু সম্প্রতি সুরমার সঙ্গে গৃহকর্ত্রীর মনোমালিন্য হয়। সুরমা ছোটখাটো বিদ্রোহ করে বসে, যেটা মেনে নিতে পারেননি গৃহকর্ত্রী। দু-চারটা চড়ও হয়তো দিয়ে বসেন সুরমার মুখে! এতে আরও বেঁকে বসে বাড়ি পালানো সেই কিশোরী যে আজ বেশ পরিণত। যে কিশোরী কি না টানা অর্ধযুগের বেশি ওই বাসায় কাজ করেও বেতন হিসেবে নেয়নি একটি টাকাও।

ধানমন্ডি থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুরমা হয়তো জানতোই না ঢাকা শহরে বাসায় কাজ করলে বিনিময়ে বেতনও পাওয়া যায়। হয়তো একটু নিরাপদে খাবার-আশ্রয় পেয়েই চুপ থেকেছে মেয়েটি। কখনও কাজে ফাঁকি দেয়নি। কিন্তু বিদ্রোহ নিয়েই যার ঘর ছাড়া সে কি করে গৃহকর্ত্রীর অন্যায় মেনে নেবে!

ভালো কাজের মেয়ে হিসেবে গৃহকর্ত্রী সুরমাকে আটকাতে ফন্দি আঁটেন। ধানমন্ডি থানায় গিয়ে সুরমার বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের টাকা ও অর্থচুরির অভিযোগ জমা দেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহেল কাফি বলেন, ‘মামলার ভয়ে সুরমা লক্ষ্মী মেয়ের মতো বাসার কাজে মন দেবেন ভাবনা ছিল গৃহকর্ত্রীর। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ মামলা হিসেবে না নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়।’

তিনি জানান, তদন্তকালেই একদিন থানায় এসে হাজির উত্তাল মেঘনার বুকে জন্ম নেয়া আজন্ম বিদ্রোহী সুরমা। সে পুলিশের কাছে জানতে চায় তার নামে নাকি বাড়িওয়ালা মামলা করেছে! সে জানায়, চুরি ডাকাতি তার চরিত্রে আগেও ছিল না, এখনও নেই। যার বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের চুরির অভিযোগ থানায় জমা পড়েছে, সেই ব্যক্তি যখন থানায় এসে এমন হুংকার দেন, পুলিশকে তো তখন নড়েচড়ে বসে।

এডিসি আব্দুল্লাহেল কাফি বলেন, “দুই পক্ষকে থানায় ডাকা হয়। পুলিশের জেরার মুখে গৃহকর্ত্রী স্বীকার করেন সুরমা নির্দোষ। এমন তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধেই উল্টো মামলা হওয়ার মতো অবস্থা। এ যেন ‘পড়বি পড় মালির ঘাড়ে’র মতো অবস্থা। পুলিশের জেরায় গৃহকর্ত্রী স্বীকার করলেন সুরমা থাকা খাওয়া বাদে গত ৬-৭ বছর কাজের বিনিময়ে কোন বেতন নেননি।”

কবি নজরুল বলেছিলেন, ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’, পুলিশের চাপে নতি স্বীকার করে এবার গৃহকর্ত্রীকে সুরমার সব পাওনা কড়ায় গণ্ডায় পরিশোধ করতে হবে, উল্লেখ করেন এডিসি কাফি।

আব্দুল্লাহেল কাফি জানান, তারা মাসে দু’হাজার টাকার কিছু বেশি হিসাবে সাত বছরে সুরমার মোট বকেয়া বেতন নির্ধারণ করে দাড়ায় এক লাখ ৮২ হাজার টাকা। দু’দফায় সুরমার বকেয়া পুরো টাকা শোধ করে গৃহকর্ত্রী।

উল্লেখ্য, যাদের সঙ্গে বিদ্রোহ করে সাত বছর আগে ঘর ছেড়ে পালিয়ে ঢাকা এসেছিল সুরমা, সেই মা ও বাবাকে সুরমার কথায় খবর দেয় পুলিশ। পুলিশ নয়, সুরমার পক্ষে দেন-দরবার করতে থানায় উপস্থিত ছিলেন তার মা-বাবা!

সুরমার মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে পুলিশকে বলেন, ‘তার মেয়ে সেই যে বাড়ি ছাড়ল এরপরে একবারের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। প্রথম দিকে আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাইনি। পরে তার আশা ছেড়ে দেই।’

সুরমার মা বলেন, ‘অবশেষে পুলিশের ডাকে থানায় এসে ওকে আমরা পেয়েছি।’

ধানমন্ডি জোনের এডিসি আব্দুল্লাহেল কাফি জানান, সুরমার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একটা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে চেয়েছিল পুলিশ। আরও ১৮ হাজার টাকা উপহার হিসেবে দিতে চেয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সুরমা সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি। দ্রোহ যার শিরায় শিরায়, তাকে বোঝানোর সাধ্য কার?

জেইউ/এফআর/এমএস