বিশ্বমানবতা থমকে দাঁড়িয়েছিল সেদিন
আজ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিন জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, বাংলাদেশের স্থপতি, মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ও বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা নির্মমভাবে হত্যা করেন।
বিশ্ব ইতিহাসের নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন আরো প্রাণ হারিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের ও কর্নেল জামিল।
ঘাতক সেনাদের বুলেটে ওই দিন আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ রিন্টু খানসহ আরও অনেকে।
বর্বর ওই হত্যাকাণ্ডের দিন দেশে না থাকায় প্রাণে রক্ষা পান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। সে সময় স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানির কার্লসরুইয়ে সন্তানসহ অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা। শেখ রেহানাও ছিলেন বড় বোনের সঙ্গে।
আগস্ট মানেই জাতির দীর্ঘশ্বাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ওই হত্যাকান্ডের নির্মমতা পৃথিবীর যে কোনো হত্যাকাণ্ডকে হার মানায়। ঘটনার বর্ণনায় দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট খুনিও আঁতকে উঠবে। রাতের আঁধারে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডীল ৩২ নম্বর বাড়িতে পৈশাচিক পন্থায় হামলা চালায় দিকভ্রান্ত সেনাকর্মকর্তারা। বুলেটের আঘাতে রক্তগঙ্গা বয়ে যায় পুরো বাড়ি। ঝাঁঝরা হয়ে যায় দরজা, জানালা, বাড়িও দেয়াগুলোও। রক্তসাগরে যুবে ছিল লাশগুলো।
নিজের সৃষ্টি দেশে কোনো বাঙালি তার জীবনের হুমকি হতে পারে বলে বাড়তি নিরাপত্তার ধার ধারেনি বঙ্গবন্ধু। আর এ কারণেই রাষ্ট্রপতির বাসভবন ছেড়ে বসবাস করছেন তার প্রিয় ধানমন্ডীর ৩২ নম্বর বাড়িতে।
ওই দিন ওই বাড়িতেই ঘাতকের বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে পর্বতসম দেহ আর ইস্পাতসম মনোবল নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিল ‘তোরা কি চাস আমার কাছে? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?’
ঘাতকেরা অন্য কোথাও নিয়ে যায়নি। বঙ্গবন্ধুকে তার প্রিয় বাড়িতেই বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। ওই হত্যাকাণ্ডের বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশ যেন মেঘে ঢেকে যায়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ যেন ‘খুনের বাংলায়’ পরিণত হয়। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে খুনিদের দায়িত্ব দেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটিকে আইন হিসেবে অনুমোদন দেন।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি খুনিদের। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে জোর চেষ্টা চালায়।
২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি বিশেষ গতি পায়। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করা হয়। তবে সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের কয়েকজন এখনও পলাতক রয়েছে।
শোকের মাস আগস্ট ঘিরে সরকার এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নানা ৪০ দিনব্যাপি নানা কর্মসূচি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ আওয়ামী লীগ ও তার বিভিন্ন সহযোগী, ভাতৃপ্রতিমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে।
এএসএস/এআরএস