‘মেয়েকে দেখাতে পারিনি বঙ্গবন্ধুকে’
'শুক্রবার আমার এক বছরের মেয়েকে দেখতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বৃহস্পতিবার রাতে টেলিফোনে কথা বলার সময় মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেন। বঙ্গবন্ধু শিশুদের খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু আমার মেয়েকে আর শেষ দেখা দেখে যেতে পারেননি বঙ্গবন্ধু।’
বলছিলেন বঙ্গবন্ধুর চাচাতো ভাই শেখ কবির হোসেন। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বাড়িতে বসে কথা হয় বঙ্গবন্ধুর এই ভাইয়ের সঙ্গে।
কবির হোসেন সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পালন করছেন।
১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘প্রতি শুক্রবারই আমরা স্বজনরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে মিলিত হতাম। অনেকটাই গেট টুগেদারের মতো। ঘটনার আগের দিন রাতে বঙ্গবন্ধু টেলিফোনে আমার সঙ্গে কথা বলে পরিবারের খোঁজখবর নিলেন। শুক্রবার আমার ছোট মেয়েকে নিয়ে যেতে বললেন। রাতে ঘুমালাম।’
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ’১৫ আগস্ট সকালে ঘুম থেকে ওঠে বাংলামোটরে বাসার সামনে দেখি মানুষের জটলা। এর মধ্যে একটি ফোন আসে। ফোনের ওপাশ থেকে বলা হলো রেডিও ওপেন কর। রেডিও ওপেন করতেই মেজর ডালিমের কণ্ঠে শোনা গেল, শেখ মুজিব নিহত হয়েছেন। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। আমি তখন ভারসাম্য হারিয়ে ফেললাম। জ্ঞান ফেরার পর হেঁটে রওনা দিলাম ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধুর বাড়ির উদ্দেশ্যে।’
কবির হোসেন বলেন, ‘শুক্রাবাদ ব্রিজের কাছে যেতেই দেখি উল্টো পাশ দিয়ে বজলু আসছে। সে এসে হাত ধরে বলল, ওদিকে যাসনে। সেনারা তোকে মেরে ফেলবে। পরে বজলু আর আকরামের সঙ্গে বাংলামোটরের বাড়িতে এলাম। খানিক পরে হুমায়ুনের মোটরসাইকেলে করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে যাই।’
কবির হোসেন বলেন, ‘এর আগে সেনা অফিসার মাহবুবুর রহমানকে (সাবেক সেনাপ্রধান) পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধুর বাড়ির খবর নিতে। তিনি আমার ভাবির ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন। তিনিই বলেন, বঙ্গবন্ধুসহ সবাইকে হত্যা করা হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুর এই চাচাতো ভাই স্মৃতিচারণ করেন, ‘একবার বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছিলাম। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসাররা বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, স্যার, আপনি যেভাবে মানুষের মাঝে মিশে যান তাতে আমাদের নিরাপত্তা দিতে সমস্যা হয়। জবাবে বঙ্গবন্ধু বললেন, বাঙালি আমার কিছু করবে না। তোরা আকাম করস, মারলে তোদের মারবে। অথচ সেই বাঙালির হাতেই নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন সপরিবারে।’
এএসএস/এসআর/আইআই