টুঙ্গিপাড়ায় শোকের মাতম
পিতা হারানোর বেদনায় শোকে মুহ্যমান গোটা জাতি। বাঙালির আকাশ আজ শোকের মাতমে আচ্ছন্ন। আগস্টের কান্না চিরদিনের, যা জাতিসত্তার প্রশ্নে কখনই থামবার নয়। তবে আগস্টে টুঙ্গিপাড়ার কান্না যেন আরও বেদনাবিধুর। আপনজন হারানোর কান্না এখন টুঙ্গিপাড়ার আকাশে-বাতাসে। বহুদিনের এ কান্না যেন আজ আরও ভারি হয়েছে। কাঁদছে সবুজ-শ্যামলের বিশাল প্রান্তর। টুঙ্গিপাড়ার গাছের পাতারাও যেন স্বজনকে ফিরে না পাওয়ার বেদনায় নুয়ে পড়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। টুঙ্গিপাড়ার খোকা। বঙ্গবন্ধু উপাধি মিললেও টুঙ্গিপাড়ায় বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে তিনি খোকা নামেই পরিচিত ছিলেন। মুরুব্বিরা নাকি তার পরিণত বয়সেও খোকা বলে ডাকতেন। তার খোকা নাম আছে এখনও।
খোকা ঘুমিয়ে আছেন সবুজের প্রান্তরে, কোলাহলমুক্ত কাদা-মাটির ঘ্রাণ নিয়ে। আর মাতম বইছে চারদিকে। গোপালগঞ্জ থেকে ঘোনাপাড়া, ঘোনাপাড়া থেকে টুঙ্গিপাড়া। সর্বত্রই শোকের ছায়া। আগস্টের শুরু থেকেই এখানকার দোকানে দোকানে কালো পতাকা ওঠানো হয়েছে। টুঙ্গিপাড়ার প্রায় প্রতিটি দোকানেই উড়ছে শোকের প্রতীক এই কালো পতাকা। কালো কাপড়ে মোড়ানো শত শত তোরণ জানান দিচ্ছে নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাপ্রবাহ। জানান দিচ্ছে, তার মৃত্যু মানেই নিঃশেষ নয়। মৃত্যু দিয়েই তিনি আজ মৃত্যুঞ্জয়ী। আর শোককে শক্তিতে রূপ দিয়ে মুজিব চেতনাকে আকড়ে ধরছেন টুঙ্গিপাড়াবাসী।
১৫ আগস্ট সকালে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানেও অংশ নেয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এ উপলক্ষে শোকের আবহ বিরাজ করছে সমাধি প্রাঙ্গণে।
টুঙ্গিপাড়ায় সোমবার দুপুরে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে র্যা লি বের করছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা। ঢাকের বাদ্য থাকলেও র্যা লি থেকে করুণের সুরই মিলছিল। তাদের বুকে কালোব্যাচ লাগানো। কালোব্যাচ এখন টুঙ্গিপাড়ার সবার বুকেই।
টুঙ্গিপাড়ায় ছোট্ট একটি খাবার হোটেল। হোটেলের ঝাপের দুই পাশে দুটি কালো পতাকা লাগানো। হোটেলের মালিক মোস্তফা শেখ। তিনি বলেন, ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু। তাকে হারিয়ে আমরা সব হারিয়েছি। আগস্ট এলেই আমাদের আনন্দ চলে যায়। শৈশবে দেখেছি। তার মতো মানুষ মেলানো ভার। এমন মানুষকে কেউ মারতে পারে!’
টুঙ্গিপাড়া পৌর মেয়র শেখ আহম্মেদ হোসেন মির্জা। শোক দিবস পালনে পৌরসভার পক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মেয়র শেখ আহম্মেদ মির্জা বলেন, ‘যিনি না জন্মালে বাংলাদেশের সৃষ্টি হত না, তাকে স্মরণে তো আয়োজনের ঘাটতি রাখা যায় না। এই আয়োজন আবেগ থেকেই আসে। আজ গোটা টুঙ্গিপাড়ায় শোকের ছায়া বইছে। কারণ বঙ্গবন্ধু গোটা জাতির হলেও আমাদের একটু বেশিই আপন।’
এএসএস/এসএইচএস/আরআইপি